২৫ হাজার দেহ সৎকার করে পদ্মশ্রী পেলেন শরিফ চাচা
ছেলের মৃত্যু কোথায়-কীভাবে হয়েছিল, জানতে পারেননি মোহাম্মদ শরিফ। এক মাস পর ছেলের মৃত্যুর খবর পান তিনি। তার পর উদ্ধার করা হয় পচাগলা মরদেহ। এ ঘটনার পরই তীব্র কষ্ট নিয়ে মনে মনে শপথ নেন, অজ্ঞাতপরিচয় কোনো মরদেহের সন্ধান পেলেই সৎকারের ভার নিজের কাঁধে তুলে নেবেন শরিফ।
আর এভাবেই আজ পর্যন্ত হিন্দু ও মুসলিম মিলিয়ে পঁচিশ হাজার অজ্ঞাতপরিচয় মরদেহ সৎকার করেছেন ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের অযোধ্যার এই বাসিন্দা। নিরলস এই সেবার জন্য এবার ভারত সরকারের তরফ থেকে পদ্মশ্রী পুরস্কার পেলেন ৮২ বছর বয়সী মোহাম্মদ শরিফ।
উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদ শহরে শরিফ চাচা নামেই পরিচিত তিনি। শরিফ পেশায় একজন সাইকেল মেকার। কিন্তু মরদেহের সৎকার করতেই অনেক সময় ব্যয় হয় তাঁর।
শরিফ জানান, ২৭ বছর আগে ১৯৯২ সালে নিখোঁজ হন তাঁর ২৫ বছরের ছেলে মোহাম্মদ রইস খান। চাকরির জন্য সুলতানপুরে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে গিয়েই খুন হন রইস। এক মাস পর উদ্ধার করা হয় রইসের পচাগলা লাশ।
শরিফ বলেন, ‘ছেলের পচাগলা দেহ দেখেই মনে মনে স্থির করে নিয়েছিলাম, কোনো মানুষকে মৃত্যুর পর এভাবে আর অসম্মানিত হতে দেব না।’
শরিফের কাছে হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ নেই। তিনি বলেন, ‘নিজ হাতে অন্তত তিন হাজার হিন্দুর মরদেহ দাহ করেছি।’
কবরস্থান থেকে শ্মশান পর্যন্ত সব জায়গায় অসংখ্য বন্ধু রয়েছে শরিফের। একটি মরদেহ কবর দেওয়ার খরচ পাঁচ হাজার রুপির কাছাকাছি, দাহ করতেও লাগে প্রায় সাড়ে তিন হাজার রুপি। কিন্তু তা হলেও সেই খরচ নিয়ে আর ভাবেন না শরিফ। তিনি জানান, কবরস্থান বা শ্মশানে কেউ তাঁর কাছ থেকে অর্থ চান না, বরং অনেকে নানাভাবে সাহায্য করেন। আজ বিভিন্ন পুলিশ স্টেশন ও হাসপাতালসহ বিভিন্ন জায়গায় অবাধ বিচরণ শরিফের।
মৃত্যুর পর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কেউ মরদেহ শনাক্ত করতে না পারলেই ডাক পড়ে শরিফের। তিনি যথাস্থানেই নিয়ে যান মরদেহগুলো।
শুধু মরদেহের সৎকারই নয়, জীবন বাঁচানোর অভিজ্ঞতাও রয়েছে শরিফের। কয়েক দিন আগেই ফৈজাবাদ-লক্ষ্ণৌ সড়কে একটি জিপ উল্টে একই পরিবারের কয়েকজন নিহত হন। সেখান থেকে আহত অবস্থায় একজনকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন শরিফ। এরপর প্রাণে বেঁচে যান ওই ব্যক্তি।
এবার অনন্য মানবতার পুরস্কার পেলেন শরিফ। তিনি জানান, ভারত সরকারের কাছ থেকে এই পুরস্কার পেয়ে কাজ থামিয়ে দেবেন না। যতদিন পারবেন, এভাবেই কাজ করে যাবেন তিনি।