করোনার টিকা নিয়ে শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে বিতর্কে জড়ালেন ট্রাম্প
নভেল করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় মাস্ক ও ভ্যাকসিন নিয়ে প্রকাশ্যে বিতর্কে জড়িয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল পাবলিক হেলথ ইনস্টিটিউটের অধীন রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) পরিচালক ড. রবার্ট রেডফিল্ড ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে গতকাল বুধবার ড. রেডফিল্ড বলেন, কোভিড-১৯ থেকে রক্ষা পেতে ভ্যাকসিনের চেয়ে মাস্ক বেশি নিশ্চয়তা দেয়। অন্যদিকে ট্রাম্প বলছেন, ভুল বকছেন সিডিসি পরিচালক।
সাধারণভাবে মার্কিন জনগণের কোভিড-১৯ টিকা পেতে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন সিডিসি পরিচালক রবার্ট রেডফিল্ড। সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ইউএনবি এ খবর জানিয়েছে।
সিনেটের এক শুনানিতে রেডফিল্ড জানান, তিনি মনে করেন যে প্রাথমিকভাবে চলতি বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে টিকা পাওয়া যাবে। তবে সরবরাহ হবে অত্যন্ত সীমিত এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তা দিতে হবে।
সাধারণ মার্কিনিরা টিকা পাবে ২০২১ সালে
ড. রেডফিল্ড বলেন, ‘যদি আপনারা আমাকে প্রশ্ন করেন যে এটি (ভ্যাকসিন) কখন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের জন্য সাধারণভাবে পাওয়া যাবে, যাতে আমাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে আমরা টিকার সুবিধা নেওয়া শুরু করতে পারি, সে বিষয়ে আমি মনে করি আমরা সম্ভবত ২০২১ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসের (জুনের) শেষ দিকে, তৃতীয় ত্রৈমাসের (সেপ্টেম্বর) দিকে তাকিয়ে আছি।’
রেডফিল্ড মনে করেন, কোভিড-১৯ রোগের জন্য একটি টিকা বাজারে এলেও পর্যাপ্ত মানুষের জন্য রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা সৃষ্টি করতে এটি ছয় থেকে নয় মাস সময় নেবে।
তাই বর্তমানে মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রশমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যেমন, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক ব্যবহার করা এবং ভিড় এড়িয়ে চলা। মাস্ক পরা হয়তো কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে টিকার চেয়ে ভালো সুরক্ষা দেবে বলেও জানান রেডফিল্ড।
ড. রেডফিল্ড বলেন, ‘আমি এতদূর বলতে পারি যে এই মাস্ক আমাকে কোভিড-১৯ থেকে রক্ষা করতে আমার টিকা নেওয়ার চেয়ে বেশি নিশ্চয়তাপূর্ণ। কারণ, টিকার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হয়তো ৭০ শতাংশ হতে পারে। যদি আমি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা না পাই, তাহলে টিকা আমাকে রক্ষা করবে না। রক্ষা করবে এই মাস্ক।’
ড. রেডফিল্ড জানান, মহামারি কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য যে পর্যায়ে মাস্ক ব্যবহার করা দরকার, তা এখনো যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মাঝে দেখা যায়নি।
ড. রবার্ট রেডফিল্ড, বলেন, ‘আমাদের কাছে স্পষ্ট বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণ রয়েছে যে আমাদের রক্ষায় মাস্ক সবচেয়ে কার্যকর। আমি বলব, মাস্ক কোভিড-১৯ থেকে রক্ষা পেতে আমাদের অধিক নিশ্চয়তা দেবে। এমনকি ভ্যাকসিন নিলেও এটার কার্যকারিতাই অধিক। এটা আমি সব মার্কিনিকেই বলছি, বিশেষ করে ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের, নিজ দায়িত্বে আপনারা মাস্ক ব্যবহার করবেন।’
অন্যদিকে ড. রেডফিল্ডের বক্তব্যের বিরোধিতা করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘মাস্কেও সমস্যা রয়েছে। মাস্ক অনেকটা ভদ্রভাবে ও সতর্কভাবে ব্যবহার করতে হয়। আমি দেখেছি, রেস্তোরাঁয় অনেকেই মাস্ক সরিয়ে নিয়ে বসছেন। এমনকি হাতের আঙুল দিয়ে মাস্ক ছুঁয়ে খাবারের থালা ভোক্তার সামনে রাখা হচ্ছে। আমি বলব, ভ্যাকসিনই বেশি কার্যকর।’
সিডিসি পরিচালকের আগামী বছরের গ্রীষ্মে বা বসন্তে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে মন্তব্য প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি বলব, তিনি ভুল করেছেন। এটা ভুল তথ্য। আমি তাঁকে ফোন করেছিলাম, আমাকে তিনি তেমনটা বলেননি। আমার মনে হচ্ছে, তাঁর বার্তায় বিভ্রান্তি রয়েছে। এটা হয়তো ভুলবশত হয়েছে।’
করোনার ভ্যাকসিন যুক্তরাষ্ট্রে কবে পাওয়া যাবে, তাও জানান ট্রাম্প।
‘আমরা প্রস্তুত হচ্ছি। অক্টোবরে ভ্যাকসিন পাওয়ার ঘোষণা করতে পারব,’ বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
কংগ্রেসে রেডফিল্ডের মন্তব্য প্রসঙ্গে ট্রাম্প আরো বলেন, ‘তিনি হয়তো তাঁকে করা প্রশ্ন বুঝতে ভুল করেছেন। মাস্ক ব্যবহার প্রসঙ্গে যদি বলি, আশা করছি মাস্কের চেয়ে ভ্যাকসিন আরো বহুগুণ কাজে দেবে।’