করোনার কাছে ‘অজেয়’ নয় অল্প বয়সীরাও, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হুঁশিয়ারি
করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে তরুণরাও ‘অজেয়’ নয় বলে উল্লেখ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটির প্রধান টেড্রস আধানম জানিয়েছেন, যদিও বয়স্ক ব্যক্তিরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ, তারপরও তরুণরা ঝুঁকিমুক্ত নয়। অনেক দেশেরই তরুণরা করোনায় আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। জেনেভায় আয়োজিত এক অনলাইন নিউজ কনফারেন্সে এ কথা বলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান। সংবাদমাধ্যম বিবিসি আজ শনিবার এ খবর জানিয়েছে।
টেড্রস আধানম বলেন, ‘তরুণদের জন্য আমার একটি বার্তা রয়েছে, আপনারা অপরাজেয় নন। এই ভাইরাস আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারে। এমনকি আপনাকে মেরেও ফেলতে পারে।’
এদিকে, চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আসায় স্বাগতম জানান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান। তিনি আরো জানান, এটি বিশ্বের অন্যান্য দেশকেও আশা দেখায় যে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
গবেষণায় দেখা যায়, সব বয়সীই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে, তবে তা বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
ইতালিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের গড় বয়স সাড়ে ৭৮ বছর। চীনে ৫০ বছরের নিচে মাত্র ১ শতাংশ মানুষ মারা গেছেন এ ভাইরাসে।
এদিকে করোনা ঠেকাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে এখন সামাজিক দূরত্বের পাশাপাশি শারীরিক দূরত্বের কথাও বলা হচ্ছে।
এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৪৮৫ জনে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৭৭ হাজার ৫০০ জন। এ ছাড়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮৯ হাজার ৭১১ জন। বার্তা সংস্থা বিএনও নিউজ এ খবর জানিয়েছে।
এদিকে বিশ্বের ১৮৫টি দেশে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। চীনে নানা ধরনের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পর ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও বিশ্বে তা ভয়াবহ আকার নিয়েছে। বিশেষ করে, ইতালি রীতিমতো যুদ্ধ করছে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে। দেশটিতে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একদিনেই ৬২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৩২ জনে। মৃতের সংখ্যায় গতকালই চীনকে ছাড়িয়ে গেছে ইতালি। এ ছাড়া দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৪৭ হাজার ২১ জনে পৌঁছেছে।
শুক্রবার ইতালির রাজধানী রোমে জীবাণুনাশক ছড়াতে দেখা গেছে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের। এ সময় জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা হয় প্রতিটি ভবন, ভবনের দরজার হাতল, সিঁড়ি, লিফট ও এলিভেটরের বাটন ও ডোর বেল।
ইউরোপের মধ্যে ইতালির পরই করোনাভাইরাসে ধুঁকছে স্পেন। দেশটিতে নতুন করে ২৬০ জনের মৃত্যু হওয়ায় মৃতের সংখ্যা এক হাজার ৯৩ জনে পৌঁছেছে। এ ছাড়া আক্রান্ত হয়েছেন ২১ হাজার ৫৭১ জন।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ফ্রান্সও রয়েছে আশঙ্কাজনক অবস্থায়। দেশটিতে এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৪৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৬১২ জনে।
এ ছাড়া ইউরোপের মধ্যে যুক্তরাজ্যে করোনায় মৃতের সংখ্যা ১৭৭। আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৯৮৩ জনে। জার্মানিতে ৬০ জন মৃতের পাশাপাশি আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ হাজার ৮৪৮ জন। সুইজারল্যান্ডে ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৩৩৬ জন। নেদারল্যান্ডসে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১০৬ জনের। আর আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ৯৯৪ জন।
এদিকে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় নেদারল্যান্ডস সরকারের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেওয়া দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ব্রুনো পদত্যাগ করেছেন।
অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই। ইরান সরকারের হিসাব অনুযায়ী, দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৪৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৬৪৪ জনে।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃতের সংখ্যা আড়াইশ ছাড়িয়েছে। আর আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়াজুড়ে বাসিন্দাদের বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশটির সবকটি অঙ্গরাজ্যের গভর্নরদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর সংক্রমণ ঠেকাতে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের চার কোটি ও লস অ্যাঞ্জেলেস অঙ্গরাজ্যের সোয়া এক কোটি মানুষকে বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গেভিন নিউসোম জানান, তাঁর রাজ্যের ৫৬ ভাগ মানুষ সংক্রমণের শিকার হতে পারেন।
এরই মধ্যে করোনার বিস্তার ঠেকাতে শ্রীলঙ্কায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে পার্লামেন্ট নির্বাচন।
করোনা যেভাবে সবকিছু অচল করে ফেলেছে, তাতে বিশ্ব একটি অর্থনৈতিক মন্দার দুয়ারে পৌঁছে গেছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।
এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সব সন্দেহভাজনের দেহে করোনাভাইরাস পরীক্ষার পরামর্শ দিলেও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর দেশ ভারতে করোনাভাইরাসের জন্য মাত্র ১৫ হাজার মানুষকে পরীক্ষা করায় প্রশ্ন উঠেছে। ভারত বলছে, শুধু করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা বা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশে ভ্রমণ করা অথবা শ্বাসপ্রশ্বাসে সংক্রমণের শিকার হওয়া রোগীদেরই কেবল পরীক্ষা করছে তারা।
এদিকে বাংলাদেশে আরো তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। এ নিয়ে এই ভাইরাসে মোট ২০ বাংলাদেশি আক্রান্ত হলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা গতকাল শুক্রবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘দেশে করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে তিনজন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে নারী ও দুজন পুরুষ রয়েছেন।’