ইরানের সঙ্গে বাড়ছে ইউরোপীয় দেশগুলোর বিরোধ
ইরানের অন্যতম শীর্ষ কমান্ডার কাসেম সোলেইমানি হত্যাকাণ্ড, সেইসঙ্গে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইউক্রেনীয় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা— সব মিলিয়ে অস্থির সময় পার করছে বিশ্ব। পরস্পর সম্পৃক্ত এ দুটি ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র-ইরানকেই শুধু মুখোমুখি দাঁড় করায়নি, ইরানের সঙ্গে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোরও বিরোধ বাড়িয়ে দিয়েছে।
ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইউক্রেনের যাত্রীবাহী বিমান ভূপাতিত করার ঘটনায় ইরানের ওপর চাপ বাড়ছে ভেতরে-বাইরে। এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার দেশটি জানিয়েছে, এ ঘটনায় তারা কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে কতজনকে ও কখন গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার কিছুই জানানো হয়নি। তবে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের বিমানে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার দৃশ্যের ভিডিও ধারণকারীও রয়েছেন আটকদের মধ্যে।
ইরানের কুদস বাহিনীর প্রধান কাসেম সোলেইমানিকে হত্যা নিয়ে শুরু হওয়া এই বিবাদকে আরো উসকে দিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও সোলেইমানি হত্যার সাফাই গেয়েছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘ইরানের মানুষ আজ আমাদের পক্ষে কথা বলছে। এটা এই প্রথমবার হচ্ছে। রাস্তায় তারা যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ করছে। তারা ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্রকে পছন্দ করে। কাসেম সোলেইমানির কারণে অনেক নারী-পুরুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। কারণ, কাসেম সোলেইমানি রাস্তার ধারে বোমা হামলা চালানোর রাজা ছিল।’
তবে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট এমন কথা বললেও ডেমোক্র্যাট সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের অভিযোগ, দেশে ইরাকের চেয়েও বড় কোনো যুদ্ধ বাধিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় আছেন ট্রাম্প।
ভারমন্টের সিনেটর ও ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বার্নি স্যান্ডার্স বলেন, ‘ইরান ইস্যুতে ট্রাম্প যে নীতিতে চলছেন, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। আর এই যুদ্ধ ইরাক যুদ্ধের চেয়ে ভয়াবহ হবে।’
এদিকে বিষয়টি আন্তর্জাতিক রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। যার কারণে ২০১৫ সালে সম্পাদিত পরমাণু চুক্তির বিপক্ষে বিরোধ প্রক্রিয়া শুরু করেছে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি। আর তাদের এই অতি উদ্যোগী মনোভাব নিয়ে ইউরোপের এই তিন দেশকে সতর্ক করেছে ইরান। আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা ফার্স নিউজ এজেন্সিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফ বলেছেন, চুক্তি নিয়ে ইউরোপীয় নেতাদের দৌড়ঝাঁপ করার বিষয়টি আইনগতভাবে ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে কৌশলগত ভুল একটি সিদ্ধান্ত।
এর আগে মঙ্গলবার এক যৌথ বিবৃতিতে ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য জানায়, পরমাণু চুক্তির শর্ত মানতে ইরানকে বাধ্য করার জন্য নতুন বিরোধ প্রক্রিয়া শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়ার আওতায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন চুক্তির অপর দুই পক্ষ—রাশিয়া ও চীন এবং ইরানকে—বিষয়টি অবহিত করবে। এরপর সংকট সমাধানের জন্য ১৫ দিন সময় দেওয়া হবে। অবশ্য আলোচনার মাধ্যমে এই সময়ের মেয়াদ বাড়ানো যাবে। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে সংকটের সমাধান না হলে ইরানের ওপর যথারীতি জাতিসংঘের আগের প্রস্তাব অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো আরোপিত হয়ে যাবে।