ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে তেহরানে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ভিডিও প্রকাশ!
ইরানের রাজধানী তেহরানে ইউক্রেনের একটি যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। ওই ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, তেহরানের আকাশে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র একটি বস্তুতে আঘাত হেনেছে। ওই ঘটনার সময়কাল এবং ইউক্রেনের বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার সময়কাল একই।
এদিকে, ভিডিও ফুটেজের বিষয়টি এমন সময়ে সামনে এলো, যখন গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে কানাডা ও যুক্তরাজ্য দাবি করছে, একটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইউক্রেনের বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে।
সিএনএন জানিয়েছে, ইউক্রেন এয়ারলাইনসের বিমানটি ইরান ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ভূপাতিত করেছে—এমন গোয়েন্দা তথ্য ‘পঞ্চ নয়ন’ বা ‘ফাইভ আইস’ জোটকে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ‘ফাইভ আইস’ জোটভুক্ত দেশগুলো হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।
বিমান চলাচলের খবরাখবর রাখা ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইটগুলোর তথ্য অনুযায়ী, তেহরানের ইমাম খোমেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় গত বুধবার ভোর ৬টা ১২ মিনিটে ইউক্রেন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের ফ্লাইট-৭৫২ উড্ডয়ন করে। এর প্রায় আট মিনিট পর বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। ওই দুর্ঘটনায় বিমানের ১৭৬ আরোহীর সবাই নিহত হন।
ইরাকের রাজধানী বাগদাদে সফররত ইরানের অন্যতম শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা কাসেম সোলেইমানিসহ আটজন গত ৩ জানুয়ারি একটি বিমানবন্দরের কাছে মার্কিন রকেট হামলায় নিহত হন। এর পর থেকে ইরান-যুক্তরাষ্ট্রসহ মধ্যপ্রাচ্যে মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এমন পরিস্থিতিতে বিধ্বস্ত বিমান থেকে উদ্ধার করা ব্ল্যাকবক্স বিমানটির নির্মাণ সংস্থা বোয়িং কর্তৃপক্ষ বা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করবে না বলে জানিয়েছিল ইরানের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। আর এতেই বিভিন্ন মহলে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।
তবে এরপর ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুর্ঘটনার তদন্তে অংশ নিতে বোয়িং কর্তৃপক্ষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এদিকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো গতকাল বৃহস্পতিবার জানান, তাঁর কাছে একাধিক গোয়েন্দা সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য ইঙ্গিত করছে, ভূমি থেকে বাতাসে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিমানটি ভূপাতিত হয়েছে। তবে তা অনিচ্ছাকৃতও হতে পারে বলে জানান ট্রুডো।
ট্রুডো বলেন, ‘একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের প্রয়োজন। কানাডার জনগণের মনে প্রশ্ন জেগেছে এবং তারা এসব প্রশ্নের জবাব প্রাপ্য।’
তবে ট্রুডো বলেন, এখনই কারো ওপর দোষ চাপানো কিংবা কোনো উপসংহার টানার সময় আসেনি। এ ছাড়া গোয়েন্দা সূত্রের তথ্য-প্রমাণের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানান ট্রুডো।
ট্রুডোর দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও। তবে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিমান ভূপাতিত হওয়ার বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছে ইরান।
সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজ মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, দুটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পর একটি বিস্ফোরণের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া সংবাদমাধ্যম নিউজউইক মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের একজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে, ইউক্রেনের বিমানটি রাশিয়া নির্মিত ‘টর’ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ভূপাতিত হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে তাঁর ‘সন্দেহ’ প্রকাশ করেন।
তেহরানে বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে ট্রাম্প কী মনে করছেন—জানতে চাইলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার মনে কিছু বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। যা হয়েছে, তা খুবই মর্মান্তিক। তবে কেউ হয়তো কোনো ভুল করে থাকতে পারে।’