মিষ্টি রোদে মেঘনার বুকে

শীতের মিষ্টি রোদে নদীতে ভেসে চলা। ভেসে ভেসে নদীর দুই পাশ দেখা। প্রকৃতি দেখা, নদীপাড়ের জীবন দেখা। মেঘনার বুকে ভেসে এমন সৌন্দর্যই উপভোগ করল প্রায় আড়াই হাজার যাত্রী। অংশীদার হলো দেশের প্রথম ভাসমান পর্যটন মেলার। বেসরকারি ট্যুর অপারেটর প্ল্যাটফর্ম বি ফিফটিনের আয়োজনে শুক্রবার দিনব্যাপী এই ভাসমান মেলার সহযোগিতায় ছিল বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ও পর্যটন বোর্ড।
বুড়িগঙ্গা পেরিয়ে ধলেশ্বরী, অতঃপর মেঘনা নদী, এই ভেসে চলার গন্তব্য। দেশের সবচেয়ে বড় লঞ্চ সুন্দরবন ১০-এ করে আড়াইহাজারেরও বেশি যাত্রী প্রথমবারের মতো অংশ নিলেন বাংলাদেশে পর্যটন আয়োজনের নতুন যাত্রায়।
১৫টি ট্যুর অপারেটরের যৌথ এই প্রচেষ্টায় ছিল পর্যটকদের জন্য নানা আনন্দ আয়োজন। শিশু-বৃদ্ধা সবাই শামিল হয়েছিল সেই আয়োজনে। তবে পর্যটকরা সবচেয়ে মুগ্ধ হয়েছে নদীর বিশালতা আর দুই পাড়ের প্রকৃতি দেখে।
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নোরার এটাই প্রথম নদী দেখা। আলাপে জানাল, ‘বেশ ভালো লাগছে। খোলামেলা বিশাল লঞ্চ, হাজারো মানুষ আর প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য। আর কি লাগে মুগ্ধ হতে!’
সায়েম, রেজাদের আটজনের গ্রুপ। সবাই গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। স্রেফ মজা করতেই আসা। জানালেন, অনেক রকম মানুষের ভিড়ে ভালোই লাগছে।
চারতলা লঞ্চের দ্বিতীয় তলায় বসেছিল ট্যুর অপারেটরদের পর্যটন মেলা। স্টলে তাঁরা বসেছিলেন নানা ধরনের ভ্রমণ অফার নিয়ে। পর্যটকরাও আগ্রহ নিয়ে ভিড় করেছিলেন স্টলে স্টলে।
এখানেই শিশুদের জন্য ছিল চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। শিশুরা এঁকেছে তাদের ইচ্ছেমতো। নদী, গাছ, হাতিসহ নানা বিষয় সাদা কাগজে ফুটে উঠেছে তাদের ছোট্ট হাতের তুলিতে। এর মাঝেই গজারিয়া ঘাটে লঞ্চটি থেমেছিল শুক্রবার জুমার নামাজের জন্য। নামাজ পড়ে সেখানকার ছোট্ট বাজারে ঢু মেরেছে অনেকেই। দুপুরের খাবারের আয়োজনটি ছিল ব্যুফে। বিকেল ৩টা নাগাদ লঞ্চ পৌঁছালো মেঘনার মোহনায়। দূরে দেখা যাচ্ছিল চাঁদপুর ঘাট। সেখান থেকেই লঞ্চ ঘুরল। এবার গন্তব্য ঢাকা।
দিনব্যাপী ছিল সাংস্কৃতিক আয়োজন। সুরের মূর্ছনায় দারুণ ছিল সময়গুলো। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান অপরূপ চৌধুরী জানালেন, ‘এই উদ্যোগ দেশের পর্যটনে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। আমরা নানা ধরনের কর্মসূচি নিয়েছি। নদী ট্যুরিজমের মতোই ইকো ট্যুরিজম চালু করছি। সন্ধ্যায় আনন্দ দ্বিগুণ হয়েছে র্যাফল ড্রতে। প্রায় ৪০টি পুরস্কার জিতেছেন যাত্রীরা। তাতে ঢাকা-কক্সবাজার গ্রীন লাইনের টিকেট যেমন ছিল, তেমনি ছিল ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপ ভ্রমণ।
সন্ধ্যা পেরিয়ে ঢাকায় ফিরল লঞ্চ। আর যাত্রীরা ফিরলেন গল্প করার মতো চমৎকার এক অনুভূতি নিয়ে।