বছরজুড়ে দেশে দেশে বিক্ষোভ, জর্জরিত আন্তর্জাতিক অঙ্গন
বছরভর প্রতিবাদ-বিক্ষোভে উত্তাল ছিল পৃথিবীর অনেক ভূখণ্ড। বেশিরভাগ দেশের দাবি-দাওয়া ও চাহিদার ধরন প্রায় এক। কেউ চান ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানের অপসারণ, কেউ বা আবার দিন-রাত এক করে রাজপথে থাকছেন দেশে গণতন্ত্রের স্বার্থ রক্ষায়, বিক্ষোভের রঙে রাঙিয়েছেন রাজপথ। ২০১৯ সালজুড়ে এমনই কিছু বিক্ষোভের নেপথ্য কারণ ও সবশেষ খবর :
হংকং
বছরের সবচেয়ে আলোচিত বিক্ষোভ কোথায় হয়েছে, জানতে চাইলে এককথায় আসবে হংকংয়ের নাম। বিতর্কিত প্রত্যর্পণ বিলের প্রতিবাদে শুরু। যার জেরে অচল হয়ে যায় বিশ্বের অন্যতম নিরাপদ ও সুসজ্জিত বাণিজ্যিক নগরী। ঝাঁ চকচকে হংকংয়ের খোলনলচে পাল্টে দেয় দাবি-দাওয়ায় অটল বিক্ষোভকারীরা। বিলটি বাতিল হলেও এখন গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দাবিতে রাজপথ থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত উত্তপ্ত রয়েছে।
ইরাক
টাইগ্রিস-ইউফ্রেটিস নদীর পানি অশান্ত হয়েছে বহু আগেই। বহিরাগতদের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হওয়ার ইতিহাসও পুরোনো। বিক্ষোভ, আন্দোলন, গুলির শব্দ গা সওয়া ইরাকিদের। এবারে রাজপথে নেমেছেন দুর্নীতিবাজ সরকারের বিরুদ্ধে। প্রাণও গেছে অনেকের। তবু হাল না ছেড়ে অটল রয়েছেন প্রতিবাদের সিদ্ধান্তে।
কলম্বিয়া
বেতন বাড়ানোর দাবিতে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটিতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হয়। একটু থিতিয়ে গেলেও ধুঁকে ধুঁকে এখনো চলছে।
চেক রিপাবলিক
সেখানেও বিক্ষোভের কারণ একই। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চায় জনতা। থেমে থেমে চলছে প্রতিবাদ।
ব্রাজিল
একসময়ের উজ্জ্বল অর্থনীতির উদাহরণ, এখন রাজনীতির টানাপোড়েনের দেশ। বিক্ষোভ যেন সাধারণ ঘটনা। ব্রাজিলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোকে একনায়ক আখ্যা দিয়ে বেশ বড় আকারের বিক্ষোভ হয় বছর শেষে। যদিও কোনো ফল পাওয়া যায়নি এর থেকে।
ফ্রান্স
বছরের শুরু থেকেই সরকারের বিরুদ্ধে বেশ কয়েক দফা বিক্ষোভ হয় ফ্রান্সে। যা গড়ায় দেশজুড়ে যানবাহন ধর্মঘট, ইলেকট্রিসিটি কর্মীদের বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা পর্যন্ত। ফরাসি বিক্ষোভকারীদের একাংশ পরিচিত ইয়েলো ভেস্ট নামে।
লেবানন
আলোচিত প্রতিবাদগুলোর মধ্যে রয়েছে লেবাননের সাম্প্রতিক অবস্থা। গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের দিকে এগিয়েছে অনেক আগেই। বছর শেষেও যা শেষ হওয়ার কোনো আঁচ পাওয়া যায়নি। শিয়া দল, সরকারবিরোধী, প্রধানমন্ত্রীর সমর্থক বা বিরোধী প্রত্যেকে জড়িয়ে গেছেন একে অন্যের সঙ্গে।
চিলি
বছর শেষে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রদর্শনকে মাসব্যাপী বিক্ষোভে পরিণত করেন চিলিবাসী। পুলিশের প্যালেট গুলির জেরে আক্রান্ত হয় হাজারো মানুষের চোখ। প্রাণও গেছে অনেকের। কিন্তু সমাধান হয়নি এখনো।
এ ছাড়া সরকারের অমানবিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান ফিলিপাইনবাসী। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণে প্রতিবাদ জানান স্প্যানিশ ও অস্ট্রেলিয়ানরা। বছর শেষে সব বিক্ষোভ ছাপিয়ে যায় ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে ঢালাও প্রতিবাদ। যাকে ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের আসল রূপ বলে আখ্যা দিচ্ছেন অনেকে। আবার রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করে বিক্ষোভ প্রদর্শনকে মেনে নিতে নারাজ ব্যক্তিও আছেন। দেশে দেশে বিক্ষোভ প্রতিবাদ যতই হোক, তা পর্যবেক্ষণ করে একটা বিষয় স্পষ্ট, সরকার বা বিরোধী কোনো পক্ষ একচুলও ছাড় দিতে নারাজ। তাই নতুন বছরেও এর আঁচ থেকে যাবে বলেই আশঙ্কা করা যায়।