কবে আসবে করোনার প্রতিষেধক?
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্বজুড়ে চলছে তোড়জোড়। সারা বিশ্বের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে করোনা নিরাময়ের জন্য। কবে নাগাদ করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন (টিকা বা প্রতিষেধক) মানুষের কাছে পৌঁছাবে, সেদিকে চোখ সবার। এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছে স্বস্তির খবরও। তবে ঠিক কবে মানুষের কাছে গিয়ে এসব ভ্যাকসিন পৌঁছাবে, তা নিয়ে বিভিন্ন কথা শোনা যাচ্ছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, অন্তত ৩৫টি কোম্পানি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করোনার ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে রয়েছে। এর মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা প্রাণীর দেহে এর পরীক্ষামূলক ব্যবহার চালিয়েছে বলে দাবি করেছে।
এদিকে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সোমবার থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ভ্যাকসিন (প্রতিষেধক) প্রয়োগ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। সিয়াটলের কায়সার পারমানেনতে ওয়াশিংটন স্বাস্থ্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে এ পরীক্ষামূলক প্রতিষেধক প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়। যাঁর শরীরে পরীক্ষামূলক প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ প্রয়োগ করা হয়, তাঁর নাম জেনিফার হ্যালার। তিনি দুই সন্তানের জননী।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানায়, প্রতিষেধক প্রয়োগের আগে ৪৩ বছর বয়সী জেনিফার বলেন, ‘আমরা সবাই অসহায় বোধ করছি। এটা (ভ্যাকসিন পরীক্ষায় অংশ নেওয়া) আমার জন্য কিছু করার এক দারুণ সুযোগ।’ এ সময় আরো তিনজন স্বেচ্ছাসেবী ভ্যাকসিন প্রয়োগের অপেক্ষা করছিলেন।
তবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, ভ্যাকসিন প্রয়োগে সফলতা এলেও বাজারে আসতে এক থেকে দেড় বছর সময় লাগতে পারে।
এদিকে অস্ট্রেলিয়ার গবেষকদের একটি দল দাবি করছে, তারা করোনাভাইরাস প্রতিরোধক খুঁজে পেয়েছে এবং গবেষকরা আশা করছেন, এ মাসের শেষের দিকে প্রতিরোধকটি পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য করোনায় আক্রান্তদের তালিকা করা হবে। অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম নিউজ ডটকম ডট এইউ সোমবার এ খবর জানিয়েছে।
কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ক্লিনিক্যাল রিসার্চের পরিচালক অধ্যাপক ডেভিড পিটারসন জানান, অন্য চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত দুটি ওষুধ টেস্টটিউবের মধ্যে করোনাভাইরাস নিশ্চিহ্ন করতে পারছে।
ডেভিড পিটারসন বলেন, ‘এরই মধ্যে একটি ওষুধ করোনায় আক্রান্ত কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে। এর ফলাফলে দেখা যায়, ভাইরাসটি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এবং ওই ব্যক্তিরা ভাইরাসটির সংক্রমণ থেকে মুক্ত হয়ে গেছেন।’
জানা গেছে, ওষুধ দুটির মধ্যে একটি এইচআইভির (এইডস রোগ) এবং অন্যটি ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ওষুধ—ক্লোরোকুইন। তবে ওষুধটি কম পরিমাণে ব্যবহার করা হয়।
অন্যদিকে, ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের চিকিৎসায় জাপানে ব্যবহৃত একটি ওষুধ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় কার্যকর প্রভাব ফেলেছে বলে দাবি করেছে চীনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ঝ্যাং জিনমিন জানান, উহান ও শেনঝেন শহরে চিকিৎসাধীন ৩৪০ জন রোগীর ওপর পরীক্ষামূলকভাবে ‘ফাভিপিরাভির’ নামে একটি ওষুধ প্রয়োগে আশাব্যঞ্জক ফল পাওয়া গেছে। ওষুধটি প্রস্তুত করেছে ফুজিফিল্মের একটি অঙ্গসংগঠন।
ঝ্যাং জিনমিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি (ওষুধটি) উচ্চমাত্রায় নিরাপদ এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে স্পষ্টতই কার্যকর।’
জাপানি সংবাদমাধ্যম এনএইচকে জানিয়েছে, শেনঝেনে করোনায় আক্রান্তদের ওপর ওধুধটি প্রয়োগের পর গড়ে চার দিনের মধ্যে ভাইরাসটি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।
এ ছাড়া ওষুধটি প্রয়োগের পর এক্স-রে পরীক্ষায় দেখা যায়, ৯১ শতাংশ আক্রান্তের ফুসফুসের অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
ফুজিফিল্ম টয়ামা কেমিক্যাল ২০১৪ সালে ওষুধটি উৎপাদন করেছিল। ওষুধটি ‘আভিগান’ নামেও পরিচিত। তবে করোনা চিকিৎসায় ওষুধের কার্যকারিতার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি ফুজিফিল্ম টয়ামা কেমিক্যাল।
জাপানে চিকিৎসকরা করোনায় মৃদু বা মোটামুটি আক্রান্তদের ওপর ওষুধটি প্রয়োগ করছেন। তবে ওষুধটি করোনায় গুরুতর আক্রান্তদের ক্ষেত্রে কার্যকর নয় বলে জানিয়েছে জাপানি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র।
জার্মান বায়োটেক কোম্পানি কিউরভ্যাকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, করোনার ভ্যাকসিন তৈরিতে এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। তারা আশা প্রকাশ করছে, আগামী গ্রীষ্মেই আক্রান্তদের শরীরে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা সম্ভব হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ওই কোম্পানিকে ১৪ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তার কথা জানিয়েছে। এদিকে, ভ্যাকসিনের কৃতিত্ব নিজেদের করে নেওয়ার জন্য কিউরভ্যাক কোম্পানিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রলোভন দেখিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ ওঠে। যদিও ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ অস্বীকার করা হয়।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলছে, আগামী ছয় মাসের মধ্যে করোনার ভ্যাকসিন মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার আশা রয়েছে।
সব দিক বিবেচনায়, একদিকে স্বস্তির খবর পাওয়া গেলেও কবে মানুষের হাতের নাগালে ভ্যাকসিন এসে পৌঁছাবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। এ ছাড়া এর মধ্যেই ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক ব্যবহারে সফলতা এলেও তা বাজারজাত করতে কত সময় লাগবে, তাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তাই বর্তমানে করোনা থেকে দূরে থাকতে হলে প্রতিরোধ করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এরই মধ্যে করোনাভাইরাসে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৯২৫ জনে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ১৯ হাজার ২৮৬ জন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮৪ হাজার ৮০১ জন। বার্তা সংস্থা বিএনও নিউজ এ খবর জানিয়েছে।