টানা ৪০ বছর চার বোন ক্যামেরাবন্দি
১৯৭৫ সালের কথা। একদিন বিখ্যাত মার্কিন ফটোগ্রাফার জোনাথন টেইলর তাঁর চার ভাতিজির (উপরে বাঁ থেকে এমিলি, র্যাচেল, সুজান ও জ্যানেট টেইলর) একটি সুন্দর ছবি তোলার চিন্তা করেছিলেন। কারণ, ওই বছর তাঁর ছোট ভাতিজি যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু কে জানত, তাঁদের ১৯৭৫ সালের এই ছবির পর রচিত হবে ৪০ বছরের অন্য রকম এক ইতিহাস। কারণ, ওই দিনের পর থেকে প্রতিবছর চার বোন একত্র হতেন আর ছবি তুলতেন। এভাবে চলেছে দীর্ঘ ৪০ বছর। তবে শেষ ছবিটি না দেখলে আপনি বিস্মিত না হয়ে পারবেন না।
১৯৭৭ সাল
জোনাথন টেইলর তাঁর চার ভাতিজিকে আবার একত্র করেন এবং আরেকটি ছবি তোলেন। ওই বছর জোনাথনের মেজ ভাতিজি র্যাচেলের (বাঁ থেকে দ্বিতীয়) প্রেমিকের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল।
১৯৮০ সাল
১৯৮০ সাল ওই চার বোনের জন্য শোকের বছর। ওই বছর তাঁদের উইসকনসিনের বাড়িতে আগুন লেগে তাঁদের মা-বাবা নিহত হন।
১৯৮১ সাল
মায়ের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সখ্য ছিল বড় কন্যা এমিলির (বাঁ থেকে চতুর্থ)। মায়ের শোকে ওই বছর এমিলি অসুস্থ হয়ে টানা চার মাস হাসপাতালের বিছানায় ছিলেন।
১৯৮২ সাল
তিন বোনের যত্ন ও ভালোবাসায় ১৯৮২ সালে এমিলি (বাঁ থেকে তৃতীয়) সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন।
১৯৮৩ সাল
এ বছর সেজ বোন সুজানের (বাঁ থেকে প্রথম) এক ধনী ব্যবসায়ীর সঙ্গে প্রেম ও বিয়ে হয়।
১৯৮৪ সাল
এ বছর জোনাথন টেইলর মারা যান। কিন্তু চার বোন ছবি তোলা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
১৯৮৫ সাল
যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি শীত পড়েছিল এই বছর। আর র্যাচেলের (বাঁ থেকে দ্বিতীয়) জন্মদিন উপলক্ষে তাঁরা ছবি তুলে রাখে।
১৯৮৬ সাল
চার বোনের মধ্যে বড় বোন এমিলি (বাঁ থেকে তৃতীয়) এই বছর প্রথম মা হয়েছিলেন।
১৯৮৭ সাল
এ বছর ছোট বোন সুজানের স্বামীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মজীবন শুরু করেন এমিলি ও র্যাচেল।
১৯৮৮ সাল
এ বছর সুজান (বাঁ থেকে দ্বিতীয়) পুত্রসন্তানের মা হন।
১৯৮৯ সাল
এ বছরটি ছিল চার টেইলর বোনের সবচেয়ে আনন্দের।
১৯৯০ সাল
শখ করে এ বছর বড় বোন এমিলির স্বামী তাঁদের ছবিটি তুলে দিয়েছিলেন।
১৯৯১ সাল
এ বছর র্যাচেল (বাঁ থেকে প্রথম) তাঁর অনেক দিনের প্রেমিক ও গণিতের শিক্ষককে বিয়ে করেন।
১৯৯২ সাল
এটি জ্যানেটের (বাঁ থেকে চতুর্থ) জন্য দুঃখের বছর। ১৯৯২ সালে তাঁর শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ে। চিকিৎসক জানিয়ে দেন, জ্যানেট আর বেশিদিন বাঁচবে না।
১৯৯৩ সাল
এ বছরটি জ্যানেট (বাঁ থেকে চতুর্থ) তাঁর ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকেন।
১৯৯৪ সাল
চিকিৎসাবিজ্ঞানকে ভুল প্রমাণ করে ১৯৯৪ সালে জ্যানেট (বাঁ থেকে চতুর্থ) ক্যানসারকে জয় করে সুস্থ হয়ে ওঠেন।
১৯৯৫ সাল
এ বছর চার বোন আবার একে অপরের সঙ্গে সুন্দর সময় পার করেন।
১৯৯৬ সাল
এ বছর সুজানের (বাঁ থেকে তৃতীয়) স্বামীর ব্যবসায় সবচেয়ে বেশি লাভ করে।
১৯৯৭ সাল
এ বছর চার বোন মিলে একটি খামার প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৯৮ সাল
১৯৯৮ সালে ব্যবসায় তাঁদের অনেক মুনাফা হয়।
১৯৯৯ সাল
এ বছর চার বোন তাঁদের ছবি তোলার ২০ বছর পূর্তি পালন করেন। এ বছর থেকে তাঁদের সন্তানদেরও ছবি তোলা শুরু করেন।
২০০০ সাল
অনেক সুখ ও দুঃখের মধ্যেও তাঁরা একত্র থাকার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন।
২০০১ সাল
তাঁদের সন্তানরা বড় হতে শুরু করে।
২০০২ সাল
তাঁদের প্রতিষ্ঠিত খামারটি জনপ্রিয় হতে শুরু করে।
২০০৩ সাল
তাঁরা তাঁদের ব্যবসায়ের মুনাফা দুস্থদের মধ্যে বিতরণ শুরু করেন।
২০০৪ সাল
এ বছর তাঁরা প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য একটি ডে-কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন।
২০০৫ সাল
তাঁদের প্রতিষ্ঠিত ডে-কেয়ার সেন্টারটি টেক্সাসের সেরা ডে-কেয়ার সেন্টার হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করে।
২০০৬ সাল
তাঁদের বয়স বাড়তে থাকে এবং সময়ের পরিক্রমায় সম্পর্কে দূরত্ব বেড়ে যায়।
২০০৭ সাল
তাঁদের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানে ৩০০ শিশু বড় হতে থাকে।
২০০৮ সাল
বার্ধক্য ও শারীরিক অসুস্থতার জন্য ২০০৮ সালে জ্যানেট (বাঁ থেকে প্রথম) দুর্বল হয়ে পড়েন।
২০০৯ সাল
এ বছর তাঁদের প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করে সরকার।
২০১০ সাল
তাঁদের প্রতিষ্ঠানের সাফল্য দেখে সন্তানরাও জনসেবার প্রতি আগ্রহী হয়।
২০১১ সাল
এমিলি (প্রথম থেকে চতুর্থ) এই বছর প্রথমবার নানি হন। এমিলির বড় কন্যা এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেয়।
২০১২ সাল
৮২ বছর বয়সী সুজান (বাঁ থেকে তৃতীয়) এ বছর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থতার কারণে তিনি ধীরে ধীরে বুদ্ধিবৈকল্য হয়ে পড়েন।
২০১৩ সাল
এটাই তাঁদের একত্রে শেষ ছবি। এ বছরই সুজান ৮৩ বছর বয়সে মারা যান।