ফসির কথা শুনলে এত দিনে সাত-আট লাখ মানুষ মারা যেত : ট্রাম্প
হোয়াইট হাউসের প্রধান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিসের প্রধান অ্যান্থনি ফসির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বন্দ্ব দিন দিন আরো প্রকাশ্য হচ্ছে। এবার ফসির প্রতি সরাসরি অভিযোগ করে ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি যদি তাঁর (ফসি) কথা শুনতাম, তাহলে এখন যুক্তরাষ্ট্রে সাত থেকে আট লাখ মানুষের মৃত্যু হতো।’
বরাবরই স্পষ্ট বক্তা অ্যান্থনি ফসি। যুক্তরাষ্ট্রে করোনা সংক্রমণের বাড়াবাড়ির জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের দিকে আঙুল তুলতেও দ্বিধা করেননি। ট্রাম্পের উদাসীনতা ও খামখেয়ালিপনাকে বারবার দায়ী করেছেন। এ কারণে মার্কিন সরকারের বিরাগভাজনও হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে এবার হোয়াইট হাউসের প্রধান স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকেই ‘মূর্খ’ বলে সম্বোধন করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি এ খবর জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ বিশেষজ্ঞ দলের দায়িত্বে আছেন অ্যান্থনি ফসি। ভ্যাকসিন গবেষণার নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি দেশের কোভিড-১৯-সংক্রান্ত নির্দেশিকার তত্ত্বাবধানও করেন তিনি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি, করোনা নিয়ে মার্কিন বাসিন্দাদের বিভ্রান্ত করেছেন ফসি, সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।
ট্রাম্পের বক্তব্য, ‘ফসি আর এসব মূর্খের কথা শুনতে শুনতে মানুষ ক্লান্ত। এই লোকগুলো (করোনা নিয়ে) ভুল করেছে।’
কোভিড মোকাবিলায় সঠিক পথে যাচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র, ভুল পদক্ষেপ নিচ্ছে—সিনেট কমিটির বৈঠকে বারবার এ প্রসঙ্গই তুলেছিলেন অ্যান্থনি ফসি। তিনি বলেছিলেন, করোনা মোকাবিলায় মার্কিন সরকারই লকডাউনের বিধি মানছেন না। তাই সাধারণ জনতাও সামাজিক মেলামেশা চালিয়ে যাচ্ছে। সে কারণে সংক্রমণও পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে।
করোনা সংকটের মধ্যেই নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর জন্য জায়গায় জায়গায় গণসমাবেশও করছেন। নির্বাচনী প্রচারসভায় জমায়েত বাড়াতে সামাজিক দূরত্ববিধির কড়াকড়িতে ছাড় দেওয়াও হয়েছে। সম্প্রতি কোভিড-১৯ থেকে সেরে উঠে হাসপাতাল থেকে ফেরার পর ট্রাম্পের বেপরোয়া মনোভাব নিয়েও মুখ খুলেছিলেন ফসি। সব মিলিয়ে ফসি এখন মার্কিন প্রেসিডেন্টের চক্ষুশূল।
করোনার সংক্রমণ এবং মৃতের সংখ্যার হিসাবে বিশ্বের কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এখন করোনায় মৃতের সংখ্যা দুই লাখের বেশি। ট্রাম্পের ভাষ্য, ফসির কথা শুনে চললে মৃত্যু সাত থেকে আট লাখ ছাড়িয়ে যেত।
মার্কিন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ফসিকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন ট্রাম্প। এর আগেও ফসিকে হোয়াইট হাউস থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথাবার্তা চলছিল। হোয়াইট হাউসের প্রবীণ স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ফসি মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধেই আঙুল তুলছেন, যা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
মার্কিন সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান লেমার আলেক্সান্ডার বলেছেন, পাঁচ দশকের বেশি সময় হোয়াইট হাউসে রয়েছেন অ্যান্থনি ফসি। এখন পর্যন্ত ছয়জন প্রেসিডেন্টের প্রধান স্বাস্থ্য উপদেষ্টার দায়িত্ব সামলেছেন। মার্কিন নাগরিকদের কাছে ফসির কথার গুরুত্ব রয়েছে।
মার্কিন সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান আরো বলেন, ফসির কথা শুনে চললে এত দিনে যুক্তরাষ্ট্রে করোনা মহামারি অনেকটাই ঠেকানো যেত। স্কুল-কলেজে স্বাভাবিকভাবে যেতে পারত শিশুরা। করোনায় এত মৃত্যুও হতো না। মহামারি ঠেকাতে এত দিন পর্যন্ত ফসি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাতে কোনো ভুল নেই বলেই দাবি আলেক্সান্ডারের।