খালি হাজারো হোটেল, খোলা আকাশের নিচে রাত কাটছে শতাধিক গৃহহীনের
বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাস বেশ তীব্রভাবেই জাঁকিয়ে বসেছে যুক্তরাষ্ট্রে। ভাইরাসজনিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় মার্কিন অঙ্গরাজ্যগুলো নিচ্ছে নানা পদক্ষেপ। এরই মধ্যে খোলা আকাশের নিচে, গাড়ি পার্ক করার স্থানকে গৃহহীনদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়স্থল বানিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে নেভাডা অঙ্গরাজ্যের বিলাসবহুল শহর লাস ভেগাস।
লাস ভেগাসের গৃহহীনদের কাছে ক্যাথলিক দাতব্য সংস্থা প্রিয় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি ওই দাতব্য কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া এক গৃহহীন ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপরই গাড়ি পার্ক করার স্থানে গৃহহীনদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে লাস ভেগাস প্রশাসন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দি ইনডিপেন্ডেন্ট এ খবর জানিয়েছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ক্যাথলিক দাতব্য সংস্থা গৃহহীনদের জন্য দুয়ার বন্ধ করে দিলে, লাস ভেগাসের প্রায় ৫০০ গৃহহীন হন্যে হয়ে থাকার জায়গা খুঁজতে থাকেন। এর পাশাপাশি, গৃহহীনদের জন্য শহরের আরেক আশ্রয়স্থল কোর্টইয়ার্ড হোমলেস রিসোর্স সেন্টারের ধারণক্ষমতাও পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন শহরের বাস্তুহারা মানুষ।
এই যখন পরিস্থিতি, তখন শহরের অজস্র খালি হোটেল ও ক্যাসিনো বাদ দিয়ে ক্যাশমান সেন্টারের পার্কিং লট বা গাড়ি রাখার স্থানে, খোলা আকাশের নিচে গৃহহীনদের থাকতে দেয় শহর কর্তৃপক্ষ।
ওই পার্কিং লটের কংক্রিটের মেঝেতেই এখন থাকছেন ১১৭ জন গৃহহীন মানুষ। তবে করোনাভাইরাসজনিত সুরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে সামাজিক বিচ্ছিন্নকরণ বা সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে ছয় ফুট দূরে দূরে বক্স এঁকে দিয়েছে প্রশাসন। ওই পার্কিং লট কনভেনশন সেন্টার বা খেলাধুলার স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। স্থানীয় শিক্ষার্থীরা ২৪ হাজার বর্গফুট জায়গাটি গালিচায় ঢেকে দিয়েছিল। কিন্তু গৃহহীনদের জন্য শেষ পর্যন্ত তাও মেলেনি।
প্রথম রাতে ওই পার্কিং লটে ৬৬ জন গৃহহীন ব্যক্তি ঘুমিয়েছিলেন। কিন্তু এরপরই টনক নড়ে প্রশাসনের। নিয়মিত অতবড় কার্পেট জীবাণুমুক্ত ও পরিষ্কার করাটা প্রশাসনের কাছে ঝক্কির কাজ বলে মনে হয়। তাই পার্কিং লটের কার্পেট সরিয়ে ফেলে প্রশাসন।
এ বিষয়ে লাস ভেগাসের যোগাযোগ বিষয়ক পরিচালক ডেভিড রিগলম্যান বলেন, ‘ওই জায়গার কার্পেট জীবাণুমুক্ত ও পরিষ্কার করা খুব কঠিন কাজ। আমরা চেয়েছিলাম গৃহহীনদের ঘুমানোর জন্য মাদুরের ব্যবস্থা করতে। কোর্টইয়ার্ডে যেমন করা হয়ে থাকে, সেরকম। ওগুলো সহজেই জীবাণুমুক্ত করা যায়। কিন্তু প্রয়োজনীয় মাদুর পাওয়া যায়নি।’
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কংক্রিটের ওপর শুয়ে থাকা গৃহহীনদের ছবি ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি। এসব ছবি দেখে ব্যাপক নিন্দা জানাচ্ছেন নেটিজেনরা।