যুক্তরাষ্ট্রে করোনা চিকিৎসায় আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পেল রেমডেসিভির
নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ভাইরাস প্রতিরোধী প্রতিষেধক রেমডেসিভিরকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি আজ শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে এফডিএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে রেমডেসিভির ব্যবহারের পর জানা যায়, এটি রোগীকে স্বাভাবিকের তুলনায় গড়ে পাঁচ দিন কম সময়ে সুস্থ করতে পারে। এ ছাড়া রেমডেসিভির যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় অনুমোদন পাওয়া প্রথম ও একমাত্র ওষুধ।
এর আগে গত মে মাস পর্যন্ত শুধু জরুরি প্রয়োজনে রেমডেসিভির ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
এফডিএ জানিয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া করোনায় আক্রান্ত ১২ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের রোগীদের জন্য রেমডেসিভির ব্যবহার করা যাবে এবং রোগীদের ওজন ৪০ কেজি বা তাঁর বেশি হতে হবে।
এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নতুন এক গবেষণায় উঠে আসে, করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় রেমডেসিভির খুব একটা প্রভাব ফেলে না। রেমডেসিভির ও হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনসহ কোভিড-১৯-এর মোট চারটি সম্ভাব্য ওষুধের ট্রায়ালের মূল্যায়ন করে এ তথ্য জানায় ডব্লিউএইচও।
করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় প্রথম যে কয়টি ওষুধ ব্যবহৃত হয়েছিল, রেমডেসিভির সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে থাকার সময় তাঁর চিকিৎসায়ও রেমডেসিভির ব্যবহার করা হয়েছিল।
ওষুধটির নির্মাতা সংস্থা গিলিয়াড সায়েন্সেস অবশ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। এক বিবৃতিতে গিলিয়াড বলেছে, গবেষণাটি থেকে পাওয়া তথ্য অন্য গবেষণার সঙ্গে তুলনায় ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ’ এবং সাম্প্রতিক এই গবেষণার ফলাফলের পুনর্মূল্যায়ন করা হয়েছে কিনা, তা নিয়ে তারা ‘চিন্তিত’।
সলিডারিটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য ডব্লিউএইচও চারটি সম্ভাব্য ওষুধের কার্যকারিতার ওপর পরীক্ষা চালায়। যেগুলোর মধ্যে ছিল ইবোলার ওষুধ রেমডেসিভির, ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন, অটো-ইমিউন ড্রাগ ইনটারফেরোন এবং এইচআইভির ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত লোপিনাভির ও রিটোনাভিরের মিশ্রণ।
যুক্তরাজ্যের আইসিইউতে থাকা করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের ওপর ব্যবহৃত কম মূল্যের স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ডেক্সামেথাসোন এই গবেষণার অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
৩০টির বেশি দেশে মোট ৫০০ হাসপাতালে থাকা ১১ হাজার ২৬৬ জন প্রাপ্তবয়স্ক রোগীর ওপর চারটি ওষুধের পরীক্ষা চালানো হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এখন পর্যন্ত যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে এই চারটি ওষুধের একটিও কোভিড-১৯ রোগীর মৃত্যু ঠেকাতে বা হাসপাতাল থাকার সময়ের ওপর প্রভাব রাখতে ভূমিকা রাখে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বৈজ্ঞানিক সৌম্য স্বামীনাথন গত বুধবার বলেন, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ও লোপিনাভির/রিটোনাভিরের ট্রায়াল গত জুনেই থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কারণ, সে সময়ই প্রমাণ হয় যে ওই ওষুধগুলো অকার্যকর। তবে অন্য ওষুধগুলোর ট্রায়াল চলছিল।
এই মাসের শুরুতে গিলিয়াডের পরিচালিত এক গবেষণার ফলাফলের সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফলের বৈপরীত্য রয়েছে।
গিলিয়াডের গবেষণায় উঠে আসে যে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে থাকা কোভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে রেমডেসিভির ব্যবহারে হাসপাতালে থাকার সময় পাঁচ দিন কমিয়ে আনা সম্ভব। ওই ট্রায়ালে প্রায় এক হাজার কোভিড-১৯ রোগী অংশ নেয়।