দিল্লিতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই কমিশনার বদল
ভারতের দিল্লিতে চলমান দাঙ্গা-সংঘাতের মধ্যেই পুলিশ কমিশনার পদে বদল এনেছে দেশটির সরকার। অমূল্য পাটনায়েকের জায়গায় এস এন শ্রীবাস্তবকে নতুন কমিশনার ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১ মার্চ থেকে তিনি দায়িত্ব পালন করবেন।
এ পর্যন্ত দিল্লিতে দাঙ্গায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ জনে, আর আহত অন্তত হয়েছেন অর্ধসহস্রাধিক। এতে জড়িত সন্দেহে চার শতাধিক ব্যক্তিকে আটকও করা হয়েছে। বিবিসি বলছে, বাড়িঘর, দোকানপাট আর মসজিদে এখনো আগুন জ্বলছে।
সহিংসতার জন্য উসকানিদাতা বিজেপির কপিল মিশ্রের পর আলোচনায় এসেছে আম আদমি পার্টির কাউন্সিলর তাহির হুসাইনের নাম। সহিংসতায় জড়িত অভিযোগে তাহিরকে পার্টি থেকে বহিষ্কারও করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিজেপি সরকার দিল্লিতে পরিকল্পিতভাবে সহিংসতা সৃষ্টি করেছে।
এদিকে মুসলিম নিহতের ঘটনাকে হত্যাযজ্ঞ হিসেবে মন্তব্য করে নিন্দা জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
চার দিন টানা সহিংসতার পর এখনো আরো সংঘাতের শঙ্কায় থমথমে ভারতের দিল্লি। দিল্লির মুসলিম অধ্যুষিত জাফরাবাদ মেট্রো স্টেশনসংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকাসহ হজপুরী, জহুপুরী, শিববিহারী, মৌজপুর, ভজনাপুরে শুধু হিংসা আর ধ্বংসের চিহ্ন। উন্মত্ত বাহিনী পুড়িয়ে দিয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। আজও কয়েকটি লাশ নর্দমা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
ভারতে চলমান অর্থনৈতিক সংকট ও বেকারত্বের মধ্যে দাঙ্গার কারণ নিয়ে কথা বলেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী করুনা নন্দী। তিনি বলেন, “এই দাঙ্গার জন্য ক্ষমতাসীন দলীয় আইনপ্রণেতারা দায়ী। ‘শালাদের গুলি করে হত্যা করো’, এমন মন্তব্য উন্মুক্ত জনসভায় দিয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। এ ছাড়া দাঙ্গার ঘটনায় মামলা পর্যন্ত করছে না পুলিশ। এর অর্থ দাঁড়ায়, হত্যাকাণ্ডের কোনো জবাবদিহি নেই। দাঙ্গাকারীরাও স্লোগান দিয়ে হামলা করছে। তাই দাঙ্গার বিষয়ে অস্পষ্টতার কিছু নেই।’
সহিংসতার ঘটনায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দায় কতটুকু, এমন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক মিনাক্ষী গাঙ্গুলী। তিনি বলেন, ‘দেখুন, বিজেপি হিন্দুত্ববাদী দল। নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনী করে তারা মুসলিমদের আইনি সংকটের মধ্যে ফেলে দেয়। এর পর থেকে দিল্লিতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ চলছিলো। হঠাৎ করে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি নেতারা উসকানিমূলক বক্তব্য দিতে থাকেন।’
দিল্লির বিধানসভার নির্বাচনে বিজেপির পরাজয়ের সঙ্গে এই সহিংসতার সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেছেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্রুতি কাপিলা। তিনি বলেন, ‘হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার জন্য ঐতিহাসিকভাবেই বিজেপির উসকানি রয়েছে। ১৯৮৪ সালের শিখ দাঙ্গা বা ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গায় বিজেপি নাম বারবার আসে। এ ছাড়া উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভেঙে রাম মন্দির নির্মাণের কাজটিও বিজেপি করেছে। কাশ্মীরে মুসলিমদের মতামত উপেক্ষা করে সংবিধান পরিবর্তনও করেছে বিজেপি। তাই দিল্লির চলমান দাঙ্গাকে শুধু সংঘর্ষ হিসেবে দেখার সুযোগ নেই, এটা পরিকল্পিত সহিংসতা। এ ছাড়া দিল্লি পুলিশের ভূমিকাও উদ্বেগজনক।’
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, থমথমে পরিস্থিতিতে আগুনে পোড়া বাড়িঘর ছেড়ে প্রাণ বাঁচাতে লোটা-কম্বল নিয়ে পালাচ্ছেন দিল্লির মুসলমানরা।