এপ্রিল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন মৃত্যু হতে পারে ২৩০০ জনের
কঠোরভাবে ‘সামাজিক দূরত্বের’ (সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং) বিধিনিষেধ মেনে চললেও যুক্তরাষ্ট্রে আগামী চার মাসে মৃত্যু হতে পারে অন্তত ৮০ হাজার মানুষের। দেশটিতে আগামী এপ্রিল নাগাদ প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার ৩০০ জনের মৃত্যু হতে পারে। আর এ জন্য এপ্রিলেই হাসপাতালগুলো চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের হেলথ মেট্রিক্স এবং ইভ্যলুয়েশন ইনস্টিটিউটের (আইএইচএমই) করা এক গবেষণায় এমন ধারণা দেওয়া হয়েছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসি আজ শুক্রবার এ খবর জানিয়েছে।
এ অনুমানের ক্ষেত্রে আইএইচএমই হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও মৃত্যুর হার, রোগীদের বয়স, লিঙ্গ পরিচয় ও আগে রোগীদের কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা ছিল কি না, সেগুলো বিবেচনায় নিয়েছে।
এ ছাড়া প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ব্যবস্থা ও ভেন্টিলেটরের সংখ্যা বিবেচনায় এনেছে আইএইচএমই। অনুমানে বলা হয়েছে, এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুর দিকে আইসিইউ ও ভেন্টিলেটরের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। ফলে চাহিদা মেটানো কঠিন হয়ে পড়বে।
আইএইচএমইর পরিচালক ক্রিস্টোফার মারে বলেছেন, ‘কোভিড-১৯-এ মৃত্যুর সংখ্যা অনুমানের ক্ষেত্রে আমরা ধরে নিয়েছি জনসাধারণ, স্বাস্থ্যকর্মী ও সরকারি সংস্থাগুলো নিয়মিত ও নিরবচ্ছিন্নভাবে সতর্কতা অবলম্বন করছেন। এর ভিত্তিতেই আমরা মৃতের সংখ্যা কত হতে পারে, তা অনুমান করেছি।’
মারে আরো বলেন, ‘যদি মানুষ সতর্ক না হয় এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখে, তাহলে এ মহামারি আরো বিস্তার লাভ করতে পারে।’
এরই মধ্যে সারা বিশ্বের এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি মানুষ নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। আক্রান্তের সংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে গেছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রে সাড়ে ৮৫ হাজারের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত।
জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চীনে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ৭৮২ জন। এরপরই আছে ইতালি, সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৮০ হাজারের বেশি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
তবে করোনায় সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে ইতালিতে। দেশটিতে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা আট হাজার ২১৫ জন। আর যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে প্রায় এক হাজার ৩০০ জন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ‘বেশ শিগগিরই’ তাঁর দেশ সচল অবস্থায় চলে আসবে। ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের পরই আক্রান্তের সংখ্যায় সব দেশকে ছাড়িয়ে গেল যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যার বিষয়টি গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকেলে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের নজরে আনা হলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা বেশি শনাক্তকরণ পরীক্ষা করছি, এ কারণেই সংখ্যাটি এমন।’
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স জানান, যুক্তরাষ্ট্রে ৫০টি অঙ্গরাজ্যেই করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষা চলছে। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ লাখ ৫২ হাজারের বেশি মানুষের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
এদিকে চীনে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘চীনে আক্রান্তের সংখ্যা যে কত, তা আপনারা জানেন না।’
মার্কিন অঙ্গরাজ্যগুলোর গভর্নরদের কাছে ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ‘সামাজিক দূরত্ব’ (সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং) বিষয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। ওই চিঠিতে ট্রাম্প জানান, সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং নিয়ে একটি নির্দেশনা প্রকাশের পরিকল্পনা করা হচ্ছে, তাতে কিছু অঞ্চলে কড়াকড়ি শিথিলের পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।
ট্রাম্প চিঠিতে আরো জানান, ‘দীর্ঘদিনের জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে হবে’ এবং ‘ব্যাপক হারে’ শনাক্তকরণ পরীক্ষা করা হবে। এর ফলে কিছু কাউন্টিতে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা ব্যবস্থা তুলে নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।
এ ছাড়া ট্রাম্প আরো বলেন, ‘নতুন নির্দেশনার’ ফলে ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী মৃদু, মাঝারি ও উচ্চ—এ তিন ধরনের অঞ্চল চিহ্নিত করা যাবে। সে অনুযায়ী কী ধরনের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং অন্যান্য কী কী সুরক্ষা ব্যবস্থা নিতে হবে, সরকারের পক্ষে থেকে সে পরামর্শ দেওয়া সম্ভব হবে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ১৯৯ জনে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ লাখ ৩৮ হাজার ১৮৫ জন। এ ছাড়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এক লাখ ২৪ হাজার ৮৮ জন। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বার্তা সংস্থা বিএনও নিউজ এ খবর জানিয়েছে।