নাটকীয়তার পর শেষ মুহূর্তে মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই!
লিথাল ইনজেকশন দিয়ে নভেম্বরের ২০ তারিখ খুনের দায়ে অভিযুক্ত মার্কিন নাগরিক রোডনি রিডের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কথা ছিল। উনিশ বছরের তরুণী স্ট্যাসি স্টিটাসকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল রিডের বিরুদ্ধে। কিন্তু মাত্র কিছুদিন আগেই রিড জানতে পারেন, তাঁকে নির্দোষ প্রমাণ করেছেন আইনজীবীরা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
রিড আগে থেকেই বলে আসছিলেন তিনি নির্দোষ। তবে তাঁর পক্ষে পাওয়া যাচ্ছিল না যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ। আর এ কারণেই মৃত্যুদণ্ডাদেশ মেনে নিতে হয়েছিল রিডকে। কিন্তু হুট করে জানা গেল, রিড সম্পূর্ণ নির্দোষ। তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে টেক্সাস আদালত রিডের মৃত্যুদণ্ড খারিজ করেন।
এদিকে আদালতের এ রায়কে স্বাগত জানিয়েছে ইনোসেন্স প্রজেক্ট নামের একটি সংগঠন, যারা রিডের এ মামলার বিষয়ে কাজ করেছিল।
গত ২৩ এপ্রিল সকালবেলা ট্রাকে করে কাজে বের হয়েছিলেন স্ট্যাসি। এর কয়েক ঘণ্টা পরই ট্রাকটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। সেদিন বিকেলেই উদ্ধার করা হয় স্ট্যাসির লাশ। বেল্ট দিয়ে তাঁকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছিল বলে তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়। পরে তদন্ত করতে গিয়ে তাঁর যোনিতে তিনটি শুক্রাণু কোষ পায় তদন্তকারীরা। সেখানে এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবক রোডনি রিডের বীর্যও পাওয়া যায়।
এরই মধ্যে রিডের বীর্য সংগ্রহ করে রাখে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ওই সময় রিড দাবি করেছিলেন, স্ট্যাসির সঙ্গে তাঁর গোপন সম্পর্ক ছিল।
এদিকে ওই ট্রাকের কোথাও রিডের আঙুলের ছাপ পায়নি তদন্তকারীরা। মূলত স্ট্যাসির যোনিতে রিডের বীর্য পাওয়াকে ঘিরেই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। ওই সময় রিড জানিয়েছিলেন, স্ট্যাসির মৃত্যুর আগের দিন তাঁর সঙ্গে রিডের যৌনক্রিয়া হয়। আর সেটি দুজনের সম্মতিতেই হয় বলে জানিয়েছিলেন রেড। তবে সাক্ষীরা সেটিকে ভুল বলে দাবি করেছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, যোনিতে এত সময় ধরে শুক্রাণু থাকার কথা নয়। তাঁদের ধারণা ছিল, স্ট্যাসিকে মৃত্যুর আগে ধর্ষণ করা হয়েছিল। রিডকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য এটিই যথেষ্ট ছিল। তবে রিডের কৌঁসুলিরা তাঁকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য লড়াই চালিয়ে যান এবং নতুন তথ্য প্রমাণ জমা দেন।
ফরেনসিক কর্মকর্তারা বলেছিলেন, শুক্রাণু যোনিতে একদিনের বেশি টিকে থাকতে পারে না। তবে তাঁদের মধ্যে রবার্তো বায়ার্ত নামের এক বিশেষজ্ঞ জানান, তিনি এখন জানতে পেরেছেন, মৃত্যুর পরও শুক্রাণু টিকে থাকতে পারে। তিনি আরো জানান, সম্মতি ছাড়াও যে রিড ও স্ট্যাসি শারীরিক সম্পর্কে ছিলেন, তারও কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই।
এরই মধ্যে স্ট্যাসি হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে অন্য একটি রহস্য সামনে চলে আসে। জিমি ফেনেল নামের এক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে স্ট্যাসির বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। এ বিষয়টি জানার পরই স্ট্যাসি ও জিমির সম্পর্কের বিষয়টিও সামনে নিয়ে আসা হয়। একজন বিমাকর্মী জানান, একদিন স্ট্যাসিকে কোনো রকম ঝামেলা করলে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন জিমি। এ ছাড়া এ বিষয়টি ঘিরে এক সাবেক পুলিশ সদস্যের বক্তব্যও পাওয়া যায়। তিনি জানান, স্ট্যাসির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় তাঁর মরদেহের দিকে তাকিয়ে জিমি বলেছিলেন, ‘যা স্ট্যাসির প্রাপ্য, তাই হয়েছে।’ এদিকে এর আগেও অন্য এক নারীকে অপহরণ ও যৌন নির্যাতনের দায়ে জেল হাজতে ছিলেন জিমি। ২০১৮ সালে তিনি জেল থেকে মুক্তি পান।
আরো একজন সাক্ষী আর্থার স্নো, যিনি জিমির সঙ্গে জেল হাজতে ছিলেন। তিনি জানান, জিমি একদিন তাঁকে জানিয়েছিলেন, তাঁর প্রেমিকা স্ট্যাসি আড়ালে এক কৃষ্ণাঙ্গের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত। এবং এ জন্য স্ট্যাসিকে খুন করবেন বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন জিমি।
আর এসব তথ্যের ফলেই স্ট্যাসি হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে সৃষ্টি হয় নতুন মোড়। আর এরই মধ্যে প্রমাণ হয়ে যায় ধর্ষণ ও খুনের দায়ে অভিযুক্ত রোডনি রিড সম্পূর্ণ নির্দোষ।