‘আত্মীয় নীতি’র নামে চীনে নজরবন্দি উইঘুরসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়
শিনজিয়াংয়ে উইঘুরসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণে চীনের একটি বড় হাতিয়ার হলো ‘আত্মীয়-স্বজন নীতি’ বা ‘রিলেটিভস পলিসি’। কিন্তু, এই নীতির আওতায় জনসাধারণের মধ্যে সমন্বয়ের উদ্দেশ্যে পাঠানো প্রতিনিধিরা রীতিমতো ক্যাডার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তারা আত্মীয়তার বন্ধন সৃষ্টির নামে মূলত এসব জনসাধারণকে নজরদারিতে রাখে বলে অভিযোগ রয়েছে। দ্য সিঙ্গাপুর পোস্ট এ খবর জানিয়েছে।
চীনের গণমাধ্যমগুলোয় ‘আত্মীয় নীতি’কে ঘরে থাকা কর্মসূচির সুন্দর চিত্র হিসেবে দেখিয়ে নাগরিক সেবা ও শিক্ষা—এ দুইয়ের মিশ্রণ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। তবে শিনজিয়াং থেকে পালিয়ে যাওয়া অনেকেই বলেছেন পরিবারগুলো একে অপরকে ‘আত্মীয়’ হিসেবে উল্লেখ করলেও তারা মূলত জিম্মি।
ওরুমকুর উইঘুর সম্প্রদায়ের সদস্য জুমরাত দাউত শিনজিয়াংয়ে মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন থেকে বাঁচতে ২০১৯ সালে চীন থেকে পালিয়ে যান। তিনি বলেন, লোকজনকে নিজেদের সুখী দেখানোর অভিনয় করতে হয়, অন্যথায় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হবে যে তারা ‘রিলেটিভস পলিসির’ বিরুদ্ধাচরণ করছে। এই উইঘুর নারী আরও বলেন, কর্তৃপক্ষের প্রতিটি পরিদর্শনে তাঁর বাড়িতে চারজন কর্মকর্তাকে আপ্যায়ন করতে হতো। তিনি এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, ‘যেহেতু আমার স্বামী বিদেশি, তাই তাঁকে কোনো আত্মীয়ের সঙ্গে জুটি বাঁধতে বাধ্য করা হয়নি। কিন্তু আমি ও আমার তিন সন্তানের প্রত্যেকের একজন করে আত্মীয় রয়েছে।’
জুমরাত দাউত আরও বলেন, তাঁর জন্য নিযুক্ত ক্যাডার ঘরের মধ্যেও সবসময় তাঁকে অনুসরণ করতো। নানা ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতো। এবং তিনি আশঙ্কা করছিলেন যে, তাঁকে পুনরায় চীনের বিশাল আটক কেন্দ্রের নেটওয়ার্কের মধ্যে বন্দি করা হতে পারে।
চীন সরকার পরবর্তী সময়ে দাউতকে একজন অভিনেত্রী ও মিথ্যেবাদী হিসেবে উল্লেখ করেছে। মূলত যেসব উইঘুর বিদেশে চলে যায় এবং শিনজিয়াংয়ের ঘটনাগুলো বাইরে প্রকাশ করে, তাদের সচরাচর এভাবেই দেখানো হয়ে থাকে।
একটি অন্তবর্তীকালীন ক্যাম্পের সাবেক শিক্ষক কুয়েলবিনার সিদিক বলেন, ২০১৭ সালের মে মাসে তাঁকে প্রথম ক্যাডার রাখতে বলা হয়েছিল। এই ক্যাডার ছিল তাঁর স্বামীর কর্মস্থল রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানার মালিক।
কুয়েলবিনার সিদিক বলেন, ‘সে আমাকে তার সঙ্গে বসতে বলতো, ওয়াইন পান করতে বলতো। আমি তাকে জোর না করার অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু সে যখন মাতাল হতো, তখন তার সঙ্গে শুতে বলতো।’
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমগুলো এই কর্মসূচিকে দুটি স্লোগানের মাধ্যমে প্রচার করতো। একটি হলো- ‘চারটি একসঙ্গে’—যারা একসঙ্গে খাবে, বাস করবে, পড়াশোনা করবে এবং কাজ করবে। আরেকটি স্লোগান হচ্ছে ক্যাডারদের মাধ্যমে আইন, নীতিমালা ও সহমর্মিতার বার্তা পাঠানো।
অধ্যাপক টিমোথি গ্রস এ প্রসঙ্গে বলেন, মানবিক বুদ্ধিমত্তা একত্রিত করা এবং নজরদারির উদ্দেশ্যেই এসব কর্মসূচি পরিচালনা করা হয়।
ইউনিভার্সিটি অব নটিংহামের অধ্যাপক থাম বলেন, এই কর্মসূচিটি মূলত পর্যবেক্ষণমূলক প্রকল্প। এই পদ্ধতির কারণে তারা নিজেদের বাড়ির মধ্যেই প্রতিটি দৃষ্টিকোণ থেকেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণের মধ্যে থাকে।