হংকং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠেয় ৫৭তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে দারুণ সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড দেশের জন্য এ যাবৎকালের সেরা অর্জন নিয়ে এলো। বাংলাদেশের ছয়জনের দলটি একটি রৌপ্য, চারটি ব্রোঞ্জ ও একটি অনারারি স্থান পেয়েছে।

বাংলাদেশ দলের সদস্যদের মধ্যে আসিফ-ই-এলাহী-২৮ নম্বর (রৌপ্যপদক), আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী-২১ নম্বর (ব্রোঞ্জপদক), সাব্বির রহমান-১৯ নম্বর (ব্রোঞ্জপদক), সাজিদ আকতার তূর্য-১৬ নম্বর (ব্রোঞ্জপদক), নাঈমুল ইসলাম-১৫ নম্বর (অনারেবল মেনশন) ও সানজিদ আনোয়ার-১৩ নম্বর (অনারেবল মেনশন) পেয়েছেন। 

প্রতিযোগিতায় ১১৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৩৩তম স্থান দখল করেছে। আর ৯৭ নম্বর পেয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অবস্থান ৩৭তম। ১৮৫ নম্বর পেয়ে শীর্ষস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর যথাক্রমে চীন, উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া।

বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড দলের কোচ ড. মাহবুব মজুমদার ৫ জুলাই হংকংয়ের উদ্দেশে রওনা দেন এবং উপদলনেতা বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান এই ছয় শিক্ষার্থীকে সঙ্গে নিয়ে হংকংয়ের উদ্দেশে রওনা দেন ৮ জুলাই রাতে।

গত ১০ জুলাই উদ্বোধনী পর্বের মাধ্যমে শুরু হয় ৫৭তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড। ১২ জুলাই রাতে সমাপনী অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের বিচারকরা ফলাফল ঘোষণা করেন।  

প্রতিযোগিতা সম্পর্কে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান বলেন, ‘অভিনন্দন বাংলাদেশ গণিত দল। মাত্র এক নম্বরের জন্য আসিফের সোনা আর এক নম্বরের জন্য জাওয়াদের রূপা হলো না।’

বাংলাদেশ দলের কোচ ও দলনেতা মাহবুব জামান আরো ভালো ফলাফলের আশা করেছিলেন। এক নম্বরের জন্য আসিফের স্বর্ণপদক ও এক নম্বরের জন্য জাওয়াদের রৌপ্যপদক হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন তিনিও।

বিভিন্ন দেশের উপদলনেতারা বাংলাদেশের অনেক প্রশংসা করেছেন। তাঁদের বক্তব্য হলো, বাংলাদেশ ধীরে ধীরে উন্নতি করছে যা অনেক দেশই পারেনি।

বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলেন, ‘বাংলাদেশের র‍্যাংকিং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সেরা, যা আমাদের সেরা অর্জন এমনকি ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার চেয়েও ভালো। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির উদ্যোগে তৃণমূল পর্যায় থেকে প্রতিভা নির্বাচিত করতে পারছি। আমি দলের প্রতিটি সদস্য ও কোচকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।’

বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি খুব খুশি হয়েছি কিন্তু বিস্মিত হইনি। আমি জানি আমাদের নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা ভালো সুযোগ পেলে ভালো করবেই। আমরা শুধু অনুপ্রেরণা ছাড়া ওদের কিছুই দিতে পারিনি, কিন্তু ওরা আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে।’

বাংলাদেশের দলকে অভিনন্দন জানান ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আগামী বছর বাংলাদেশ দল স্বর্ণপদক নিয়ে আসবে ও ডাচ-বাংলা ব্যাংক ভবিষ্যতেও দলের পাশে থাকবে।

গত ১১ বছরে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ গণিত দল এ পর্যন্ত তিনটি রৌপ্যপদক, ১৪ ব্রোঞ্জপদক ও ২১টি সম্মানজনক স্বীকৃতি অর্জন করেছে। 

ডাচ-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও দৈনিক প্রথম আলোর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সারা দেশে গণিত উৎসব আয়োজনের মাধ্যমে ৫৭তম আইএমওর জন্য ছয়জনের বাংলাদেশ গণিত দল নির্বাচিত হয়। নির্বাচন ও এর আনুষঙ্গিক আয়োজন করেছে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।

আগামী বছরের আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের জন্য প্রতিযোগী নির্বাচন প্রক্রিয়া এ বছরের ডিসেম্বরে শুরু হবে।