পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হতে মোজাম্বিকে নজর আইএসের
মধ্যপ্রাচ্যে চরম পরাজয়ের পর জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এখন মোজাম্বিকে নিজেদের প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। দেশটির সরকারের ব্যাপক দুর্নীতি এবং নানা বিষয়ে অদক্ষতা আইএসকে সেখানে নেটওয়ার্ক বিস্তারের সুযোগ করে দিচ্ছে। সংবাদমাধ্যম দ্য হিলে প্রকাশিত একটি মতামত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএনআই এ খবর জানিয়েছে।
থিঙ্কট্যাংক সেন্টার ফর পলিটিক্যল অ্যান্ড ফরেন অ্যাফেয়ার্সের (সিপিএফএ) পরামর্শক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের পরিচালক কেলি আলখউলি দ্য হিলে আইএসের সম্ভাব্য পদক্ষেপের বিষয়ে মতামত প্রকাশ করেছেন। কেলি আলখউলি বলেছেন, আইএস আগের মতো আর বড় ধরনের হুমকি হিসেবে না থাকলেও মোজাম্বিক সরকারের দুর্নীতি ও অদক্ষতা দলটিকে এখান থেকে পুনরায় চাঙা হয়ে ওঠার সুযোগ করে দিবে।
সম্প্রতি শীর্ষস্থানীয় জ্বালানি কোম্পানি টোটাল মোজাম্বিকের কাবো ডেলগাদো প্রদেশে ২০ বিলিয়ন ডলারের গ্যাস প্রকল্পের কাজ স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে। এটি মোজাম্বিক সরকারের জন্য বিশাল ধাক্কা, কারণ এ ঘটনা তাদের অদক্ষতাকেই প্রমাণ করেছে। পাশাপাশি, দেশটিতে যে আইএসের হুমকি ক্রমে বাড়ছে এ বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অথচ এই তিনটি মেগা প্রকল্প আগামি ২৫ বছরে মোজাম্বিককে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রাজস্ব এনে দিতো। মাত্র ১৫ বিলিয়ন ডলারের জিডিপির দেশ মোজাম্বিকের রূপান্তর এবং জনগণের জীবনমান উন্নয়নের চমৎকার সুযোগ ছিল এটি। কিন্তু, অব্যাহত দুর্নীতির কারণে তিনটি প্রকল্পই অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে যেতে পারে।
মোজাম্বিকে অব্যাহতভাবে প্রভাব বিস্তারকারী স্থানীয় আল-শাবাব জঙ্গী গোষ্ঠী ২০১৯ সালে আইএসের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছিল। তারাও দেশটির উন্নয়তে বাধা হয়ে উঠেছে এবং শিগগিরই প্রতিবেশী দেশগুলোর হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
জ্বালানি প্রতিষ্ঠান টোটালের আফুঙ্গি প্ল্যান্টের কাছেই পালমা শহরে হামলায় কয়েক ডজন মৃত্যুর ঘটনটি বুঝিয়ে দিচ্ছে ২০১৭ সালের তুলনায় এখানে ইসলামি সন্ত্রাসবাদের পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে উঠেছে। এই চার বছরে সাত লাখের বেশি বেসামরিক নাগরিক বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং আড়াই হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
মোজাম্বিকের জনসংখ্যার অর্ধেকই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে এবং কাবো দেলগাদোতে বেকারত্ব ও শিক্ষার হার এখনও অনেক বেশি। ইসলামপন্থি জঙ্গীরা এই আর্থ-সামাজিক অবস্থা কাজে লাগিয়ে স্থানীয় লোকজনকে তাদের দলে নেওয়ার এবং নিজেদের উপস্থিতি বৃদ্ধির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কেলি।
এ ছাড়া কাবো দেলগাদো অবৈধ বাজারগুলোর জন্য হাতির দাঁত, কাঠ, রুবি, অস্ত্র ও হেরোইন পাচারের অন্যতম প্রধান পথ হয়ে উঠেছে। এই হেরোইন আফগানিস্তানে উৎপাদিত হয়ে ইরান ও পাকিস্তানে পাচার করা হয়; আর সেখান থেকে বিভিন্ন পথে আন্তর্জাতিক বাজারগুলোয় পাঠানো হয়।
তিন দশক ধরে দক্ষিণাঞ্চলীয় পাচার রুটের ক্ষেত্রে মোজাম্বিকের উত্তরাঞ্চল ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এখান থেকে হেরোইন দক্ষিণ আফ্রিকায় হয়ে ইউরোপে পাঠানো হয়।
বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এ অঞ্চলের যেকোনো স্থান থেকে অবৈধ ব্যবসার ওপর কর সংগ্রহ করে থাকে ইসলামি জঙ্গী দলগুলো। ট্রাফিক নেটওয়ার্কগুলো নিরবচ্ছিন্ন রাখতেই তারা এ কর বসিয়ে থাকে বলে জানা যায়।
এ প্রসঙ্গে কেলি বলেন, এটি শুধু আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎসই নয় বরং একই পথ ও ক্যাম্পগুলো ব্যবহার করে তারা নিজেদের অভিযান পরিচালনা করতে পারে।
মোজাম্বিকের সামরিক বাহিনী পুরোপুরি সজ্জিত নয় এবং ইসলামি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের পর্যাপ্ত জ্ঞানেরও অভাব রয়েছে। কঠিন ও কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে আল-শাবাব কাবো ডেলগাদোতে উপস্থিতি ক্রমে বাড়িয়ে চলেছে; যা প্রতিবেশী মালাওয়ে, তানজানিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।