করোনার পর এবার বিউবনিক প্লেগের শঙ্কায় চীন
মহামারি করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। এর থেকে বাঁচার কোনো ওষুধ এখনো খুঁজে পাননি বিজ্ঞানীরা। গত বছরের শেষ দিকে চীন থেকে এ ভাইরাসের উৎপত্তি হয় বলে এখন পর্যন্ত বিশ্ব মহলের বিশ্বাস। এবার সেই চীন থেকেই নতুন করে প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উত্তর চীনের মঙ্গোলিয়া অঞ্চলে গতকাল রোববার বিউবনিক প্লেগে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। এর আগে দক্ষিণ মঙ্গোলিয়ায়ও দুজনের শরীরে বিউবনিক প্লেগের জীবাণু পাওয়া গিয়েছিল। এ ঘটনার জেরে গতকাল রোববার ওই অঞ্চলে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে চীন। সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে ও টাইমস অব ইন্ডিয়া এ খবর জানিয়েছে।
গত শনিবার উত্তর চীনের মঙ্গোলিয়ার একটি হাসপাতালে অজানা রোগ নিয়ে ভর্তি হন এক রোগী। শনিবার সন্ধ্যায় চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন, ওই রোগী বিউবনিক প্লেগে আক্রান্ত হয়েছেন। বিউবনিক প্লেগ একটি সংক্রমক অসুখ। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে। বিউবনিক প্লেগ বোঝার পরেই চিকিৎসকরা স্থানীয় প্রশাসনকে খবর দেন। গতকাল রোববার তারই জেরে প্রশাসন তৃতীয় স্তরের উচ্চমাত্রার জরুরি অবস্থা জারি করে। ২০২০ সালের শেষ পর্যন্ত এ সতর্কতা জারি থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে চীনের সরকারি সংবাদ সংস্থার দাবি, গত ১ জুলাই দক্ষিণ মঙ্গোলিয়ায়ও দুজনের শরীরে বিউবনিক প্লেগের জীবাণু পাওয়া গিয়েছিল। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, বর্তমানে ওই শহরে মহামারির আকার ধারণ করার আশঙ্কা রয়েছে। তাই মানুষকে সতর্ক হতে হবে। অসুস্থ বোধ করলেই হাসপাতালে যেতে হবে।
ল্যাব টেস্ট রেজাল্টে এরই মধ্যে ওই দুজনের প্লেগের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। একজনের বয়স ২৭ বছর এবং অন্যজন তাঁরই ভাই, যার বয়স ১৭ বছর। দুজনকে দুটি আলাদা হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা চালানো হচ্ছে।
জানা গেছে, দুই ভাই ম্যারমোটের মাংস খেয়েছিলেন। ম্যারমোট হলো এক ধরনের পাহাড়ি মূষিক। মঙ্গোলিয়া অঞ্চলে অনেকেই এর মাংস খেয়ে থাকেন। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বন্য ইঁদুর এবং ইঁদুরজাতীয় প্রাণীর শরীরে এক ধরনের পোকা জন্মায়। সেই পোকার মাধ্যমেই বিউবনিক প্লেগের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত হয়। দ্রুত এই ব্যাকটেরিয়া একজনের শরীর থেকে অন্যের শরীরে ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে বলে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন বলছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা না হলে এই রোগ থেকে মৃত্যু হতে পারে।
এদিকে, আক্রান্ত দুজনের সংস্পর্শে এসেছেন এমন ১৪৬ জনকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সাধারণ মানুষকে ইঁদুরের মাংস খেতে নিষেধ করা হয়েছে।
বিউবনিক প্লেগ হলো একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ, যা মাছি থেকে ছড়ায় বলে জানা যায়। ঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে খুব কম সময়ের মধ্যে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে বলে জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
এদিকে, বিউবনিক প্লেগ ছাড়াও আরো এক অসুখ নিয়ে চিন্তিত চীন। শূকরের শরীর থেকে একটি নতুন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। নতুন এই ভাইরাস থেকেও মহামারি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। সম্প্রতি চীনের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নতুন এ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসটির সন্ধান পেয়েছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, জেনোটাইপ চারের এ ভাইরাস মানুষের শরীরে সহজেই প্রবেশ করতে পারে। শরীরের কোষের সঙ্গে আবদ্ধ হয়ে ভাইরাসটি রোগ ছড়ায়। দেশের বিভিন্ন শূকরের খামার থেকে এই রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চীনের উহান শহর থেকে প্রথম করোনা ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল। পরে যা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। আপাতত করোনার প্রকোপ কিছুটা কমলেও দ্বিতীয় দফায় করোনা ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছে চীনা প্রশাসন। তার মধ্যেই নতুন দুই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটায় আশঙ্কায় চীন। আশঙ্কায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। করোনায় গোটা বিশ্বের অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কার্যত ধসে পড়েছে। নতুন করে কোনো মহামারির প্রাদুর্ভাব ঘটলে বিশ্বের চেহারা ভয়াবহ হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।