অফিসে বসে গেম, উৎসাহ দেবেন বস?
অফিসে বসে ভিডিও গেম খেললে তো বসের বকা খেতেই হবে! এ আর নতুন কি! তবে গেম খেলা মানে সময় নষ্ট, অফিসের কাজে ফাঁকি দেওয়া- এই ধারণা কিন্তু পাল্টে যাচ্ছে। বরং উল্টোটাই হতে চলেছে- আপনি যেন অফিসে বসে গেম খেলতে পারেন সে জন্য আপনার বসই আপনাকে উৎসাহ দেবেন। বর্তমানে অনেক করপোরেট অফিসই কিন্তু গেমিংয়ের ওপর জোর দিচ্ছে- উদ্দেশ্য কর্মীদের কাজ শেখানো। গেমিংয়ের মাধ্যমে কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর কথাও ভেবে দেখা হচ্ছে বিভিন্ন করপোরেট অফিসে। কীভাবে? সেটাই উঠে এসেছে ভারতীয় দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে।
১০ মিনিটের একটি জম্বি অ্যাটাক। জম্বিরা যাকে কামড়াবে, সেও জম্বি হয়ে যাবে। এই গেমটি আপনাকে খেলতে হবে। নিজেকে এবং সঙ্গীদের জম্বির হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আর এভাবেই আপনি টিমওয়ার্ক শিখবেন। অর্থাৎ কীভাবে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করা যায় সেটিই আপনাকে শেখাবে এই গেমটি।
এ রকম আরো নির্দিষ্ট কিছু গেম রয়েছে যা কর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে। ‘স্পট দ্য ডিফারেন্স’ নামের একটি গেমে আপনাকে খুব সহজ কিছু কাজ করতে হবে কিন্তু যেসব কাজে মানুষ বেশির ভাগ সময়ই ভুল করে থাকে। আপনার কাজ হচ্ছে সেই ভুলগুলো শুধরে দেওয়া। যেমন : একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার কাগজ পূরণ করতে দেওয়া হবে আপনাকে। সেখানে সাধারণত যেসব ভুলগুলো গ্রাহকরা করে থাকেন সেটা আপনাকে ঠিক করে দিতে হবে।
দিন দিন বাড়ছে বৈশ্বিক বাজারে কাজ করতে পারে এমন লোকের চাহিদা। আর সেজন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে ‘মাইক্রোলার্নিং’ প্রক্রিয়ার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অল্পতেই যেন দ্রুত কাজগুলো বুঝে নিতে পারে নবীনরা সে জন্য তাদের বিভিন্ন উপায়ে কাজ শেখানো হচ্ছে।
গেমিংয়ের মাধ্যমে কাজ শেখানোর এই প্রক্রিয়া অবশ্য করপোরেট জগতের জন্য নতুন কিছু নয়। মুম্বাইয়ের এইচআর কনসালট্যান্ট আর রাজগোপাল ২০ বছর ধরে মানবসম্পদ উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছেন ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মধ্যে ঝুঁকি নেওয়ার মতো সাহস আছে। তারা বিরামহীনভাবে কাজ করতে পারে এবং নতুন নতুন পদ্ধতির সঙ্গে সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে পারে। নিজেরাই কাজের মাধ্যমে নতুনভাবে কাজ করার পদ্ধতি তৈরি করে নেয়।’
কাজের ক্ষেত্রে এখন স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়ছে দ্রুত, সে জন্যই তৈরি হচ্ছে নানা রকম করপোরেট গেমস যা কর্মীদের কাজের মান বাড়াতে সাহায্য করে। কারণ দিনব্যাপী একটি ট্রেনিং সেশনে বসে তারা যা শিখবে তার চেয়ে বেশি শিখবে এক ঘণ্টা একটা গেম খেলে। আর তাই মাইক্রোলার্নিং প্রক্রিয়ার মধ্যে গেমিফিকেশনকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
এ ধরনের গেম ও সফটওয়্যার তৈরি করে ‘নলস্কেপ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র লার্নিং কনসালট্যান্ট মদন পানাথুলা বলেন, এ ধরনের গেমের জন্য বিভিন্ন মডিউল রয়েছে। নানাভাবে বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষা করা হয় এসব গেমে। মোবাইল বা কম্পিউটারে এসব গেম খেলা যায়।
করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এ ধরনের মাইক্রোলেসন গেম তৈরি করে মুম্বাইয়ের ‘ইন্দাসগিকস’। ভারত এবং ভারতের বাইরে বিভিন্ন করপোরেট অফিস, প্রতিরক্ষা বাহিনী, সরকারি অফিস ও দাতা সংস্থাগুলোর জন্য সফটওয়্যার ও গেম তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি।
বৈশ্বিক মানবসম্পদ উন্নয়ন সংগঠন এসএইচআরএমের জন্য ইন্দাসগিকস একটি গেম তৈরি করেছে। যেটা ২২ থেকে ৩৫ বছর বয়সী কর্মীদের কাজ শিখতে সাহায্য করবে।
এই গেমের মূল চরিত্র ‘কে’ নামের এক তরুণ। সে সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় পাস করে চাকরিতে যোগ দিয়েছে। নতুন প্রতিষ্ঠানে সে কীভাবে মানিয়ে নেবে তাই নিয়ে তৈরি করা হয়েছে গেমটি। এই গেমটি খেলতে খেলতে একটি বড় প্রতিষ্ঠানের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়ে যাবে গেমারদের। দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এই গেমটি বেশ সহায়ক। এ ধরনের আরো করপোরেট গেম রয়েছে, যা একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির কর্মীদের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে।