ইরানে আশঙ্কাজনক হারে ছড়াচ্ছে করোনাভাইরাস
ইরানে হুট করেই করোনাভাইরাস ঢুকে আশঙ্কাজনক হারে ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন জায়গায়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আটজনে। নতুন করে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। এ ছাড়া আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৪৩ জন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
এদিকে করোনাভাইরাস আতঙ্কে গতকাল রোববার তুরস্ক, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও আর্মেনিয়া ইরানের সঙ্গে তাদের স্থলসীমা বন্ধ করে দিয়েছে।
গত বুধবার ইরানের কোম শহরে প্রথম করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত করা হয়। এর পর থেকে অল্প সময়ের মধ্যেই বাড়তে থাকে প্রাণহানি ও আক্রান্তের সংখ্যা। চীনের পর ইরানেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
আলজাজিরার খবরে বলা হয়, কোম শহর থেকে মানুষের চলাচলের মধ্য দিয়ে ভাইরাস ছড়িয়ে গেছে তেহরান, বাবোল, আরাক, ইস্পাহান, রাস্ত, মারকাজ এবং অন্যান্য শহরে।
করোনাভাইরাসের দ্রুত ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে ইরানে বিভিন্ন স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
অন্যদিকে, গত শুক্রবার ইরানে পার্লামেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এদিন ভোটারদের অনেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় সতর্কতামূলক মাস্ক মুখে দিয়ে ভোট দিতে আসেন।
এদিকে ক্রমেই আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আজ সোমবার মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৪৬৫ জনে। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা ৭৯ হাজারের কাছাকাছি। সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ খবর জানিয়েছে।
চীনে একদিনে মৃত ও আক্রান্তের হার কমলেও সবচেয়ে আশঙ্কাজনক বিষয় হলো, চীনের বাইরেও বিভিন্ন দেশে ঘটছে প্রাণহানি; বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও।
দক্ষিণ কোরিয়ায় গতকাল রোববার এক লাফে বেড়ে যায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। দেশটিতে সংক্রমণের হার দ্বিগুণ হওয়ার পর সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬৩ জনে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬১ জন।
এমন নাজুক অবস্থায় দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী চুং সাই-কিয়ুন সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯-এর রোগী বাড়ছে। ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। সরকার যেকোনো মূল্যে এটি নির্মূলের পদক্ষেপ নিয়ে রেখেছে। এরপরও ব্যক্তিগতভাবে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’
এরই মধ্যে করোনাভাইরাসে ইতালির অবস্থাও খারাপের দিকে যাচ্ছে। ডিক্রি জারি করে দেশটির বেশ কিছু শহর ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তে ভয়াবহতা রুখতে সবাইকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।
জাপানেও ভাইরাসটির সংক্রমণ বেড়ে চলছে। আক্রান্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন সম্রাট নারুহিতো। জুলাইয়ে আসন্ন টোকিও অলিম্পিক নিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি সবকিছু সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
এদিকে, চীনের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে রাত-দিনের হিসাব নেই চিকিৎসকদের। অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল মিলছে খুব ধীরগতিতে। একটু একটু করে কমে আসছে করোনাভাইরাসে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা। বেইজিংয়ে গত ৪৮ ঘণ্টায় নতুন করে কেউ আক্রান্ত হননি। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন ১১ জন। এমন ভয়াবহ অবস্থায় এই ধীরগতিকেই আশার আলো হিসেবে দেখছেন চিকিৎসকরা।