ছুটির দিনে

সিলেটে ৭২০ টাকায় ওসমানী জাদুঘরে

Looks like you've blocked notifications!

মহান মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ বীরত্ব আর কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন মুহম্মদ আতাউল গনি ওসমানী, যাঁকে আমরা এমএজি ওসমানী নামে জানি। গত ১ সেপ্টেম্বর ছিল তাঁর জন্মশতবার্ষিকী। তাঁর পৈতৃক নিবাস সিলেটের ধোপাদীঘিরপাড়ে অবস্থিত নূর মঞ্জিলই আজকের ওসমানী জাদুঘর। আসছে ছুটির দিনগুলোতে আপনি সহজেই ঘুরে আসতে পারেন ওসমানী জাদুঘর থেকে। আর খরচের কথা ভাবছেন, মাত্র ৭২০ টাকা।

যা দেখবেন

জাদুঘরে পৌঁছানোর জন্য প্রধান গেট থেকে মাত্র কয়েক মিটার হাঁটতে হয়। প্রবেশকক্ষে দর্শনার্থীদের অভ্যর্থনা জানাতে জেনারেলের প্রতিকৃতি রয়েছে। সেখান থেকে ২০ টাকার বিনিময়ে প্রবেশ করতে হবে জাদুঘরে। এই জাদুঘরটিতে তিনটি গ্যালারি আছে। প্রথম গ্যালারিতে প্রবেশ করলে দেখতে পাবেন সম্পূর্ণ কক্ষটি নানা ধরনের শোপিস দিয়ে শয়নকক্ষের মতো করে সাজানো হয়েছে। বেতের তৈরি চারটি চেয়ার, দুটি কেন্দ্রীয় টেবিল, একটি সাধারণ ওয়ার্ডরোব এবং উভয় দিকে টেবিলসহ একটি কাঠের পালঙ্ক রয়েছে। জেনারেল ওসমানীর হাতঘড়ি, যা তিনি মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত পড়েছেন; সামরিক লাঠি, দুটি ব্রিফকেস, একটি টেলিফোন সেট, কিছু সংখ্যক বইপত্র এবং ব্যবহৃত মাটির বাসনপত্র একপাশে রয়েছে। অন্যপাশে একটি আলনা, যেটাতে দুটি স্যুট, দুটি ইউনিফর্ম (খাকি এবং গাঢ় সবুজ), দুটি শার্ট (সাদা ও ঈষৎ নীল), দুটি পাঞ্জাবি, বাদামি হাতাসহ একটি কোট, চার জোড়া জুতা, যার মধ্যে এক জোড়া হচ্ছে মিলিটারি বুট, একটি কালো ছাতা এবং পিঙ্গলবর্ণের সুসজ্জিত চলার লাঠি দিয়ে কক্ষটি সাজানো। একটি চক্রাকার টেবিল এবং কাঠের বইয়ের তাক আছে, যেটাতে ‘হোজ হো ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’সহ (সংস্করণ : ১৯৭৮-১৯৭৯ এবং ১৯৮০-১৯৮১) দেশি-বিদেশি বই ও ম্যাগাজিন এক কোনায় রয়েছে।

ওসমানীর অতিপ্রিয় পিতার কোলে ছবিসহ দেয়ালে একজন মানবসম প্রতিকৃতি রয়েছে, এমনকি প্রদর্শনের জন্য অনেক আলোকচিত্রও রয়েছে। এরপর গ্যালারি-২-এ বহু মূল্যবান এবং ঐতিহাসিক জিনিসপত্রসমেত তিনটি শোকেস রয়েছে। এর প্রথমটিতে জেনারেলের ব্যাজগুলো, পদক, পদমর্যাদা ক্রম এবং জেনারেল ওসমানীর পাসপোর্ট রয়েছে। দ্বিতীয়টিতে স্মারকচিহ্ন, স্মরণিকা ও ক্রেস্টগুলো রয়েছে। এবং তৃতীয় শোকেসে বহুসংখ্যক প্রমাণপত্র প্রদর্শন করা হয়, যেগুলোর মধ্যে স্বাধীনতা পুরস্কার-১৯৮৫ এবং এর নিমন্ত্রণপত্র, একই সঙ্গে পুরস্কার বিজেতার সংক্ষিপ্ত জীবনীও রয়েছে। একটি কার্ডে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অটোগ্রাফসংবলিত খাম রয়েছে, যা তিনি জেনারেল ওসমানীর কাছে প্রেরণ করেছিলেন। আটটি বিশাল চিত্রকর্ম ওপরের দেয়ালে টাঙানো আছে। কক্ষটির দেয়ালে অনেক ঐতিহাসিক ছবিও রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো—১৯৭২ সালে সিলেট বিমানবন্দরে অবতরণের পর, জেনারেল ওসমানী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে প্রত্যাবর্তনের পর আগমন উপলক্ষে ১০ মার্চ ১৯৭২ সালে সেনাবাহিনী কর্তৃক আয়োজিত সম্মান প্রদর্শন অনুষ্ঠানে দর্শকদের সামনে বক্তৃতা দিচ্ছেন, জেনারেল ওসমানী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদের সঙ্গে, মুজিবনগর সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সঙ্গে, বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সঙ্গে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে, বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের সঙ্গে, ১৯৮১ সালে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট কেন্দ্রে শহীদ পরিবারের সঙ্গে ইত্যাদি। গ্যালারি-৩-এ প্রবেশ করলে দেখতে পাবেন কালো বর্ণের একটি পড়ার টেবিল, চেয়ার, পালঙ্ক, নামাজের চৌকি, জায়নামাজ, নামাজের টুপি ইত্যাদি প্রদর্শনের জন্য নিখুঁতভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। অন্যান্য যেসব জিনিস আছে তার মধ্যে একটি কৃষ্ণকায় আলমারি, একটি ফ্রিজ, ছয়টি চেয়ারসহ একটি খাবার টেবিল, প্রাচীন চিনামাটির বাসনকোসন এবং অন্যান্য জিনিস উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন জেনারেলের ব্যবহৃত বাংলাদেশের অপারেশনাল মানচিত্রও (স্কেল ১ : ২,৫০,০০) প্রদর্শনের জন্য এই কামরায় রাখা হয়েছে, যেখানে সভ্য সমাজ কর্তৃক উপস্থাপিত বহু প্রমাণপত্রও রয়েছে।

কবে খোলা থাকে

ওসমানী জাদুঘর শুধু বৃহস্পতিবার ছাড়া বাকি দিনগুলোতে খোলা থাকে। রবি থেকে বুধবার পর্যন্ত এটি সকাল ১০টা ৩০ থেকে বিকেল ৫টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রবেশমূল্য ২০ টাকা।

যাবেন কীভাবে

ঢাকার সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল, রাজারবাগ ও মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রিনলাইন, শ্যামলী, এনা, হানিফ বা বিআরটিসি বাসে অথবা ট্রেনে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সকালে আন্তনগর পারাবাত, দুপুরে জয়ন্তিকা ও কালনী এবং রাতে উপবন সিলেটের পথে ছোটে, ভাড়া ৩২০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে । সেখান থেকে ধোপাদীঘিরপাড়া ওসমানী জাদুঘর রিকশায় ৪০ টাকা, সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।

ছবি : লেখক