করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৩২, চীন ছাড়ছেন বিদেশিরা
চীনে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩২ জনে। গতকাল মঙ্গলবার দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, প্রায় ছয় হাজার মানুষের শরীরে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে।
চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস ঘিরে ক্রমেই বাড়ছে আতঙ্ক। এর কারণ অব্যাহত মৃত্যু আর ভাইরাসের দ্রুত সংক্রমণ। চীনে যে গতিতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, তা সামাল দিতে রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে চীন সরকারকে।
ভয়ংকর এই রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে ১৪টিরও বেশি শহর অবরুদ্ধ করে দিয়েছে চীন। সেখানে সব ধরনের যান চলাচল ও বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এসব শহরে কেউ প্রবেশ করতে কিংবা শহর থেকে বের হতে পারছেন না। ফলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন শহরগুলোর পাঁচ কোটির মতো মানুষ। নতুন করে আরো বেশ কয়েকটি শহরে গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন শহরের বাসিন্দাদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এদিকে, চীন থেকে নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নিচ্ছে বেশ কয়েকটি দেশ। অস্ট্রেলিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের নাগরিকদের চীন থেকে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
চীনের হুবেই প্রদেশের স্বাস্থ্য কমিশন জানায়, মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে আরো বেশ কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছেন এবং গোটা চীনে নিশ্চিত করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অন্তত পাঁচ হাজার ৯৭৪ জনে। এ ছাড়া আরো অন্তত ৯ হাজার ২৩৯ জন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। চীন ছাড়াও আরো ১৬টি দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
হুবেই প্রদেশের ডেপুটি গভর্নর ইয়াং উনইয়ান বলেন, ‘২৬টি গ্রুপে বিভক্ত করে তিন হাজার ১০০ চিকিৎসককে হুবেই প্রদেশে আনা হয়েছে। এ ছাড়া উহান ও অন্যান্য শহরে ৩০০ জনের আরো চারটি টিম ভাইরাস সংক্রমিতদের চিকিৎসায় কাজ করছে।’
করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন দেশের গবেষকরা। এখনো কোনো সুখবর দিতে না পারলেও মার্কিন চিকিৎসাবিজ্ঞানী কার্লা সেশেল দ্রুত এই রোগের ভ্যাক্সিন তৈরির ব্যাপারে আশাবাদী।
কার্লা সেশেল বলেন, ‘সার্স ভাইরাসের আদলে এই ভাইরাসের গঠনের তিনটি দিক নিয়ে আমরা গবেষণা করছি। যেহেতু এটা সার্স ভাইরাস গোত্রের, তাই আমাদের উদ্দেশ্যই হচ্ছে, সার্সের প্রতিষেধক থেকে এই ভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরি করা।’
এদিকে, চীনের সীমান্ত পেরিয়ে অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ছে এই ভয়াবহ ভাইরাসটি। সর্বশেষ সিঙ্গাপুর ও জার্মানিতেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর আগে থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও জাপানে এই ভাইরাসে বেশ কয়েকজন আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। প্রয়োজন ছাড়া চীন ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্কতা জারি করেছে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র।
ভারতের চারটি রাজ্যেও এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে, এমন সন্দেহে অন্তত দুই শতাধিক ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এতে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে বাংলাদেশেও। সরকারের পক্ষ থেকে দেশবাসীকে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন বন্দরে জারি করা হয়েছে সতর্ক অবস্থা।