হিউস্টনে চীনা দূতাবাস বন্ধের নির্দেশ যুক্তরাষ্ট্রের, পাল্টা হুঁশিয়ারি বেইজিংয়ের
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজের হিউস্টন শহরে অবস্থিত চীনা কনস্যুলেট বা দূতাবাস বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে ওয়াশিংটন। মার্কিন সরকারের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ভঙ্গ করেছে চীন। দূতাবাস বন্ধ করতে ৭২ ঘণ্টা সময় দিয়েছে প্রশাসন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রেরন এ পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে পাল্টা পদক্ষেপেরর হুঁশিয়ারি দিয়েছে বেইজিং।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, হিউস্টনে চীনা কনস্যুলেট ভবনের আঙিনায় কিছু নথি পুড়িয়ে ফেলার একটি ভিডিও প্রকাশের পর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে দূতাবাস বন্ধ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
হিউস্টনের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রেও দাবি, ওই চীনা দূতাবাসে বেশ কিছু নথি পোড়ানো হয়েছে। তবে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে এখনো এ সংক্রান্ত সরকারি বিবৃতি আসেনি।
গত মঙ্গলবার রাতে হিউস্টনের ওই দূতাবাসে আগুন লাগার খবর এসেছিল। হিউস্টন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু মার্কিন পুলিশকে চীনা দূতাবাসের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
হিউস্টন পুলিশ টুইটারে জানিয়েছে, চীনের দূতাবাস থেকে ধোঁয়া দেখা গিয়েছিল। কিন্তু পুলিশকে দূতাবাসের অভ্যন্তরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
এদিকে বেইজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার তাঁদের বলা হয়েছে, হিউস্টনের কনস্যুলেট বন্ধ করে দিতে হবে। তাঁর বক্তব্য, যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত আপত্তিকর পদক্ষেপ নিয়েছে। এ ঘটনায় দুদেশের সম্পর্ক খারাপ হবে।
ওয়াং এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘চীন আহ্বান জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র অবিলম্বে এ ভুল সিদ্ধান্ত সংশোধন করুক। না হলে চীন অবশ্যই যথাযথ জবাব দেবে।’
এরপরই ওয়াং বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাদের রাজনৈতিক উসকানি দিচ্ছে। তারা আন্তর্জাতিক আইন মানছে না।’
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, কোনো কারণ ছাড়া হিউস্টনে একতরফাভাবে চীনা কনস্যুলেট বন্ধ করার নির্দেশ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং ইচ্ছাকৃতভাবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নষ্ট করার চেষ্টা।
চীনা মুখপাত্র আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত দ্রুত এ ‘ভুল সংশোধন‘ করা নতুবা ‘চীন প্রয়োজনীয় পাল্টা ব্যবস্থা নেবে।‘
যুক্তরাষ্ট্রে চীনের মোট ছয়টি দূতাবাস রয়েছে। তার মধ্যে শুধু হিউস্টনের দূতাবাস বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর এক বিবৃতিতে হিউস্টনের চীনা দূতাবাস বন্ধের তথ্য জানিয়েছে। প্রতিরক্ষা মুখপাত্রের বক্তব্য, ‘যুক্তরাষ্ট্রের গোপন তথ্য সুরক্ষিত রাখতেই এ পদক্ষেপ।’
কয়েক মাস ধরেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও নভেল করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধ চলছে। হংকং, শিনজিয়াং প্রদেশ ও দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের কার্যকলাপ নিয়েও একাধিকবার সরব হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র মর্গান ওরতাগুস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি ও অন্যান্য গোপন তথ্য রক্ষা করার জন্য হিউস্টনে চীনের কনস্যুলেট বন্ধ করে দিতে হচ্ছে।’ পরে তিনি বলেন, ভিয়েনা কনভেনশনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, একটি দেশ অপর দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
মার্কিন সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করে বেইজিং জানিয়েছে, এর জেরে দুদেশের মধ্যে ‘উত্তেজনা বাড়বে’ বলে আশঙ্কা করছে চীন। সিদ্ধান্তটিকে আন্তর্জাতিক আইন-বিরোধী বলেও দাবি করেছে তারা। সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার জন্যও আহ্বান জানিয়েছে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসে পুরো ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘উন্মত্ত পদক্ষেপ’ বলে পাল্টা হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
গ্লোবাল টাইমস বলছে, মার্কিন এ পদক্ষেপ ‘নজিরবিহীন‘ এবং চীন-মার্কিন কূটনৈতিক সম্পর্কে এটি ‘ভূমিকম্প‘ সৃষ্টি করবে।
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ঘটনায় মার্কিন-চীন সম্পর্ক আরো জটিল হয়ে উঠল।
১৯৭৯ সালে হিউস্টনে চীনের কনস্যুলেট খোলা হয়। সে বছরই চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
হংকং ও ম্যাকাওতে মার্কিন কনস্যুলেট বন্ধ করার দাবি
যুক্তরাষ্ট্র হিউস্টনে চীনা কনস্যুলেট বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর চীন পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার কড়া হুমকি দিয়েছে।
চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত গ্লোবাল টাইমস বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য পাল্টা ব্যবস্থা নিয়ে তাদের পরিচালিত একটি অনলাইন ভোটিংয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হাজার হাজার মানুষ মতামত দিয়েছে। তাদের ৬৫ শতাংশই বলেছে, হংকং ও ম্যাকাওতে যুক্তরাষ্ট্রের কনস্যুলেট বন্ধ করে দেওয়া উচিত।
গ্লোবাল টাইমসে প্রকাশিত মতামতকে সাধারণত চীনা সরকারের মতামত হিসেবে দেখা হয়।