আজারবাইজান-আর্মেনিয়া সংঘাত যে কারণে
গত রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) থেকে রাশিয়ার মিত্র আর্মেনিয়া ও তুরস্কের মিত্র আজারবাইজানের মধ্যে সংঘাত চলছে। সংঘাতের কারণ নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল।
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলটি আজারবাইজানের অংশ। পাহাড় ও বনঘেরা দুর্গম এ অঞ্চলে প্রায় দেড় লাখ মানুষ বাস করে। তাদের বেশির ভাগই আজারবাইজানের শাসনের বিরোধী আর্মেনীয় নৃগোষ্ঠী। এ অঞ্চলটির আয়তন প্রায় চার হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার।
প্রথম সংঘাত
গত শতকের আশির দশকের শেষদিকে যখন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার প্রক্রিয়া চলছে, তখন থেকেই নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে সংঘাতের শুরু হয়। এরপর ১৯৯৪ সালে যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে এ সংঘাত শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রাণ হারায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। সংঘাতের কারণে অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ চলে যায় আর্মেনীয়দের হাতে।
আর্মেনিয়ার সহায়তা
১৯৯৪ সালের পর থেকে নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে আর্মেনিয়া। এ ছাড়া সারা বিশ্বে থাকা আর্মেনীয়রাও ওই অঞ্চলের জন্য আর্থিক সহায়তা করে থাকে।
যুদ্ধবিরতি চললেও নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের সৈন্যদের মধ্যে মাঝেমধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ২০১৬ সালে এক সংঘাতে এ অঞ্চলে প্রায় ২০০ জন প্রাণ হারায়। এ ছাড়া গত জুলাইতেও মোটামুটি বড় ধরনের সংঘাত হয়েছিল। আর গত রোববার শুরু হওয়া সংঘাতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯৫ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের অন্তত ১১ জন বেসামরিক নাগরিক।
আবার সংঘাত কেন?
গত জুলাইয়ের সংঘাতের সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তা সমাধানে ততটা আগ্রহ দেখায়নি। অতীতে রাশিয়া, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র ওই অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখতে মধ্যস্থতা করলেও বর্তমানে করোনা, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, বেলারুশ ও লেবানন পরিস্থিতি ইত্যাদির কারণে নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলের দিকে পর্যাপ্ত মনোযোগ দেওয়া যায়নি। তাই গত রোববার থেকে যুদ্ধ শুরু হয়েছে।
এবারের সংঘাত কতটা বড়?
‘জর্জিয়ান স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালিসিস সেন্টার’-এর সিনিয়র ফেলো গেলা ভাসাদজে বলছেন, ১৯৯০-এর দশকের পর এই প্রথম আর্মেনিয়া ও কারাবাখ অঞ্চলে সামরিক আইন জারি করে অস্ত্রশস্ত্র ও সামরিক যান জড়ো করছে। আজারবাইজানও সামরিক আইন জারি করেছে। এ ছাড়া আকাশ থেকে হামলা চালানোর সিস্টেম, ট্যাঙ্ক, আর্টিলারি সবকিছুর ব্যবস্থা করছে দেশটি।
সংঘাতে রাশিয়া, তুরস্ক যুক্ত হবে?
খ্রিস্টানপ্রধান আর্মেনিয়ার সবচেয়ে বড় বন্ধু রাশিয়া। তাদের সঙ্গে সামরিক চুক্তিও আছে দেশটির। আর মুসলিমপ্রধান দেশ আজারবাইজানের সঙ্গে সামরিক চুক্তি আছে তুরস্কের। তবে বিশ্লেষক গেলা ভাসাদজে বলছেন, রাশিয়া ও তুরস্ক হয়তো সরাসরি এ সংঘাতে যুক্ত হবে না; কারণ, এতে যুক্ত হয়ে খুব বেশি লাভ নেই। বরং এর ফলে তাদের নিজেদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
রাশিয়ার সামনে সুযোগ
বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কোকে সমর্থন জানিয়ে এবং রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরোধী নাভালনিকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সমালোচনার মুখে আছে রাশিয়া। এ অবস্থায় রাশিয়া যদি আলোচনার মাধ্যমে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারে, তাহলে বিশ্বমঞ্চে রাশিয়া প্রশংসিত হতে পারে। পুতিন ইতোমধ্যে আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
সংঘাত নিয়ে আলোচনা করতে গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলে ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি’র ডাক দিয়েছেন।