অশান্ত আসাম, কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হওয়ার পর থেকেই উত্তাল হয়ে উঠেছে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য আসাম। একের পর এক ঘটনায় অশান্ত বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন এই রাজ্য। ক্ষোভের জেরে রাজ্যে কারফিউ জারি করা হয়েছিল। কিন্তু মানুষ সেই কারফিউকে পায়ে দলে বিক্ষোভ করতে নেমে এসেছে রাজপথে।
স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কড়া বার্তা এলেও হিংসা-ক্ষোভ থামার কোনো লক্ষ্মণ নেই অগ্নিগর্ভ আসামে। কার্যত ক্ষোভ প্রশমন করতে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন। এরই মধ্যে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে গুয়াহাটির পুলিস কমিশনারকে। কড়া হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি-এনআইএর কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
গুয়াহাটির পুলিস কমিশনার দীপক কুমারের জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে মুন্না প্রসাদ গুপ্তাকে। বদলি করা হচ্ছে আরো চার জন ডেপুটি কমিশনারকেও। একইসঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিতে এনআইএর আইজিপি জি পি সিংকে অসম পুলিসের এডিজিপি পদে নিয়ে আসা হচ্ছে।
লোকসভার পর গতকাল বুধবার ভারতের রাজ্যসভায়ও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি পাস হয়। ভোটাভুটির সময় ২৪০ জন সাংসদের মধ্যে রাজ্যসভার অধিবেশনকক্ষে উপস্থিত ছিলেন ২৩০ জন। তার জেরে ম্যাজির ফিগার নেমে দাঁড়ায় ১১৬। বিলের পক্ষে ভোট পড়ে ১২৫টি। বিপক্ষে ভোট দেন ১০৫ জন সাংসদ।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হওয়ার পর থেকেই জ্বলছে আসাম। কারফিউ জারি রয়েছে। ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিক্ষুব্ধ রাজপথে টায়ার জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরিবহনের বাসেও আগুন ধরানো হয়েছে বলে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। সবমিলিয়ে আসামের পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ।
আসামের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বিগ্ন দিল্লি। কড়া হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বার্তা দিতেই এনআইএর আইজিপিকে আসাম পাঠানো হচ্ছে।
জানা গেছে, বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থল রাজ্যের গুয়াহাটি। সেখানে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি রয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে কারফিউ উপেক্ষা করে রাস্তায় নামে মানুষ। অল আসাম স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (এএএসইউ) ও কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি (কেএমএসএস) এই দুই সংগঠন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে মানুষকে ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নামার ডাক দেয়। গুয়াহাটিতে পুলিস গুলি চালিয়েছে বলেও শোনা গিয়েছে।
শুধু গুয়াহাটি নয়, বিক্ষোভ ছড়াচ্ছে ডিব্রুগড়েও। গতকাল থেকে আসামের ১০ জেলায় ইন্টারনেট পরিসেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সেখানের রেল যোগাযোগ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। ত্রিপুরার সঙ্গে আসামের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে ডিব্রুগড়ের সব বিমান বাতিল করেছে ইন্ডিগো। কলকাতা থেকে ডিব্রুগড়গামী সব বিমানও বাতিল করার কথা ঘোষণা করেছে কলকাতা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিক্ষোভকারীদের আক্রমণের নিশানায় আছেন বিজেপি নেতারা। কারণ বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারই সংসদে পাশ করিয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। আসামের তিন সুকিয়াতে প্রবল বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানে পরিস্থিতি ক্রমেই ঘোলা হচ্ছে।
কারফিউয়ের জেরে আসাম ও ত্রিপুরায় রঞ্জি ট্রফির চতুর্থ দিনের খেলা বাতিল করা হয়েছে। নিরাপত্তার খাতিরে আসাম ও ত্রিপুরায় যাত্রীবাহী ট্রেন পরিসেবা বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করেছে নর্থ ইস্ট ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ে। বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার ট্রেনও। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। দুই রাজ্যেই ফ্ল্যাগ মার্চ করছে সেনাবাহিনী।
বুধবার বিক্ষোভকারীদের সামাল দিতে লাঠিপেটা করে পুলিশ। ছুড়া হয় কাঁদানে গ্যাস, রবার বুলেট। কটন বিশ্ববিদ্যালয়, বি বুরুয়া কলেজ ও হান্ডিক গার্লস কলেজের মতো গুয়াহাটির শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি থেকে প্রায় শতাধিক বিক্ষোভকারী ছাত্র-ছাত্রীকে আটকও করা হয়েছে।