দূতাবাসের কর্মীকে যৌন হেনস্তা, ৩ লাখেরও বেশি পাউন্ড জরিমানা
দুই সন্তানের জননী ড্যানি কিংসন। বয়স ৫৮। ২০০৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থিত কাতার দূতাবাসে সেদেশের রাষ্ট্রদূতের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
কিন্তু লন্ডনে অবস্থিত কাতার দূতাবাসে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে কিংসন অনেকবার যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। শুধু তিনি একা নয়, তাঁর ১৯ বছর বয়সী কন্যাও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন।
কর্মসংস্থান ট্রাইব্যুনালের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি মেইল এক প্রতিবেদনে জানায়, দূতাবাসে চাকরি করার সময় কাতারের দুজন রাষ্ট্রদূত তাঁকে তাঁদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্ত কাটানোর প্রস্তাব দেন। শুধু তাই নয়, তাঁদের একজন কিংসনকে তাঁর বাসায় একটি ‘সেক্স পার্টিও’ আয়োজন করতে বলেন।
ওই দুই রাষ্ট্রদূতের অনবরত আপত্তিকর প্রস্তাবে অতিষ্ঠ হয়ে কিংসন আত্মহত্যা করার চিন্তাও করেছিলেন বলে জানায় ট্রাইব্যুনাল। লন্ডনের ওই ট্রাইব্যুনাল আরও জানায়, যৌন হয়রানির শিকার কিংসনকে তিন লাখ ৯০ হাজার পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দিয়েছে আদালত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কাতারের রাষ্ট্রদূত ফাহাদ আল-মুশাইরি এতটাই উন্মত্ত ছিলেন যে, তিনি কিংসনকে তাঁর ফ্ল্যাটে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিয়মিতই আহ্বান করতেন। কিন্তু কিংসন মুশাইরির প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাঁর চোখ পড়ে কিংসনের ১৯ বছর বয়সী কন্যার ওপর। মুশাইরি প্রায়ই কিংসনের কন্যাকে জড়িয়ে ধরে ছবি তুলতে চাইতেন।
দূতাবাসে থাকাকালীন টানা চার বছর মুশাইরি কিংসনকে বিরক্ত করতেন যেন তিনি তাঁর কন্যাকে মুশাইরির সঙ্গে কেনাকাটা করতে প্যারিসে যেতে দেন। মুশাইরি কিংসনের কন্যাকে ইসলামী আইন অনুযায়ী বিয়েও করতে চেয়েছিলেন বলে জানায় ট্রাইব্যুনাল।
অন্যদিকে আরেক রাষ্ট্রদূত আলি আল-হার্জরি তাঁর জন্য ‘সেক্স পার্টির’ আয়োজন করতে কিংসনের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। এবং কিংসনকে নিয়ে কিউবায় গিয়ে অবকাশ যাপনের প্রস্তাব দেন।
রাষ্ট্রদূত আলির সেই আপত্তিকর প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় অবশেষে কিংসনকে ২০১৪ সালের জুন মাসে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। এমনকি তাঁর পাওনা টাকাও তাঁকে দেওয়া হয়নি। আর তাই ক্ষতিপূরণের তিন লাখ ৯০ হাজার পাউন্ডের বাইরেও কিংসনকে অতিরিক্ত এক লাখ ১৫ হাজার পাউন্ড দেওয়ার আদেশ দেন ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি গীল ব্রাউন।
বিচারপতি ব্রাউন বলেন, দুই রাষ্ট্রদূতের যন্ত্রণায় কিংসনের জীবন এতটাই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল যে, তিনি অসংখ্য নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। যার ফলে তিনি শারীরিক ও মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে আত্মহত্যার মত সাংঘাতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন।
বিচারপতি আরও বলেন, কিংসন ভয়াবহ যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। তাঁর কর্মময় জীবনে এই ঘটনাগুলো তাঁকে ক্ষুব্ধ ও অপমানিত করেছে। এগুলো কিংসনের জন্য সম্মানহানিকর ব্যাপার ছিল।