তিন মাসেই ফেসবুকের ২২০ কোটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট বাতিল!

Looks like you've blocked notifications!

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই ২২০ কোটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট বাতিল করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ফেসবুকের মাসিক সক্রিয় (অ্যাকটিভ) ব্যবহারকারীর ৫ শতাংশই ভুয়া বলে স্বীকার করেছে বিশ্বের শীর্ষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি।

ফেসবুক গত বছরের অক্টোবর থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত ছয় মাসে ৩০০ কোটির বেশি ভুয়া ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট বাতিল করেছে। ফেসবুকের ইতিহাসে অ্যাকাউন্ট বাতিল করার ক্ষেত্রে এটি একটি রেকর্ড। এসব অ্যাকাউন্টের বেশিরভাগই খোলার কয়েক মিনিটের মধ্যেই বন্ধ করে দেয় ফেসবুক। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে ফেসবুক।

ফেসবুকের প্রোডাক্ট ব্যবস্থাপনা বিভাগের (বর্তমানে নাম ‘ফেসবুক ইন্টিগ্রিটি’) ভাইস প্রেসিডেন্ট গাই রোজেন বলেন, এসব ভুয়া অ্যাকাউন্টধারীর বড় অংশই হলো স্প্যামার। তবে নির্দিষ্ট করে কোনো দল বা ব্যক্তির নাম বলেননি রোজেন।

বৃহস্পতিবারের ওই প্রতিবেদনে আরো একটি বিষয় উল্লেখ করেছে ফেসবুক। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে মাদক ও অস্ত্র বিক্রিকে উৎসাহিত করে বা এসবের সঙ্গে জড়িত প্রায় ১৫ লাখ পোস্ট সরিয়ে নিয়েছে ফেসবুক। এ ছাড়া প্রতিবেদনে অন্যান্য বেআইনি কার্যক্রমের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে ফেসবুক।

নিউইয়র্কভিত্তিক আর্থিক ও ডাটাসেবা প্রদানকারী এবং মিডিয়া কোম্পানি ব্লুমবার্গ ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ‘নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য এ বছর অনেক বড় বাজেট রাখা হয়েছে।’

২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে রাশিয়া সামাজিক মাধ্যমটিকে ব্যবহার করার অভিযোগ ওঠার পর থেকেই ফেসবুকের কন্টেন্ট পলিসি নিয়ে কথা হয়েছে বিস্তর। এ ছাড়া এ বিষয়ে ফেসবুক কতটা আন্তরিক, তা নিয়েও সমালোচনা সইতে হচ্ছে ফেসবুককে।

ফেসবুক বরাবরই বলে আসছে, তারা নিয়ম-নীতি ভঙ্গকারীদের পোস্ট চিহ্নিত করে সেগুলো সরিয়ে নেওয়ার পদ্ধতি প্রতিনিয়ত উন্নত করছে। আর এ কাজের মূলে আছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) প্রোগ্রাম। কারণ, ফেসবুকের ব্যাপ্তি এখন এতটাই বিশাল যে কেবল মানুষ দিয়ে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয় না।

তবে ব্লুমবার্গ বলছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর নির্ভরশীলতার কারণে খুব শিগগির হয়তো বিপাকে পড়বে ফেসবুক। জাকারবার্গ জানিয়েছেন, ফেসবুক তার তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা ও এনক্রিপশন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কাজ করছে। এর ফলে সহজে কোনো কন্টেন্ট খুঁজে বের করে তা সরিয়ে ফেলতে পারবে না ফেসবুক, সেটাও স্বীকার করেছেন জাকারবার্গ।

সাধারণত ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রেই ফেসবুকে পোস্ট হওয়া সহিংস ছবি বা ভিডিও ফেসবুক ব্যবহারকারীরা কর্তৃপক্ষকে জানানোর আগে নিজ উদ্যোগেই শনাক্ত করে সেগুলো সরিয়ে নেয় ফেসবুক। তবে লাইভ সহিংস ভিডিওর ক্ষেত্রে, বিশেষ করে এ বছরের মার্চে নিউজিল্যান্ডের দুটি মসজিদে হামলার মতো ঘটনার ক্ষেত্রে, চেহারা না দেখা গেলে তা শনাক্ত করতে পারে না ফেসবুকের ব্যবহৃত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এ ছাড়া ঘৃণা ছড়ায় এমন পোস্ট শনাক্ত করার ক্ষেত্রে ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত বিষয়গুলো অনেক সময় আমলে নিতে ব্যর্থ হয় ফেসবুকের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

তবে প্রতিনিয়ত নিজেদের হালনাগাদ করছে বলে জানিয়েছে ফেসবুক। গত ছয় মাসে ঘৃণা ছড়ানো পোস্টের ৬৫ শতাংশই স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করেছে বলে দাবি করে ফেসবুক। এক বছর আগে সংখ্যাটি ছিল মাত্র ৩৮ শতাংশ।

তবে ফেসবুকের মালিকানা ভেঙে বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দিয়েছেন মার্ক জাকারবার্গ। নিরাপত্তাসহ অন্যান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষেত্রে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে আছে ফেসবুক উল্লেখ করে জাকারবার্গ বলেন, ‘ফেসবুকের আর্থিক সাফল্যই আমাদের এসব সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে সহায়তা করবে। আমার তো মনে হয়, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য ফেসবুক বছরে যে পরিমাণ বাজেট বরাদ্দ রাখে, সেটি টুইটারের পুরো এক বছরে আয়ের চেয়ে অনেক বেশি। তাই আমরা যা করতে পারব, অন্যরা তা পারবে না।’