মাদাম তুসোয় রাজপরিবার থেকে বিদায় হ্যারি-মেগানের
ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারদের একজন প্রিন্স হ্যারি ও তাঁর স্ত্রী মেগান মার্কল গত বুধবার ঘোষণা দেন, তাঁরা আর ‘সিনিয়র রয়্যাল’ বা রাজপরিবারের ‘জ্যেষ্ঠ সদস্যের’ দায়দায়িত্ব পালন করতে চান না। এই রাজদম্পতি আরো জানান, তাঁরা রাজপরিবার থেকে বরাদ্দকৃত অর্থ নেবেন না এবং আর্থিকভাবে স্বনির্ভর জীবনযাপন করতে চান। হ্যারি-মেগান দম্পতির এমন ঘোষণায় ব্রিটিশ রাজপরিবারে রীতিমতো ঝড় ওঠে।
প্রিন্স হ্যারি ও তাঁর স্ত্রী সাবেক অভিনেত্রী মেগান মার্কলের গত বুধবার রাতে দেওয়া যৌথ বিবৃতিকে ঘিরে যুক্তরাজ্যে তোলপাড় চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ঘটনা প্রচার হচ্ছে ‘হ্যাশট্যাগ মেক্সিট’সহ। জানা গেছে, ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মতের বাইরে গিয়ে এ ঘোষণা দিয়েছেন প্রিন্স হ্যারি ও রাজবধূ মেগান।
এদিকে প্রিন্স হ্যারি ও রাজবধূ মেগানের ওই বিবৃতির পর লন্ডনের মাদাম তুসো জাদুঘরে স্থাপিত ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যদের মূর্তি থেকে আলাদা করে দেওয়া হয় হ্যারি ও মেগান বা ডিউক ও ডাচেস অব সাসেক্সকে।
মাদাম তুসো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জাদুঘরে আগে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, প্রিন্স ফিলিপ, প্রিন্স চার্লস ও তাঁর স্ত্রী ক্যামিলা, প্রিন্স উইলিয়াম ও তাঁর স্ত্রী কেট মিডলটনের সঙ্গেই ছিল হ্যারি ও মেগানের মোমের মূর্তিও। কিন্তু এখন আর হ্যারি-মেগান দম্পতির মূর্তি রাজপরিবারের সেটের সঙ্গে থাকবে না। সেগুলো সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এ খবর জানিয়েছে।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টুইটারে মাদাম তুসো লন্ডন লিখেছে, ‘তাঁদের (হ্যারি-মেগান) সিদ্ধান্তকে আমাদের সম্মান জানাতেই হতো হ্যাশট্যাগ মেক্সিট।’
ব্রিটিশ রাজপরিবারের বাকি সদস্যদের চেয়ে হ্যারি-মেগান দম্পতি বরাবরই আলাদা। ছোটখাটো নানা ঘটনায় তার নজির দিয়েছেন এই রাজদম্পতি। কিন্তু তাই বলে এমন একটি সিদ্ধান্ত নেবেন হ্যারি-মেগান, তাও কি না রাজপরিবারের কাউকে কিছু না জানিয়ে, এতটা কেউই আঁচ করতে পারেনি।
হ্যারি-মেগান গত বুধবারের বিবৃতিতে দাবি করেন, অনেক ভেবেচিন্তেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। হ্যারি ও রাজবধূ মেগান বিবৃতিতে জানান, শিশুপুত্র আর্চিকে নিয়ে তাঁরা জীবনযাপনের জন্য যুক্তরাজ্য ও উত্তর আমেরিকায় ভাগাভাগি করে সময় কাটাতে চান। একই সঙ্গে তাঁরা জানান, রাজপরিবারের ‘জ্যেষ্ঠ সদস্য’ হিসেবে গণ্য না হয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করবেন। আর এ জন্য কিছু সময় তাঁরা যুক্তরাজ্যে এবং বাকি সময় উত্তর আমেরিকায় কাটাবেন। তবে ব্রিটেনের রানি, কমনওয়েলথ ও পৃষ্ঠপোষকদের প্রতি দায়িত্ব পালনে কোনো ত্রুটি রাখবেন না বলে জানান তাঁরা।
আচমকা এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণও জানিয়েছেন হ্যারি-মেগান। বিবৃতিতে এ বিষয়ে তাঁদের ব্যাখ্যা, ‘ভৌগোলিক এই বৈচিত্র্য একদিকে যেমন আমাদের ছেলেকে রাজকীয় ঐতিহ্যে বেড়ে উঠতে সাহায্য করবে। সেইসঙ্গে আমাদের পরিবার ভবিষ্যতের জন্য চিন্তাভাবনার অবকাশ পাবে।’
হ্যারি-মেগান গত বছর জুনে ‘ডিউক অ্যান্ড ডাচেস অব কেমব্রিজ ফাউন্ডেশন’ থেকে সরে এসে ‘সাসেক্স রয়্যাল চ্যারিটি’ প্রতিষ্ঠা করেন। তবে বড়ভাই প্রিন্স উইলিয়াম ও ভাইয়ের স্ত্রী কেট মিডলটনের মতো দাতব্য কাজ যুক্তরাজ্যেই সীমাবদ্ধ রাখবেন না হ্যারি-মেগান। শিগগিরই ওই দাতব্য সংস্থার মাধ্যমে উত্তর আমেরিকা ও আফ্রিকায় নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজকর্ম শুরু করবেন তাঁরা।
কাজ ও বসবাসের স্থান হিসেবে এই রাজদম্পতির আমেরিকাকে বেছে নেওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। রাজবধূ মেগান নিজে একজন মার্কিন নাগরিক। তাঁর মা থাকেন ক্যালিফোর্নিয়ায়। তবে ব্রিটিশ গণমাধ্যমের দাবি, উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডায়ও বছরের একটা বড় সময় কাটাতে পারেন হ্যারি-মেগান দম্পতি। সম্প্রতি কানাডায় ছয় সপ্তাহ ছুটি কাটিয়ে যুক্তরাজ্যে ফিরেছেন তাঁরা। মেগান আগে বলেছিলেন, লস অ্যাঞ্জেলেসের পর কানাডাই তাঁর কাছে দ্বিতীয় বাড়ি। সেখানে মেগানের বন্ধু-বান্ধবও আছেন। তাই হ্যারি-মেগানের কানাডায় থাকার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
হ্যারি-মেগানের বিবৃতি অনুযায়ী, অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হওয়ার মানে দাঁড়ায়, রাজকোষ থেকে তাঁরা আর বরাদ্দকৃত অর্থ নেবেন না। কিন্তু ব্রিটিশ রাজকীয় নিয়ম বলছে, তাঁরা যদি চান তাহলে তাঁদের বিদেশ সফরের খরচ রাজকোষ থেকেই যাবে কিংবা সংশ্লিষ্ট দেশ সে খরচ বহন করবে। রাজপরিবারের সদস্য হিসেবে মেট্রোপলিটন পুলিশের নিরাপত্তাও নিতে তাঁরা বাধ্য।
হ্যারি-মেগানের এমন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রাজদম্পতি যতই অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হওয়ার চেষ্টা করুন, পাপারাজ্জিদের তাঁরা এড়াতে পারবেন না। তাই চেষ্টা করলেও সাধারণ জনতা হয়ে ওঠা হবে না হ্যারি-মেগানের।
তবে ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো বলছে, প্রিন্স হ্যারি ও তাঁর স্ত্রী যেভাবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতে পারেন, তার তুলনা করা যায় প্রিন্স হ্যারির মা প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে। প্রিন্সেস ডায়ানার রাজকীয় জীবনও সুখের ছিল না। হয়তো সে কারণেই প্রিন্স হ্যারি ও রাজবধূ মেগান রাজপরিবারের বাইরেই সুখের সন্ধান করতে চাইছেন।