অযোধ্যা মামলার রায় ঘোষণা আজ
আজ শনিবার ভারতের বিতর্কিত অযোধ্যা মামলার রায় ঘোষণা হবে। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করবেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ভারতের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অযোধ্যা জমি মামলার এই রায়। এক শতাব্দীর পুরোনো মামলা অযোধ্যা। চূড়ান্ত পর্বে টানা ৪০ দিন ধরে চলেছে শুনানি।
দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে চলেছে জোরালো সওয়াল। অযোধ্যা জমি মামলার চূড়ান্ত শুনানির জন্য, জানুয়ারি মাসে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করেন সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের সঙ্গে ছিলেন বিচারপতি অশোক ভূষণ, ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, এসএ বোবদে ও এস আবদুল নাজির। সওয়াল-জবাব শুরুর আগে আদালতের বাইরে অযোধ্য মামলা মীমাংসার জন্য আরো একবার চেষ্টা করে শীর্ষ আদালত।
গত ৮ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এফ.এম ইব্রাহিম কলিফুল্লাহ, আধ্যাত্মিক গুরু শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর ও আইনজীবী শ্রীরাম পঞ্চুকে নিয়ে মধ্যস্থতা প্যানেল তৈরি করা হয়। দু’পক্ষের আলোচনায় মধ্যস্থতার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় ২ আগস্ট শীর্ষ আদালত জানান, ৬ অগাস্ট থেকে মামলার নিয়মিত শুনানি হবে। ১৬ সেপ্টেম্বর, মধ্যস্থতাকারী প্যানেল ফের আলোচনা শুরুর কথা বললে, সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, আদালতের বাইরে মীমাংসার চেষ্টা চলতেই পারে। তবে, এজন্য শুনানি বন্ধ রাখা হবে না।
৪০ দিন টানা শুনানির শেষে চলতি বছরের ১৬ অক্টোবর রায় ঘোষণা স্থগিত রাখেন শীর্ষ আদালত। শুনানি পর্বে দুই পক্ষের আইনজীবীদের উত্তপ্ত সওয়াল জবাবে বারবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এজলাস। শুনানির শেষ দিনে হিন্দু মহাসভার পক্ষ থেকে আদালতে জমা পড়া ব্রিটিশ আমলে অযোধ্যার জমির নকশার কপি, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের আইনজীবী রাজীব ধাওয়ান ছিঁড়ে ফেলায় সে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়।
অযোধ্যার জমির অধিকার নিয়ে হিন্দু ও মুসলিম দু’পক্ষেরই নিজেদের মধ্যে বিবাদ রয়েছে। তবে, আদালতে দু’পক্ষের আইনজীবীরাই কয়েকটি সাধারণ যুক্তি পেশ করেন। হিন্দুদের দাবি, বাল্মীকি রচিত রামায়ণে অযোধ্যাই রামের জন্মস্থান। এই জমিতেই রামের জন্ম হয় বলে মানুষের যুগ যুগ ধরে বিশ্বাস। মুসলিম পক্ষের পাল্টা যুক্তি, বাল্মীকি রামায়ণের আইনি ভিত্তি নেই। আদালতে কীভাবে প্রমাণ করা যাবে যে এটাই রামের জন্মস্থান?
অন্যদিকে, হিন্দুপক্ষ দাবি করে, অযোধ্যায় মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরি করা হয়। মুসলিম পক্ষের পাল্টা দাবি, বিতর্কিত জমিতে মন্দিরে প্রমাণ নেই। ১৮৮৫ সালে আদালত মন্দির নির্মাণের অনুমতি দেননি। পরে হিন্দুরা রাম জন্মভূমির দাবি তোলে। হিন্দুদের যুক্তি, এএসআইয়ের রিপোর্টে মন্দিরের অস্তিত্বের কথা বলা হয়েছে। শিব, পদ্ম ও হনুমানের যে প্রতিকৃতি পাওয়া গেছে, তা প্রমাণ করে ওই জমিতে হিন্দু মন্দির ছিল।
মুসলিমদের দাবি ছিল, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তৈরি এএসআই রিপোর্টের বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি নেই। পদ্মফুলের প্রতিরূপ ইসলামেও দেখা যায়। বাবরের আত্মজীবনী বাবরনামায় অযোধ্যায় মসজিদের উল্লেখ নেই বলে আদালতে হিন্দুপক্ষ পালটা যুক্তি দেয়। মুসলিম পক্ষের আইনজীবীদের পাল্টা যুক্তি, বাবরনামার দ্বিতীয় ভাগের কিছু পাতা, বহু বছর আগে খোয়া যায়। সেখানে মসজিদের উল্লেখ ছিল। হিন্দুরা দাবি করে, অযোধ্যায় যে কাঠামো ছিল তা মসজিদের কাঠামো নয়। কারণ, সেখানে ওজু করার জায়গা ছিল না। মুসলিমদের দাবি, বিতর্কিত জমিতে নামাজ পড়া হত। নামাজের আগে ওজু করার জায়গাও ছিল। এলাকার দখল নেওয়ার জন্য, রাতের অন্ধকারে মসজিদে রাম মূর্তি ঢোকানো হয়।
সেই বিতর্কিত রাম মন্দির-বাবরি মসজিদ মামলার রায় আজ শনিবার ঘোষণা করতে যাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ অবসর নেওয়ার আগেই এই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে বলে শীর্ষ আদালত জানিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী আজ রায় ঘোষণা হতে চলেছে।
শনিবার অযোধ্যা মামলার রায় ঘোষণা হবে, এ কথা ঘোষণার পরই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি টুইট করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘অযোধ্যা মামলার রায় শনিবার সুপ্রিম কোর্ট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। কয়েক মাস ধরেই সুপ্রিমকোর্টে পরপর এই মামলায় শুনানি চলেছে। যা সারাদেশ উৎসাহের সঙ্গে নজর রেখেছিল। এরই মধ্যে সমাজের সর্বস্তরে ঐক্য বজায় রাখার যে কাজ চলেছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি আরো বলেন, ‘দেশের ন্যায়ালয়ের সম্মানকে উঁচুতে রাখতে সব পক্ষ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সব পক্ষই একসঙ্গে সৌহার্দ্যমূলক বাতাবরণ বজায় রাখতে চেষ্টা করেছেন। যা অবশ্যই প্রশংসা করার মতো। আদালতের রায় বেরোনোর পর এই অবস্থাই আমাদের সবাইকে বজায় রাখতে হবে। অযোধ্যা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের যে রায়ই সামনে আসুক, তা কারও হার বা জয় হবে না। দেশবাসীর কাছে আমার আবেদন, আমরা সবাই যেন এটা মনে রাখি যে এই রায় ভারতের শান্তি একতা ও সদ্ভাবকে আরো শক্তিশালী করবে।’