‘পৃথিবীর শেষ দিন পর্যন্ত’ চীনের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি মিয়ানমারের
চীনের পাশে ‘পৃথিবীর শেষ দিন পর্যন্ত’ থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি। আজ শনিবার সফররত চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অং সান সুচি। চীনের সঙ্গে একাধিক বড় ধরনের অবকাঠামোগত চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে মিয়ানমার। দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে গতকাল শুক্রবার মিয়ানমার পৌঁছেন চীনের প্রেসিডেন্ট। বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে দুই প্রতিবেশী চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে মিত্রতা অটুট রয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সব সময় মিয়ানমারের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে চীন। দীর্ঘ এ সময়ে মিয়ানমারে ক্ষমতার পালাবদল হলেও মিত্রতার সম্পর্কে এর প্রভাব পড়েনি। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সরকারের নিপীড়নের কারণে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন সুচি। বহির্বিশ্বের নিন্দার মুখেও মিয়ানমারের পাশে শক্ত অবস্থান নিয়েছে বেইজিং।
সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নকে জাতিসংঘের তদন্ত কর্মকর্তারা গণহত্যা বলে উল্লেখ করেছেন। ওই সেনা অভিযানের জেরে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় রোহিঙ্গারা।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার জানিয়েছে, মিয়ানমারে পৌঁছে গতকাল শুক্রবার নিজের সফরকে দুই প্রতিবেশীর মধ্যকার সম্পর্কের ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ বলে মন্তব্য করেন চীনা প্রেসিডেন্ট।
পরে গতকাল এক অনুষ্ঠানে সুচি বলেন, ‘বিনা বাক্য ব্যয়ে পৃথিবীর শেষ দিন পর্যন্ত প্রতিবেশী একটি দেশের পাশে দাঁড়াতে হয়।’
শি জিনপিং নয় বছর আগে চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে মিয়ানমার সফর করলেও, প্রেসিডেন্ট হিসেবে এটাই তাঁর প্রথম মিয়ানমার সফর। এদিকে চীনা প্রেসিডেন্টের সফর উপলক্ষে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদো সেজেছে উৎসবের সাজে। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে এ খবর জানিয়েছে।
তবে আনন্দ নেই মিয়ানমারের কাচিন প্রদেশে। শির সফর চীন সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য কাচিনের কয়েক হাজার গ্রামবাসীকে দুঃসহ কষ্টের কথা মনে করে দিয়েছে। বেইজিংয়ের অর্থে একটি পানিবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণ করতে কাচিনের বাসিন্দাদের নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত হতে হয়। বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালে বাঁধের কাজ বন্ধ হলেও, গ্রামবাসীর নিজ বসতভিটায় ফিরতে দেওয়া হচ্ছে না।
এদিকে শি জিনপিংয়ের সফরে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ নামের একটি মেগা প্রকল্পের কাজ পুনরায় শুরুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে, চীনের ইউনান প্রদেশ থেকে মিয়ানমারে সরাসরি যোগাযোগের জন্য রেলপথ তৈরি হবে। এই রেলপথ দিয়ে চীনের পণ্য দ্রুত রাখাইন বন্দরে পৌঁছাবে। রেলপথ তৈরির জন্য কাচিনের মাইইজোং বাঁধের নির্মাণকাজ আবার শুরু হওয়া জরুরি। চীনা প্রেসিডেন্টের সফরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
এ ছাড়া শি জিনপিংয়ের এবারের সফরে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে চীনের সমুদ্র বন্দর তৈরি নিয়ে চূড়ান্ত সমঝোতা হতে পারে। যদিও রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাখাইন প্রদেশে অস্থিরতা বিরাজ করছে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনী সন্ত্রাস দমনের নামে রাখাইনের রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে ২০১৭ সালে যে নিপীড়ন চালিয়েছে, জাতিসংঘ তাকে ‘জাতিগত নিধন’ বলেছে। কিন্তু চীনের কারণে জাতিসংঘ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। চীন নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হওয়ায়, শুধু চীনের আপত্তিতে সব প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়।
মিয়ানমার সেনাদের নিপীড়ন থেকে বাঁচতে অন্তত সাত লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। গত বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে রাজি করাতে চেষ্টা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল চীন। কিন্তু কার্যত তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা নিপীড়ন নিয়ে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে গাম্বিয়ার করা যুদ্ধাপরাধের মামলা চীনার প্রেসিডেন্টের সফরে আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।