করোনায় সেবাদানের ফাঁকে একসঙ্গে প্রার্থনায় ইহুদি ও মুসলিম সহকর্মী
সবেমাত্র শ্বাসকষ্টের এক রোগীকে জরুরি চিকিৎসাসেবা দিয়ে এলেন আব্রাহাম মিন্তজ ও জোহার আবু জামা। এর আগে ৭৭ বছর বয়সী এক বৃদ্ধকে সেবা দিয়ে এসেছেন তাঁরা। দুজনই কাজ করেন ইসরায়েলের জরুরি চিকিৎসা, দুর্যোগ, ব্লাড ব্যাংক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান মেগান ডেভিড অ্যাডমে (এমডিএ)।
মিন্তজ একজন ধর্মপ্রাণ ইহুদি আর আবু জামা একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম। ঘড়ির কাঁটা যখন সন্ধ্যা (দিনের আলো আছে তখনো) ৬টার দিকে মুখ করে রয়েছে, মিন্তজ আর আবু জামা বুঝতে পারলেন, এটিই বোধ হয় দিনের শিফটে তাঁদের একমাত্র বিরতির সময়। এরপর একে একে আরো ফোন আসতে থাকবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ, এখন করোনাভাইরাসের সময়। তাই প্রার্থনার জন্য তৈরি হলেন তাঁরা। কাঁধে কালো রঙের শাল নিয়ে জেরুজালেমের দিকে মুখ করে প্রার্থনায় মগ্ন হলেন মিন্তজ। আর মক্কার দিকে জায়নামাজ রেখে নামাজে মগ্ন হলেন আবু জামা।
রুটিন করে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার কাজে নেমে পড়েন এ দুই জরুরি সেবাদানকারী। বিরতিতে একসঙ্গে প্রার্থনা করা তাঁদের কাছে নতুন কিছু নয়।
এরই মধ্যে মিন্তজ ও আবু জামার একসঙ্গে প্রার্থনা করার একটি ছবি তোলেন তাঁদেরই এক সহকর্মী। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করার পরই সেটি লুফে নেয় নেটবাসী। ছবিটি সাড়া ফেলে আন্তর্জাতিক মাধ্যমেও। সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে মিন্তজ ও আবু জামার বিষয়টি।
এক ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী ছবিটি নিয়ে মন্তব্য করেন, ‘আমি উদ্ধারকাজে নিয়োজিতদের জন্য গর্ববোধ করি। তাঁরা কে কোন সম্প্রদায়ের, এটি কোনো বিষয় নয়।’
এক টুইটার ব্যবহারকারী ছবিটি নিয়ে লেখেন, ‘এক লড়াই, এক জয়। আসুন ঐক্যবদ্ধ হই।’
৪২ বছর বয়সী মিন্তজ বলেন, ‘এ সহজ বিষয়টি শক্তশালী হয়ে ধরা পড়েছে। আমি বিশ্বাস করি, জোহার ও আমিসহ সারা বিশ্ব বুঝতে পারছে যে আমাদের প্রার্থনা করতে হবে। শুধু এটিই বাকি রয়েছে।’
অন্যদিকে ৩৯ বছর বয়সী জোহার আবু জামা বলেন, ‘বিশ্বাসের দিক থেকে আমরা একই জিনিসে বিশ্বাস করি এবং আমাদের কিছু মিল রয়েছে।’
আবু জামা আরো বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, তিনি (মিন্তজ) এমন একজন ব্যক্তি, যিনি সম্মান দিতে ও নিতে জানেন। আর এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’
জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এমডিএর মুখপাত্র জাকি হেলারের মতে, এখন কিছুদিন এক লাখেরও বেশি ফোনে সাড়া দিতে হয় তাঁদের। যেটি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ১০ গুণ বেশি।
বর্তমানে স্বাভাবিক সেবাদান ছাড়াও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, করোনাভাইরাসের টেস্টে সহায়তা করা, রক্ত সংগ্রহ করাসহ আরো বিভিন্ন কাজে দায়বদ্ধ হয়ে পড়েছে এমডিএ টিম।
এমডিএর মহাপরিচালক এলি বিন গর্ব করে জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে দুই হাজার ৫০০ জন কর্মী ও ২৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন।