সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসনের বিচার শুরু
রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসের সিনেটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসনের বিচার শুরু হয়েছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দুপুর ১টায় বিচার শুরু হয়। এরই মধ্যে বিচার প্রক্রিয়ায় নতুন প্রমাণ হাজিরের জন্য ডেমোক্র্যাটদের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে সিনেট। এর পাশাপাশি নিজ দলের সিনেটরদের চাপের মুখে দ্রুত শুনানির পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছেন সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাকোনেল। বিচার প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলার জন্যই দ্রুত শুনানির পরিকল্পনা করছিলেন ম্যাকোনেল, এমন অভিযোগ ডেমোক্র্যাটদের। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
সিনেটে প্রথম শুনানিতে প্রথমেই বক্তব্য দেন সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা মিচ ম্যাকোনেল। তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষেই কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জন রবার্টসের সভাপতিত্বে শুরু হওয়া এই বিচারের প্রথম শুনানিতে গতকাল মঙ্গলবার ডেমোক্রেটদের উত্থাপিত তিনটি প্রস্তাব ভোটাভুটিতে নাকচ হয়। এদিন হোয়াইট হাউস, স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং অর্থ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগকে ইউক্রেনের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের লেনদেন বিষয়ক নথি প্রকাশের প্রস্তাব উত্থাপন করেন ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার। কিন্তু সিনেটের ভোটাভুটিতে তাঁর এই প্রস্তাব টেকেনি এবং সিনেটরদের বড় একটি অংশ ট্রাম্পের পক্ষেই অবস্থান নেন।
এদিকে, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ৫০তম শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে অবস্থানরত ট্রাম্প সিনেটে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। এসব অভিযোগকে ‘নিতান্তই ধাপ্পাবাজি’ বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার সকালে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসনের বিচার শুরু হয়। এ বিচারকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গন। গত সোমবার সিনেটে অভিশংসন ধারার ওপর ট্রাম্পকে নির্দোষ দাবি করে আনুষ্ঠানিক নথি জমা দেন আইনজীবীরা।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকির সঙ্গে গত বছরের ২৫ জুলাই ট্রাম্পের টেলিফোন আলাপচারিতা থেকে এই অভিশংসন প্রক্রিয়ার সূত্রপাত। অভিযোগ ওঠে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক পার্টির জো বাইডেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে ইউক্রেনকে চাপ প্রয়োগ এবং এ নিয়ে কংগ্রেসের তদন্তকাজে বাধা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আর এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ডেমোক্র্যাট-নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হন ট্রাম্প। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার থেকে সিনেটে অভিসংশন প্রশ্নে ট্রাম্পের বিচার শুরু হয়।
বিচারের সময় সিনেটররা দিনে ছয় ঘণ্টা এবং সপ্তাহে ছয় দিন দুপক্ষের শুনানি শুনবেন। বিচারকাজটি পরিচালনা করছেন দেশটির প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস।
ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পের অভিশংসিত হওয়ার তথ্যপ্রমাণের নথি মামলা আকারে সিনেটে পাঠানো হয়েছে। নথিতে তাঁরা বলেছেন, ট্রাম্প পরবর্তী নির্বাচনে প্রতারণা করতে দুর্নীতিমূলক আচরণ করেছেন।
অন্যদিকে মামলা লড়তে পাঁচজন অভিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাম্প। সোমবার সিনেটে অভিশংসন ধারার ওপর আইনজীবীরা বিস্তারিত তথ্য যুক্ত করে ১৭১ পৃষ্ঠার নথি জমা দিয়েছেন। এতে তাঁরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের খালাস চেয়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সিনেটে অভিসংশনের বিচারে ট্রাম্পের ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে, তা মোটামুটি অনুমেয়। কেননা সিনেটে রিপাবলিকান আধিপত্যের বিষয়টি পরিষ্কার। ১০০ আসনের সিনেটে ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরাতে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন। কিন্তু সিনেটে ডেমোক্র্যাট সদস্য মাত্র ৪৭ জন। আর রিপাবলিকানরা ৫৩ জন হওয়ায় ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত খালাস পাবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেস এপির এরিক টাকার বলেন, ‘ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে অপসারিত করতে দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন প্রয়োজন পড়বে। এই সমর্থন ডেমোক্র্যাটদের নেই। কেননা সিনেটে রিপাবলিকান সমর্থক বেশি। ফলে ট্রাম্প খালাস পেয়ে যাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।’
ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত হাউস অব কমন্সে যেমন ট্রাম্পের অভিশংসন ঠেকানো যায়নি, তেমনি রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটেও প্রেসিডেন্টের অভিশংসন সম্ভব হবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।