ইলন মাস্ক : বাস্তবের ‘আয়রনম্যান’
আধুনিক প্রযুক্তি ও অতিকায় করপোরেট জগতে ইলন মাস্কের মতো প্রশংসনীয় ব্যক্তির খোঁজ সচরাচর পাওয়া যায় না। বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা ও জ্বালানি নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান টেসলা ও বেসরকারি মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্সের বদৌলতে ইলন মাস্ক বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছেন। তবে জেনে অবাক হবেন, টেসলা ও স্পেসএক্সের বাইরেও মাস্কের আরো কিছু চমকপ্রদ উদ্যোগ রয়েছে। ব্যবসায়ী হিসেবে অসাধারণ সাফল্য ছাড়াও ইলন মাস্ক বর্তমান প্রজন্মের তরুণদের কাছে এক আইকনে পরিণত হয়েছেন।
বার্তা সংস্থা ইউএনবির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে আধুনিক প্রযুক্তি বিশ্বের রাজপুত্র ইলন মাস্ক সম্পর্কে কিছু কৌতূহলোদ্দীপক তথ্য।
১. যদিও ইলন মাস্ক খ্যাতি অর্জন করেছেন টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে; কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি অর্থ আদান-প্রদানের জনপ্রিয় মাধ্যম পেপ্যালেরও সহপ্রতিষ্ঠাতা।
২. বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো হয়েছে ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্স কোম্পানির মাধ্যমে।
৩. অভিনেতা টনি স্টার্ক হয়তো রুপালি পর্দার ‘আয়রনম্যান’, কিন্তু বাস্তব জীবনে এ খেতাবের আসল হকদার ইলন মাস্ক। ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্স কোম্পানিতে ‘আয়রনম্যান-২’ চলচ্চিত্রের চিত্রধারণ করা হয়েছিল। মজার ব্যাপার হলো, চলচ্চিত্রটিতে ইলন মাস্ককে অল্প সময়ের জন্য অতিথি চরিত্রেও দেখা গিয়েছিল।
৪. অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, ধনকুবের ইলন মাস্ক তাঁর নিজের কোম্পানিতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে কাজের জন্য বছরে পারিশ্রমিক গ্রহণ করেন মাত্র এক ডলার। তাহলে কীভাবে তিনি এত সম্পদের মালিক হলেন? ইলন মাস্ক তাঁর মালিকানাধীন অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান থেকে লভ্যাংশ পান। আসলে এক ডলার পারিশ্রমিক নেওয়া সিলিকন ভ্যালির এক সুপরিচিত ঐতিহ্য। সেখানকার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইওরা সরাসরি বেতন নেওয়ার পরিবর্তে লভ্যাংশ ও অন্যান্য খাত থেকে আর্থিক সুবিধা নেন। উদাহরণ হিসেবে স্টিভ জবস ও মার্ক জাকারবার্গের কথা বলা যায়।
৫. ইলন মাস্ক প্রোগ্রামিং শেখেন মাত্র ১২ বছর বয়সে। নিজেই একটি ভিডিও গেম বানান। তার চেয়েও অবাক করা ব্যাপার হলো, গেমটি তিনি ৫০০ ডলারে বিক্রিও করে দেন।
৬. ইলন মাস্ক তাঁর মাতৃভূমি দক্ষিণ আফ্রিকা ছেড়ে ১৭ বছর বয়সে কানাডায় আসেন। পরে তিনি ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ায় ভর্তি হন।
৭. বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকা, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব রয়েছে ইলন মাস্কের।
৮. স্নাতক হওয়ার পর ইলন মাস্ক বিখ্যাত স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তরে পড়াশোনা শুরু করেন। কিন্তু বিনিয়োগকারী হওয়ার অদম্য বাসনার কারণে, মাত্র দুই দিন ক্লাস করার পরই কোর্স ছেড়ে দেন।
৯. তিনি ১৯৯৯ সালে তাঁর প্রথম কোম্পানি জিপিটু বিক্রি করেন ৩০ কোটি ৭০ লাখ ডলারে।
১০. ইলন মাস্ক বর্তমানে তাঁর বৈদ্যুতিক গাড়ির কোম্পানি টেসলায় সিইও ও চিফ প্রোডাক্ট আর্কিটেক্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
১১. ইলন মাস্ক প্রতিষ্ঠিত স্পেসএক্স কোম্পানির বদৌলতে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে উৎক্ষেপণ খরচ ৯০ শতাংশ কমে এসেছে।
১২. ইলন মাস্কের হাইপারলুপ প্রকল্পের লক্ষ্য হলো প্রায় বায়ুশূন্য টিউবের মধ্য দিয়ে উচ্চগতির ক্যাপসুল চলাচল উদ্ভাবন, যা মানুষের ভ্রমণের গতিকে আরো বাড়িয়ে দেবে।
১৩. হাইপারলুপ প্রকল্পের জন্য ভূগর্ভস্থ পথ নির্মাণের লক্ষ্যে মাস্ক ‘দ্য বোরিং কোম্পানি (টিবিসি)’ নামে আরেকটি কোম্পানি গঠন করেছেন।
১৪. ইলন মাস্ক প্রতিষ্ঠিত ২০১৬ সালের একটি কোম্পানি হলো নিউরোলস্কি। বর্তমানে এ কোম্পানি মস্তিষ্কের সঙ্গে যন্ত্রের একটি সংযোগ উদ্ভাবন করেছে, যা মানুষের মস্তিষ্ককে কম্পিউটার ও মোবাইল প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত করবে।
১৫. ইলন মাস্কের কোম্পানি টেসলা ইনকরপোরেশন সম্প্রতি নিয়ে এসেছে সাইবারট্রাক। বৈদ্যুতিক ব্যাটারিচালিত এ যানটি জীবাশ্ম জ্বালানিতে চলা ট্রাকের এক সবুজ বিকল্প। এর তিনটি মডেলের পাল্লা ৪০০ থেকে ৮০০ কিলোমিটারের মধ্যে এবং ২.৯ থেকে সাড়ে ৬ সেকেন্ডের মধ্যে এগুলোর ঘণ্টাপ্রতি গতি গিয়ে পৌঁছায় শূন্য থেকে ৬০ কিলোমিটারে।
দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, কঠোর পরিশ্রমী ও মেধাবী ইলন মাস্কের দূরদর্শী ভাবনা এ পৃথিবীকে বসবাসের জন্য আরো উপযোগী করে তুলবে।