ভারতের ভিসা নীতি : বাংলাদেশি মুসলিমদের জরিমানা ২১ হাজার রুপি, হিন্দুদের ১০০
বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী নাগরিকদের জন্য সম্প্রতি এক ‘বৈষম্যমূলক ভিসা নীতি’ প্রণয়ন করেছে ভারত সরকার। ওই নীতি অনুযায়ী বাংলাদেশের কোনো মুসলিম নাগরিক ভারত ভ্রমণের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অতিরিক্ত সময় থাকলে তাঁকে গুনতে হবে অন্য ধর্মের অনুসারীদের চেয়ে কমপক্ষে ২০০ গুণ বেশি জরিমানা।
বাংলাদেশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে জানান, এই নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ‘ক্রিকেটার লিটন দাস (হিন্দু) ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর একদিন বেশি থাকলে তাঁকে দিতে হবে ১০০ রুপি। অপরদিকে সাইফ হাসান (মুসলিম) একদিন বেশি থাকলে দিতে হবে ২১ হাজার রুপি।’
সম্প্রতি বাংলাদেশে ও ভারতের মধ্যকার টেস্ট সিরিজ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কলকাতা গেলে ভিসার এই নতুন নিয়মটি সামনে আসে।
সেখানে অবস্থানের বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটার সাইফ হাসানের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এ জন্য তিনি কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনে যোগাযোগ করেন। যেখান থেকে বিষয়টি চলে যায় ভারতের ফরেনার রিজওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসে (এফআরআরও)।
এফআরআরও’র ওয়েবসাইটে তাদের প্রকাশিত নীতিমালা অনুযায়ী, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানুষের জন্য ভারতে ভিসার মেয়াদের পর দুই বছরের বেশি থাকলে জরিমানা দিতে হবে ৫০০ রুপি। মেয়াদের পর ৯১ দিন থেকে দুই বছর পর্যন্ত বেশি থাকলে জরিমানা হবে ২০০ রুপি ও ৯০ দিন পর্যন্ত বেশি থাকলে জরিমানা গুনতে হবে ১০০ রুপি।
অপরদিকে, বিদেশি কোনো নাগরিক যদি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের না হয়, তবে ভিসার দুই বছরের বেশি অবস্থানের ক্ষেত্রে জরিমানা হবে ৫০০ মার্কিন ডলার (৩৫ হাজার রুপি), ৯১ থেকে দুই বছর পর্যন্ত থাকলে জরিমানা হবে ৪০০ ডলার (২৮ হাজার রুপি) ও ৯০ দিন পর্যন্ত বেশি থাকলে জরিমানা হবে ৩০০ ডলার (২১ হাজার রুপি)।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বিষয়টিকে ‘ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য’ বলে উল্লেখ করেছেন। আগামীতে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বিষয়টি তোলা হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
সম্প্রতি এই ভিসা নীতির ভুক্তভোগী হয়েছেন বাংলাদেশের এক দুস্থ মুসলিম নারীও। ভিসার মেয়াদের বেশি সময় ভারতে থাকার কারণে তাঁকে দেশে পাঠাতে বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনকে ২১ হাজার রুপি চাঁদা তুলতে হয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের একজন কূটনীতিক দ্য হিন্দুকে বলেন, ‘ওই নারী একদিন বেশি ছিলেন। তাঁকে ২১ হাজার রুপি পরিশোধ করতে বলা হয়। তাঁর কাছে ওই পরিমাণ অর্থ ছিল না এবং আমাদের তা দিতে হয়। ধর্মের ভিত্তিতে কেন এমন বৈষম্য থাকবে?’