সিলেটের লালাখাল : স্বর্গোদ্যানে একদিন

Looks like you've blocked notifications!

ব্যস্ত নগরজীবনে কাজকর্মের চাপে যখন পিষ্ট হয়ে যাচ্ছেন, ঠিক তখনই কোথাও ঘুরে আসতে পারেন। তাই যান্ত্রিক জীবন থেকে মুক্তি ও শীতের আমেজকে একটু অন্যভাবে রাঙিয়ে তুলতে ঘুরে আসতে পারেন সিলেট থেকে।আর এ ক্ষেত্রে সিলেট অঞ্চল খুবই সমৃদ্ধ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি হিসেবে ৩৬০ আউলিয়ার পুণ্যভূমির খ্যাতি বিশ্বজোড়া।

এবার শীতে যারা সিলেট ঘুরতে যাচ্ছেন  তারা পুরো একটা দিন কাটিয়ে আসতে পারেন সিলেটের নীল নদে। জৈন্তাপুর উপজেলার লালাখালে এসে দেখতে পাবেন সারি নদীর জলরাশি মেঘমুক্ত আকাশের রং ধরেছে। দুই তীরে সবুজ পাহাড়, মাঝে সরু আঁকাবাঁকা নদীটিতে নৌকা ভ্রমণ বা তীর ধরে হাটতে হাটতে পুরো এলাকাটিকে স্বর্গোদ্যান বলে মনে হতে পারে আপনার কাছে। নীল আর সবুজে রীতিমতো মাখামাখি। এ ছাড়া আছে চা ও সুপারি বাগানের নয়ন জুড়ানো সৌন্দর্য। নৌবিহার শেষে লালাখাল চা বাগানে কাটাতে পারেন কিছু সময়। ঢুকতে পারেন চা শ্রমিকদের পাড়ায়। পিছিয়ে থাকা এই জনগোষ্ঠীর জীবনযাপন সম্পর্কে অর্জন করতে পারেন প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা।

সিলেট মহানগরী থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে জৈন্তাপুরের সারিঘাট। নদীর নামেই স্থানটির নামকরণ। ছোটখাটো এই বাজারের উত্তরপ্রান্তে ঘাটের অবস্থান। ওখানে পর্যটকদের অপেক্ষায় কয়েকটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা সবসময় দাঁড়িয়ে থাকে। সিরিয়াল অনুযায়ী নির্ধারিত একটিতে চড়ে শুরু করতে পারেন নৌবিহার। সারির বিখ্যাত বালু, স্বচ্ছ পানি আর পাহাড়ি জনপদ দেখতে দেখতে কিছু সময়ের মধ্যেই পৌঁছে যাবেন লালাখাল। নির্মাণকাজে ব্যবহারের জন্য এই নদীটির বালু কিন্তু বিখ্যাত। সিলেট অঞ্চলজুড়ে অত্যন্ত জনপ্রিয়। নদীর বুকে ছোট ছোট টিলার মতো দাঁড়িয়ে থাকা মাটি ও পাথর দ্বীপের মতোই মনে হয়। বাঁয়ে বিজিবি ক্যাম্প ছাড়িয়ে আরেকটু অগ্রসর হলে জিরোপয়েন্ট। এখান থেকে সুপারি বাগান ও ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের সৌন্দর্যও দারুণ উপভোগ্য। নদীর পূর্বতীরে খেয়াঘাটে আছে এক বিশাল বটবৃক্ষ। এর একটি শাখায় বসে কিছু সময় অনায়াসে জিরিয়ে নেওয়া যায়। গাছটি প্রাচীন। কেউ কেউ শতবর্ষীও বলেন। এরপর নিশ্চিন্তপুর বাজার পেরিয়ে উত্তর দিকে হাঁটতে হাঁটতে একসময় ঢুকে পড়বেন নাটমন্দির এলাকায়। চা-শ্রমিকদের পাড়াটা এখান থেকেই শুরু। ছোট রাস্তা দিয়ে পাড়ার ভেতর হাটতে হাটতে ডানে-বাঁয়ে তাদের বাসস্থানগুলোও মুগ্ধ করার মতো। বাড়িগুলোতে যেমন শোষণের চিহ্ন দেখবেন, তেমনি পরিচ্ছন্ন পরিবেশ জানান দেবে, রক্ত শোষণ হলেও তাদের রুচি এখনো শোষণমুক্ত। মানুষগুলোকে দেখেও তাই মনে হবে। পরে নদীর তীর ধরে উত্তর দিকে হাটলে মিনিট পাঁচেকের মধ্যে টিলার উপর লালাখাল চা বাগানের অফিস এবং মিনিট দশেকের মধ্যে বাগান।

নামকরণ প্রসঙ্গে

পূর্ব-দক্ষিণ দিক থেকে যে খালটি এসে সারি নদীর সাথে মিলিত হয়েছে, তার নাম লালাখাল। এই খালের নামেই স্থানটির নামকরণ। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে এমন ধারণাই পাওয়া গেল।

যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সড়ক রেল ও আকাশ, তিন পথেই সিলেট যাওয়া যায়। বাসে সায়দাবাদ বা ফকিরাপৃল থেকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কদমতলি যাওয়া যাবে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে। এখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ নিয়ে সারিঘাট যেতে খরচ পড়বে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। প্রাইভেট কার ও মিনিবাসে যাতায়াত খরচ পড়বে যথাক্রমে এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৫০০ ও এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা। সারিঘাট থেকে সড়ক ও নদী উভয় পথেই যাওয়া যায়। ইঞ্জিনচালিত নৌকায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ভ্রমণের জন্য উপজেলা প্রশাসনের নির্ধারিত ভাড়া এক হাজার ২০০ টাকা। অতিরিক্ত প্রতিঘণ্টায় আরো ২০০ টাকায় লালাখাল হয়ে জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত ঘুরে আসতে পারবেন। আবার সড়কপথে লালখাল পৌঁছে নৌকা ভাড়া নিলে ঘণ্টায় খরচ হবে ৬০০ টাকা। এ ছাড়া সিলেট নগরীর সুবহানীঘাট থেকে বাসে সারিঘাট যেতে খরচ হবে জনপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। সেখান থেকে অটোরিকশা রিজার্ভ নিয়ে গেলে খরচ পড়বে দেড়শ থেকে ২০০ টাকা। আর টমটমে গেলে ভাড়া মাত্র ১৫ থেকে ২০ টাকা।

রিভার কুইন ও স্পিডবোট

লালাখালে পর্যটকদের জন্য বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রিভারকুইন রেস্টুরেন্ট ও রিসোর্ট। নদীর কূলে দাঁড়িয়ে থাকা এই রেস্টুরেন্টে বসে পানাহার যেমন সারতে পারেন, তেমনি উত্তরের টিলায় রাতযাপনের ব্যবস্থাও আছে। খরচ অত্যন্ত চড়া। রিভার কুইনের কয়েকটি স্পিডবোটও আছে। ভাড়া প্রতি ৩০ মিনিট ৫০০ টাকা।

যেখানে থাকবেন

সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, দরগামহল্লা, মিরাবাজার, সুবহানীঘাট এলাকায় প্রচুর মানসম্পন্ন হোটেল আছে। এসব হোটেলে প্রতিদিনের জন্য থাকার খরচ পড়বে ২০০ থেকে ৬০০  টাকা। এ ছাড়া আছে বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল হোটেল।