করোনা ধস নামিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও এশিয়ার শেয়ারবাজারে
চীনে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন আরো পাঁচ শতাধিক মানুষ। আজ মঙ্গলবার চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানায়, করোনাভাইরাসে এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬৬৩ জনে। আক্রান্ত সর্বমোট ৭৭ হাজার ৬৭৮ জন। চীনে আক্রান্ত ও মৃতের হার কমে এলেও করোনাভাইরাস ভয়াবহ রূপ নিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, জাপান ও ইতালিতে। ভাইরাসের বিস্তার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সব দেশকে আরো বেশি প্রস্তুতি নিয়ে রাখার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
বিশ্বায়নের এ সময়ে একটি ব্যাধি যে বিশ্ব অর্থনীতিসহ বাজার ব্যবস্থাকে কতটা নড়বড়ে করে দিতে পারে, তার জ্বলন্ত উদাহরণ করোনাগোত্রীয় ভাইরাসজনিত কোভিড-নাইনটিন রোগ। প্রাণহানি ও দ্রুত সংক্রমণের আতঙ্কে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ থাকায় বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে মারাত্মক ছোঁয়াচে এই ভাইরাস। করোনার কারণে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার শেয়ারবাজারে ব্যাপক ধস নেমেছে। প্রতিনিয়তই কমছে শেয়ারের সূচক। দুশ্চিন্তায় মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর দেড় মাস ধরে তালাবদ্ধ। মৃত্যু ও সংক্রমণ আগের তুলনায় কমে আসার কথা ভেবে আজ মঙ্গলবার থেকে ওই প্রদেশের কড়াকড়ি কিছুটা কম বলা হচ্ছিল। কিন্তু সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে প্রশাসন।
ইউরোপে ক্রমেই ছড়াচ্ছে করোনাত্রাস। প্রতিদিনই কেউ না কেউ মারা পড়ছেন। এ অবস্থায় আজ মঙ্গলবার বাতিল করা হয়েছে ভেনিস উৎসবের শেষ দিনের অনুষ্ঠান। চীনের ধাঁচেই সংক্রমণ ঠেকাতে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে একের পর এক শহর। দক্ষিণ কোরিয়া ও ইরানে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। দ্রুত বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা বলা হলেও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সামরিক মহড়া বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
এ অবস্থায় রোগটিকে এখনো মহামারি বলছে না বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে ভাইরাসের বিস্তার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সব দেশকে আরো বেশি প্রস্তুতি নিয়ে রাখার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘আমরা মনে করি, সব দেশেই এই ভাইরাস প্রতিরোধের প্রস্তুতি রাখা উচিত। (আমরা) যদি আগেভাগে এই পদক্ষেপ না নিই, তাহলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে। কেননা অনেক ক্ষেত্রে এটা নিয়ন্ত্রণহীন বলেই ধরা পড়ছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ক্ষতির মুখে ফেলছে।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস বলেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, করোনাভাইরাস ব্যাপক আকারে সারা বিশ্বে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।’
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই অবস্থানের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে মার্কিন গবেষকরা বলছেন, আক্ষরিক ব্যাখ্যা দিয়ে রোগটিকে মহামারি না বললেও পরিস্থিতির ভয়াবহতায় তা বলা যেতে পারে।