চীনে রহস্যজনক ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব, অনুসন্ধানে নেমেছে কর্তৃপক্ষ
চীনের মধ্যাঞ্চলীয় ইউহান শহরে রহস্যজনক নিউমোনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ভাইরাসজনিত এই রোগে এখন পর্যন্ত অনেক মানুষ আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধানে এরই মধ্যে তৎপরতা শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
এখন পর্যন্ত রহস্যজনক এই ভাইরাসে ৪৪ জন আক্রান্ত হওয়ার কথা নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে গতকাল শুক্রবার কর্তৃপক্ষ জানায়। আক্রান্তদের মধ্যে ১১ জনের অবস্থা গুরুতর।
ভাইরাল এই সংক্রমণের ইউহান থেকে আসা পর্যটকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে শুরু করেছে সিঙ্গাপুর ও হংকং।
এই ভাইরাসের সঙ্গে হয়তো সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম-সার্স বা গুরুতর শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে এরই মধ্যে অনলাইনে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রাণঘাতী সার্স রোগটি ফ্লু’র মতোই। চীন থেকে ছড়িয়ে পড়ার পর সার্স ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২০০২-০৩ সালে বিশ্বে সাতশর বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল।
অত্যন্ত সংক্রামক সার্স রোগের সঙ্গে চীনের নতুন রহস্যজনক ভাইরাসের মিল থাকতে পারে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শঙ্কা প্রকাশ করছেন নেটিজেনরা।
এদিকে ইউহানের পুলিশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘যাচাই ছাড়া ভুল বা মিথ্যা তথ্য ইন্টারনেটে প্রকাশ বা ছড়ানোর অভিযোগে’ এ পর্যন্ত আটজনকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
ইউহানের স্বাস্থ্য বিভাগ গতকাল শুক্রবার জানিয়েছে, নতুন এই ভাইরাল সংক্রমণের কারণ খোঁজার চেষ্টা চলছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রোগটি সংক্রমণের সঙ্গে ইনফ্লুয়েঞ্জা, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা কিংবা শ্বাসকষ্ট সংক্রান্ত অন্যান্য রোগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে বিবৃতিতে সার্স রোগের কথা উল্লেখ করা হয়নি।
এ ছাড়া মানুষ থেকে মানুষে এই রোগ সংক্রমণের কোনো উপসর্গ পাওয়া যায়নি বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। জানা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই শহরের একটি সামুদ্রিক খাবারের বাজারে কাজ করতেন। যার জেরে ওই এলাকায় পরিচ্ছনতা অভিযান চালিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সংক্রমণ সম্পর্কে সংস্থাটি সচেতন রয়েছে। চীন সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে যোগাযোগ রাকা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে ডব্লিউএইচও।
সংস্থাটির মুখপাত্র বলেন, ‘ভাইরাল নিউমোনিয়া হওয়ার অনেক সম্ভাব্য উপসর্গ রয়েছে। এই উপসর্গগুলো সার্স ভাইরাসের তুলনায় নিউমোনিয়ার ভাইরাসেই বেশি দেখা যায়। ডব্লিউএইচও বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্য হাতে আসার সঙ্গে সঙ্গে জানানো হবে।’
পুরোনো মহামারির কারণেই বেশি আতঙ্ক
বিবিসির স্বাস্থ্য বিষয়ক সংবাদদাতা ফিলিপা রক্সবি বলেন, ১৮ বছর আগে যাঁরা সার্সের মহামারি দেখেছেন, নতুন এই ভাইরাল সংক্রমণ তাঁদের সেই স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
২০০২-০৩ সালে চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি প্রদেশে সার্সে আক্রান্তের সংখ্যা কমিয়ে দেখানোর কারণে দেশটির কড়া সমালোচনা করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
ওই মহামারিতে ২৬টি দেশের আট হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল। শুধু চীনেই প্রাণ হারিয়েছিলেন ৩৪৯ জন। আর হংকংয়ে মারা গিয়েছিলেন ২৯৯ জন।
বিশ্বব্যাপী ওই মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পেছনে বিদেশি পর্যটকরা দায়ী ছিলেন বলে ধারণা করা হয়। কারণ দ্রুত চিকিৎসা না নিলে সার্স ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
ওই মহামারিজনিত সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ হওয়ার কারণে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অপসারণ করেছিল চীন। ২০০৪ সালের মে মাস থেকে চীন সার্স মুক্ত রয়েছে।