করোনাভাইরাস ঠেকাতে এগিয়ে এলেন বিশ্বের শীর্ষ ধনীরা
চীনে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস আতঙ্কে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে চীন সরকারের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এসেছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবেররা। আর্থিক সাহায্যের মাধ্যমে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাঁরা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিজনেস ম্যাগাজিন ফোর্বস এ খবর জানিয়েছে।
ফোর্বস জানায়, গত রোববার বিল গেটস ও মেলিন্ডা ফাউন্ডেশন চীন ও আফ্রিকায় আক্রান্তদের এক কোটি ডলার আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ ছাড়া এ করোনাভাইরাসের চিকিৎসা ও ভ্যাকসিন তৈরির জন্য ৫০ লাখ মার্কিন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়।
অন্যদিকে চীনের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরিতে সাহায্যের জন্য জ্যাক মা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এক কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার সহায়তা দেবেন তিনি। এ ছাড়া গত শনিবার আলিবাবার পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়, এই ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসাক্ষেত্রে উহান শহরের হাসপাতালগুলোকে সাহায্যের জন্য ১৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের একটি তহবিল গঠন করা হবে।
এ ছাড়া এই ভাইরাসে আক্রান্তদের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের নির্বাহী কর্মকর্তা টিম কুক।
চীনা গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, চীনা টেক জায়ান্ট বাইদু, টেনসেন্ট, হুয়াওয়ে ও বাইটড্যান্সের প্রতিষ্ঠাতা যথাক্রমে রবিন লি, মা হুয়াটেং, রেন ঝেংফেই ও ঝাং ইমিং এই করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। এর মধ্যে বাইদু, টেনসেন্ট ও বাইটড্যান্স এ ভাইরাস মোকাবিলায় ১১৫ মিলিয়ন ডলার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ ছাড়া হুয়াওয়ে এরই মধ্যে এ ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে তৈরি করা হাসপাতাল নির্মাণে সহযোগিতা করেছে।
এ ছাড়া করোনাভাইরাস মোকাবিলায় এগিয়ে এসেছেন ফ্যাশন দুনিয়ার ধনকুবেররাও। ফেঞ্চ বিলিওনেয়ার বার্নার্ড আরনল্ট ও ফ্রানসিস পিনল্ট ২ দশমিক ৩ মিলিয়ন ও ১ মিলিয়ন ডলার সহায়তা করবেন বলে জানিয়েছেন।
এরই মধ্যে করোনাভাইরাস ঠেকাতে পুরো বিশ্বকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এ ভাইরাস মোকাবিলায় চীনের প্রশংসা করে ডব্লিউএইচওর জরুরি স্বাস্থ্য কর্মসূচির প্রধান মাইক রায়ান বলেন, ‘এটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ; কিন্তু এর প্রতিক্রিয়া চরম।’ আজ বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাস সম্পর্কে এক জরুরি বৈঠকে এ মন্তব্য করেন তিনি। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
এদিকে, এ ভাইরাস সম্পর্কে আরো জানতে এবং এ ভাইরাস কীভাবে সংক্রমণ হয়, সে বিষয়ে আরো ধারণা নিতে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ দল চীন যাবে বলে জানান মাইক রায়ান।
সম্প্রতি চীন সফর করা ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম জানান, এ ভাইরাস সংক্রমণের পর বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে ‘সামান্য লক্ষণ’ দেখা গেছে। তবে প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ নিউমোনিয়া ও শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যায় ভুগছেন।
ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক আরো জানান, চীনের জন্য ‘বিশ্বের সংহতি ও সমর্থন প্রয়োজন’ এবং এ পরিস্থিতিতে ‘পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমানে একত্র হতে হবে’।
এদিকে, চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মিছিল বাড়ছেই। আজ বৃহস্পতিবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত আট হাজার জনে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
গত মঙ্গলবার ডব্লিউএইচওর প্রধানের সঙ্গে এক বৈঠকে এ করোনাভাইরাসকে ‘শয়তান’ আখ্যা দিয়ে এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার অঙ্গীকার করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনি বলেন, ‘নতুন করোনাভাইরাস একটি শয়তান। আমরা এ শয়তানকে গুপ্তঘাতক হয়ে থাকতে দিতে পারি না। চীন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করবে এবং ভাইরাস প্রতিরোধ কর্মসূচিতে ডব্লিউএইচওর অংশগ্রহণকে স্বাগত জানাবে। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হওয়ার পূর্ণ আত্মবিশ্বাস এবং সক্ষমতা চীনের আছে।’
এদিকে, চীনের উহান শহর থেকে নিজ দেশের বাসিন্দাদের ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বুধবার উহান থেকে জাপানে ফিরেছেন দেশটির ২০৬ জন নাগরিক। আরো ৬৫০ জনকে ফিরিয়ে আনতে অতিরিক্ত ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনও বুধবার বলেছেন, ‘যেসব অসি নাগরিক হুবেই প্রদেশ ছাড়তে আগ্রহী, সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সহায়তা দেওয়া হবে।’ স্কট মরিসন আরো বলেন, ‘হুবেই প্রদেশে থাকা আমাদের নাগরিকদের ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির কথা ভেবে আমরা আগ্রহীদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছি। এ ক্ষেত্রে শুরুতে হুবেই থেকে ক্রিসমাস দ্বীপে এনে তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা চালানো হবে। সেখানে আমাদের বিশেষ একটি মেডিকেল টিম এরই মধ্যে পাঠানো হয়েছে।’
এদিকে, শ্রীলঙ্কায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত এক রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এরপরই চীনা নাগরিকদের অন-অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে দেশটি। এ ছাড়া চীনের সঙ্গে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে যুক্তরাজ্য। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসে কারো মৃত্যু না ঘটলেও বিশ্বের প্রায় ১৭টি দেশে এরই মধ্যে ছড়িয়ে গেছে ভাইরাসটি।