থমাসের ছাগল-জীবন
চিন্তা করুন নিজেকে এক পাহাড়ি ছাগল হিসেবে, যার কাজ বলতে শুধু পাহাড়ের এদিক-ওদিক চষে বেড়ানো একটু তাজা ঘাসের সন্ধানে। আর দিন শেষে জমানো ঘাসে জাবর কাটা। নিশ্চয়ই ভাবছেন, কোনো সায়েন্স ফিকশন ছবির গল্প বুঝি! তবে এই ‘ছাগল-জীবন’ খুব টেনেছে থমাস থাওয়েটস নামের এক মানবসন্তানকে। তাই মানবজীবন থেকে কয়েক দিন ছুটি নিয়ে তিনি বনে যান চারপেয়ে এক ছাগল!
‘ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়’—এ কথাটি আরেকবার প্রমাণ করেছেন থমাস। চাইলেই তো আর মানুষের রূপ ছেড়ে ছাগলে রূপান্তরিত হওয়া যায় না। তবে তিনি ঠিকই উপায় খুঁজে বের করেছেন। প্রযুক্তি তাঁর এই ছাগল হওয়ার বাসনা একটু হলেও বাস্তবে রূপান্তরিত করার রসদ জুগিয়েছে। বানিয়ে নিয়েছেন ছাগলের পায়ের আকৃতি কৃত্রিম চার পা! আর এর ভেতরে হাত-পা গলিয়ে, মাথায় একটি হেলমেট পরেই পুরোদুস্তর ছাগল-থমাস!
তবে শুধু চারপেয়ে হলেই কি আর ছাগল হওয়া যায়? চাই ছাগলের মতো ঘাস দিয়ে ভূরিভোজ। তবে এ কাজ তো আর মানব পাকস্থলীর কাজ নয়! থমাস কিন্তু দমার পাত্র নন। ঠিক করে ফেলেছেন, ঘাস হজমে সহায়ক এমন এক কৃত্রিম পাকস্থলী বানাবেন। যেখানে ব্যবহৃত হবে ছাগলের পেটে পাওয়া যায় এমন সব ব্যাকটেরিয়া!
একা একা ছাগল হয়ে চড়ে বেড়ানোর মাঝে কোনো আনন্দ নেই দেখে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন, ছাগলের মাঝে থাকার। সুইজারল্যান্ডের এক ছাগলের খামারে ছাগল বেশে কাটিয়ে দেন টানা কয়েক দিন। এর আগে অবশ্য ছাগলের মনস্তত্ত্ব বোঝার জন্য ছাগল বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়েছেন তিনি।
থমাস আদতে একজন ডিজাইনার। জাতে ব্রিটিশ এই ডিজাইনার পড়াশোনার পাট চুকিয়েছেন রয়্যাল কলেজ ফর আর্ট ডিজাইনিং থেকে। বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে প্রবল আগ্রহ তাঁর, নিজেও গবেষণা করেছেন কিছু বিষয়ে। ‘নিবু’, ‘পলিসিং জিন’ নামে তাঁর কিছু প্রজেক্ট বেশ আলোড়ন ফেলেছে। আর এবার তিনি নেমেছেন ছাগল হিসেবে থাকতে কেমন লাগে, সে অনুভূতি সংগ্রহের মিশনে।
তবে কেন এমন অদ্ভুত পরিকল্পনা? এ উত্তরটা অবশ্য সুদূরপ্রসারী বলা চলে। থমাস বলেন, ‘ভবিষ্যতের উন্নত সব প্রযুক্তি মানুষের নানা আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে দেবে। আর এই প্রযুক্তির জোরে সবাই যে প্রখর বুদ্ধিমত্তার অধিকারী হতে চাইবে, তা কিন্তু নয়!’
তাঁর মতে, ভবিষ্যতের অনেক মানুষই হয়তো নিজেকে সাইবর্গে রূপান্তরিত করতে চাইবে। সে রূপান্তর নিম্নতর প্রাণীর আদতেও হতে পারে!
‘মানুষ ব্যতীত অন্য প্রাণী হয়ে থাকার অনুভূতিটা আসলে কেমন?’ থমাস নিজেই দিচ্ছেন এর উত্তর, ‘অনেক বেশি সরল, অনেক বেশি প্রশান্ত!’ থমাসের ইচ্ছা ছিল, প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে এমন এক প্রাণীতে রূপান্তরিত হওয়া, যাদের মাঝে নেই কোনো হতাশা কিংবা দুশ্চিন্তা। তাঁর এই চিন্তাকে স্বাগত জানিয়ে তাঁকে পুরস্কৃত করেছে পরিবেশবাদী একটি সংগঠন।
থমাসের প্রাথমিক ইচ্ছা ছিল, ছাগলবেশে সুইস আল্পস পাড়ি দেওয়া। এ ক্ষেত্রে তিনি খুঁজে পান এক সহৃদয় ছাগল-পালককে। তাঁর পোষা ছাগলদের মধ্যে ভিড়ে যান তিনি। টানা তিন দিন পাহাড়ে পাহাড়ে ছাগলপালের সঙ্গে দিন কাটান থমাস। তবে এই কৃত্রিম পা দিয়ে পাহাড়ি পথে চলাচল কিন্তু মোটেই সহজকর্ম নয়। নিজেকে মানিয়ে নিতে থমাসকে তাই বেশ বেগ পেতে হয়েছে। আবহাওয়া বৈরী ছিল। বৃষ্টি ও রাতের ঠান্ডায় তাই ছাগলপালের সঙ্গে আর খোলা আকাশের নিচে থাকা হয়নি তাঁর। আশ্রয় নিতে হয়েছে তাঁবুতে। তবে দিনের আলোয় তিনি ছিলেন ছাগলপালের সার্বক্ষণিক সঙ্গী!
নিজের ছাগল-জীবনের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে থমাস বলেন, ‘এক পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে আমি কয়েক মুহূর্তের জন্য আবিষ্কার করলাম, সব ছাগল এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে! আগে খেয়াল না করলেও এবার দেখলাম, তাদের শিংগুলো ধারের দিক থেকে নেহাত মন্দ নয়!’ তবে সে ভয় নাকি তাঁর এক ছাগলসঙ্গী দূর করে দিয়েছে। থমাসের মতো এসব ধারণা হয়তো তাঁর মানব মস্তিষ্কের সৃষ্টি।
নিজের সব অভিজ্ঞতা থমাস অবশ্য বিতরণের ব্যবস্থা করেছেন। আসছে সেপ্টেম্বরে লন্ডনে এই প্রজেক্টের ছবি এবং অন্যান্য উপাদান নিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করতে যাচ্ছেন। সঙ্গে প্রকাশ করবেন ‘গোটম্যান : হাউ আই টুক অ্যা হলিডে ফ্রম বিইং হিউম্যান’ নামের একটি বই।
তবে এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না থমাসের ছাগল-জীবন। তাঁর মতে এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। হয়তো আবার কোনো এক ঝকঝকে সকালে আল্পসের গা বেয়ে ছাগল হয়ে চষে বেড়াবেন থমাস!