করোনাভাইরাসজনিত রোগের নাম ‘কোভিড-নাইনটিন’
চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসজনিত রোগের আনুষ্ঠানিক বৈজ্ঞানিক নাম ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ডব্লিউএইচওর সদর দপ্তরে গতকাল মঙ্গলবার সংস্থার প্রধান টেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এই রোগের নাম পেয়েছি, আর তা হচ্ছে সিওভিআইডি-১৯ বা কোভিড-নাইনটিন।’
চীনে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আগামী এপ্রিল নাগাদ শেষ হতে পারে বলে গতকাল মঙ্গলবার জানিয়েছেন দেশটির জ্যেষ্ঠ স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। এরই মধ্যে করোনাভাইরাসে প্রাণহানি হয়েছে সহস্রাধিক মানুষের। এমন পরিস্থিতিতে এই ভাইরাসকে সন্ত্রাসবাদের চেয়ে বাজে ধরনের বৈশ্বিক হুমকি বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ডব্লিউএইচও।
মরণঘাতী ভাইরাসটির প্রতিষেধক আসতে আরো দেড় বছর লাগবে উল্লেখ করে ডব্লিউএইচওর প্রধান টেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বিশ্বকে অবশ্যই ‘সজাগ হতে হবে এবং এই শত্রু ভাইরাসকে জনমানবের এক নম্বর শত্রু বিবেচনা করতে হবে’। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
এ ছাড়া ১৮ মাসের মধ্যে এই রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কারের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, চীন ছাড়াও বিশ্বের অন্য দেশগুলোর জন্য করোনাভাইরাস গুরুতর হুমকি।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে চীনে মৃতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানায়, এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৪২ হাজার ৬৩৮ জন। আর চব্বিশ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার বেইজিংয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে হাসপাতালে গিয়ে দেখা করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
করোনার আঁতুড়ঘর চীনের হুবেই প্রদেশে গত সোমবার একদিনে সর্বাধিক মানুষের মৃত্যুর পর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তবে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা আগের থেকে কিছুটা কমেছে।
চীনে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ার পর গত সোমবার প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে দেখা গেছে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে। তিনি ওই দিন বেইজিংয়ের কয়েকটি হাসপাতাল পরিদর্শন করেন এবং নিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। এ সময় করোনাভাইরাসের সংকট মোকাবিলায় আরো দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
করোনায় সতর্কতা জারি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, চীনের বাইরে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাগুলো খুবই উদ্বেগের। এই মহামারিকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে দেওয়া যাবে না বলেও জানায় সংস্থাটি। এ ছাড়া গত সোমবার জানানো হয়েছে, ডব্লিউএইচওর একটি অনুসন্ধানকারী দল চীনে পৌঁছেছে। পরবর্তী সময়ে আরো একটি বড় দল সেখানে যাবে।
ডব্লিউএইচওর প্রধান টেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস বলেন, ‘এখনকার পরিস্থিতি পানিতে ডুবে থাকা কোনো বরফের চাঁইয়ের চূড়ার মতো। আরো মারাত্মক পরিস্থিতি হয়তো আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। একটি ক্রমবর্ধমান জনস্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থার জন্য সব দেশকে করোনাভাইরাসের জন্য তৈরি থাকতে হবে। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা ধীরগতিতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু নির্দেশিকা না মানলে ভাইরাসটি জয়ী হবে।’
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস আতঙ্কে জরুরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সংস্থাটি জানিয়েছে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার ইইউ স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ওই বৈঠকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন প্রতিনিধিও থাকবেন।