আপনি কি নতুন পোশাক পরলে, নতুন রেসিপি রান্না করলে বা ভালো কোনো রেস্তোরাঁয় গেলে অথবা নতুন কোনো জায়গায় ঘুরতে গেলে প্রায়ই ইনস্টাগ্রামে ছবি বা ভিডিও পোস্ট করতে পছন্দ করেন?

ইনস্টাগ্রামে কিছু পোস্ট করার পর আপনি নিজের পরিচিত মানুষের কাছ থেকে সহজেই লাইক বা কমেন্ট পেতে পারেন। এই সামাজিক সম্পৃক্ততা আপনাকে সাময়িক খুশি করলেও এর আর্থিক কোনো মূল্য নেই। কেমন হয় যদি বিনোদনের পাশাপাশি নিজের জীবনযাত্রাকে উন্নত করতেও আপনি ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করতে পারেন? চলুন, জেনে নেওয়া যাক কীভাবে ইনস্টাগ্রাম থেকে টাকা আয় করা যায়, সে সম্পর্কে।

ইনস্টাগ্রাম থেকে টাকা আয় করবেন যেভাবে :

প্রতি ঘণ্টায় কয়েক লাখ মানুষ ইনস্টাগ্রামে ছবি বা ভিডিও পোস্ট করছেন। কিন্তু সবাই কি এখান থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারছে? ইনস্টাগ্রাম থেকে অর্থ উপার্জনের বিষয়ে চিন্তা করার আগে আপনাকে একটি কার্যকর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে।

যেভাবে ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট খুলবেন :

২০১০ সালের অক্টোবর থেকে যাত্রা শুরু করে ইনস্টাগ্রাম (ইনস্টা নামেও পরিচিত)। তখন কেবল আইওএস প্ল্যাটফর্মেই ব্যবহারযোগ্য ছিল এই অ্যাপ। কিন্তু ২০১২ সাল থেকে অ্যান্ড্রয়েড ও উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমেও সহজলভ্য হয় ইনস্টা। তাই আপনি এখন চাইলেই ইনস্টাগ্রাম অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিজের একটি প্রোফাইল তৈরি করে নিতে পারেন। এ জন্য স্মার্টফোনের পাশাপাশি প্রয়োজন হবে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ। তবে অ্যাকাউন্ট খোলার সময় এমন একটি ইউজার নেম বেছে নেওয়া উচিত, যেটি আপনার প্রোফাইলকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করবে।

যথাযথভাবে প্রোফাইলের বর্ণনা দিন :

আপনি যদি ইনস্টাগ্রামে বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিতভাবে ছবি বা ভিডিও পোস্ট করেন, তাহলে আপনার প্রোফাইলে ফলোয়ার পেতে পারেন। কিন্তু এটি গ্রাহক তৈরি করবে না। ইনস্টাগ্রামে সমমনা মানুষের সঙ্গে  সংযুক্ত হওয়ার জন্য আপনাকে একটি নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু বেছে নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে ভ্রমণ, ফ্যাশন, রান্না, যোগব্যায়াম ইত্যাদির মধ্য থেকে যেকোনো একটি বিষয় বেছে নিতে পারেন। আপনার যদি লেখালেখি বা প্রোগ্রামিংয়ের মতো বিশেষ দক্ষতা থেকে থাকে, তাহলে সেটিকেও আপনি ইনস্টাগ্রামের বিষয়বস্তু হিসেবে নির্ধারণ করতে পারেন।

এ ছাড়া নিজস্ব ব্যবসা থাকলে সেটিও হতে পারে আপনার প্রোফাইলের বিষয়বস্তু। আপনি যখন আপনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানবেন, তখন থেকেই ইনস্টাগ্রামে ওই বিষয়ে পোস্ট দিতে পারেন এবং এর মধ্য দিয়ে ওই বিষয় নিয়ে আগ্রহী অন্য ব্যক্তিদের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারবেন।

প্রোফাইল তৈরি করুন পেশাদারত্বের সঙ্গে :

পেশাদারত্বের সঙ্গে প্রোফাইল তৈরি না করলে সেটি আপনার পরিচিত মানুষ ছাড়া অন্য দর্শককে আকৃষ্ট করতে পারবে না। কীভাবে নিজের প্রোফাইল অন্যদের চেয়ে আলাদা ও পেশাদারত্বের সঙ্গে তৈরি করবেন?

ইনস্টাগ্রামে অ্যাকাউন্ট খোলার সময় আপনি প্রোফাইল পিকচার, ব্যবহারকারীর নাম, ওয়েবসাইট লিংক এবং বায়োসহ বেশ কয়েকটি বিকল্প পাবেন। আকর্ষণীয় একটি ইনস্টা প্রোফাইল তৈরির জন্য এর প্রতিটি অপশনই গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, ইনস্টার সার্চ অপশন থেকে ব্যবহারকারীরা যাতে আপনার প্রোফাইল বা নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু সহজে খুঁজে নিতে পারে, সে জন্য উপযুক্ত একটি ইউজার নেম বেছে নিন, যেটি আগে অন্য কেউ ব্যবহার করেনি।

এরপর আপনার যদি কোনো ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক ওয়েবসাইট থাকে, তবে সেটির লিঙ্ক ইনস্টাগ্রামে সংযুক্ত করুন। বায়ো বিভাগে নিজের সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু বাক্য লিখতে পারেন, যা দর্শককে আপনার ব্যক্তিত্ব, জ্ঞান এবং বিভিন্ন অভিজ্ঞতা সম্পর্কে অবহিত করবে।

দর্শকের বিশ্বাস অর্জন করুন :

প্রতিদিন কয়েক লাখ মানুষ ইনস্টাগ্রামে ছবি বা ভিডিও পোস্ট করলেও খুব কম মানুষই এই প্ল্যাটফর্ম থেকে আয় করতে পারে। আপনি কতগুলো লাইক বা কমেন্ট পেলেন, সেটি কোনো গুরুত্বই বহন করবে না, যদি দর্শক আপনার পোস্টে বিশ্বাস স্থাপন না করে। কীভাবে বিশ্বাস অর্জন করবেন?

বিশ্বাস অর্জনের অন্যতম প্রধান উপায় হলো মানসম্পন্ন কন্টেন্ট। উদাহরণস্বরূপ, ডিজিটাল মার্কেটিং যদি আপনার বিষয়বস্তু হয়, সে ক্ষেত্রে এ-সংক্রান্ত ভিডিও বা তথ্যবহুল কন্টেন্ট আপনাকে দর্শকের সামনে তুলে ধরতে হবে। আপনার এসব কন্টেন্টই আগ্রহী ব্যক্তিদের আপনার প্রোফাইলের প্রতি আকৃষ্ট করবে। আর এভাবেই আপনি দর্শকের বিশ্বাস অর্জন করতে পারবেন।

অর্গানিক ট্রাফিক :

অনেক ইনস্টাগ্রামার মনে করেন, ইনস্টায় ফলোয়ার পেতে প্রচুর বিনিয়োগের দরকার হয়। তবে ইনস্টা থেকে অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে অর্থ প্রদানকারী দর্শকের সম্পর্ক খুব কমই আছে বা নেই বললেই চলে। নিজের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলকে অর্থ উপার্জনের জন্য সম্ভাবনাময় বা ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অর্গানিক ফলোয়ার তৈরি করাই সর্বোত্তম পন্থা। আর অর্গানিক ট্রাফিক পেতে আপনাকে কয়েকটি পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।

সহজ কথায়, মানুষ কী সন্ধান করছে, সে সম্পর্কে ধারণা পেতে আপনাকে নিজের ইনস্টাগ্রামের বিষয়বস্তু নিয়ে কিছু গবেষণা করতে হবে। মানুষ যেসব সমস্যা নিয়ে ভাবছে বা কথা বলছে, তা অনুসন্ধান করার চেষ্টা করুন। এরপর আপনার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে মানুষকে সেসব সমস্যার সমাধান, নির্দেশনা বা কৌশল জানানোর চেষ্টা করুন। কীভাবে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আরো আকর্ষণীয় পোস্ট তৈরি করা যায়, তা শিখুন। বিষয়বস্তুগুলো যেন আপনার ইনস্টা অনুসারীদের বাস্তব জীবনেও প্রতিফলিত হয়, সেটি নিশ্চিত করুন।

সামাজিক সম্পৃক্ততা তৈরি করুন :

একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে ইনস্টাগ্রাম থেকে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা আয়ের জন্য আপনার প্রোফাইলে প্রায় ১০ হাজার অনুসারীর প্রয়োজন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বাস্তবতা ভিন্ন। আপনি যদি সুনির্দিষ্ট দর্শকের (টার্গেট অডিয়েন্স) কাছে পৌঁছাতে পারেন, তাহলেই আপনার ইনস্টার কন্টেন্টগুলো অর্থে রূপান্তর করা সম্ভব। একই সম্প্রদায়ের অন্যদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার জন্য আপনি কমেন্ট বিভাগের মাধ্যমে দর্শকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন, তাঁদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে।

এ ছাড়া নিজের ইনস্টা কন্টেন্ট সম্পর্কিত অন্যান্য ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলেও যেতে পারেন, তাদের পোস্টগুলো অনুসরণ করতে পারেন এবং তাদের বিষয়বস্তু নিয়ে মন্তব্যের বিভাগে নিজের মতামত জানাতে পারেন। আর সেসব মন্তব্যের সূত্র ধরেই কিছু দর্শক আপনার ইনস্টা প্রোফাইলও দেখতে পারেন।

ছবি বা ভিডিওর কি-ওয়ার্ডের সঙ্গে হ্যাশট্যাগ যোগ করুন :

আপনি যখন নিজের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে ছবি বা ভিডিও পোস্ট করবেন, তখন এর সঙ্গে প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড যোগ করুন। তবে কন্টেন্টের নিচে কি-ওয়ার্ডগুলো যোগ করার পর হ্যাশট্যাগ দিতে ভুলবেন না।

আপনি হয়তো জেনে থাকবেন যে, কন্টেন্টের সঙ্গে হ্যাশট্যাগ সংযুক্ত করলে অর্গানিকভাবে ইনস্টার বিস্তৃত দর্শকের কাছে পৌঁছাতে তা ব্যাপকভাবে কার্যকর। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি ইনস্টাগ্রামে ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কিত কিছু পোস্ট করেন, সে ক্ষেত্রে ‘#ডিজিটালমার্কেটিংটিপস’ লিখে যোগ করুন।

যেভাবে ইনস্টাগ্রাম থেকে টাকা আয় করবেন :

আপনি যখন সফলতার সঙ্গে মূল্য সংযোজন সামগ্রীর পাশাপাশি অর্গানিক ফলোয়ার দ্বারা সমৃদ্ধ একটি পেশাদার ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল তৈরি সক্ষম হবেন, তখনই আপনার ইনস্টা প্রোফাইল নগদীকরণের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে।

বিষয়বস্তু সম্পর্কিত লিঙ্ক শেয়ার :

আমাজন বা ওয়ালমার্টের মতো বিখ্যাত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো বর্তমানে অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম সরবরাহ করে থাকে। এ ছাড়া স্থানীয় অনেক ব্র্যান্ডও পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে কমিশন প্রদান করে থাকে।

কীভাবে এটি কাজ করে?

আপনি যদি নির্দিষ্ট কোনো ব্র্যান্ডের একটি টি-শার্ট পরে ইনস্টাগ্রামে ছবি পোস্ট করেন, তাহলে ওই পণ্য ক্রয়ের লিঙ্কটিও সংযুক্ত করুন, যাতে লিঙ্কটিতে ক্লিক করলে দর্শক ওই প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট বা পণ্যটি ক্রয়ের পেজে পৌঁছাতে পারে। যখন কোনো দর্শক আপনার দেওয়া লিঙ্কের মাধ্যমে পণ্যটি ক্রয় করবে, তখনই আপনি ওই প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্ধারিত কমিশন লাভ করবেন। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী অনুমোদিত কমিশনের হার সাধারণত ৪ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে।

স্পন্সরড (অর্থ প্রদানকারী) বিষয়বস্তু পোস্ট করুন :

আপনার ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল যখন যথেষ্ট সংখ্যক ফলোয়ার অর্জন করবে, তখন আপনি স্বনামধন্য বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সঙ্গে স্পনসরড পোস্টের বিষয়ে অংশীদারি চুক্তি করতে আবেদন করতে পারেন। আবেদন গৃহীত হলে আপনি স্পন্সরড সামগ্রী ইনস্টা প্রোফাইলে পোস্ট করে টাকা আয় করতে পারেন। স্পন্সরকে আকর্ষণ করার জন্য নিজের ইনস্টা প্রোফাইলকে বিশ্বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে, যাতে আপনি যা দেখাবেন বা বলবেন মানুষ তা শুনতে চায়।

আপনার স্থানীয় ব্যবসার প্রচারণা চালান :

আপনার যদি নিজস্ব কোনো ব্যবসা থাকে, তাহলে দর্শকের কাছে সহজেই নিজের পণ্য বা পরিষেবার প্রচারণা চালানোর জন্য ইনস্টাগ্রাম দুর্দান্ত একটি মাধ্যম হতে পারে। ফেসবুকের মতো ইনস্টাগ্রামও অনলাইনে নিজের ব্যবসার প্রচারণা চালানোর জন্য শক্তিশালী একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হতে পারে। তবে প্রোফাইল তৈরির পরপরই সেখানে পণ্য বিক্রির চেষ্টা না করাই ভালো।

ডিজিটাল পণ্য বিক্রি করুন :

নিজের কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা অনলাইন ব্যবসা না থাকলে এবং স্পন্সরড পোস্ট দেওয়ার জন্য যথেষ্ট সংখ্যক ফলোয়ার না থাকা সত্ত্বেও ইনস্টা থেকে টাকা আয় করতে চান? হ্যাঁ, সেটিও সম্ভব। সে ক্ষেত্রে পণ্য বিক্রির পরিবর্তে আপনি নিজের দক্ষতা বিক্রি করতে পারেন।

আপনার যদি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে দক্ষতা থাকে, সে ক্ষেত্রে ইনস্টাগ্রামে এ-সংক্রান্ত ভিডিও পোস্ট করে মানুষকে বিনামূল্যে তা শিখতে সহায়তা করতে পারেন। পরে ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ে আরো উন্নত কৌশল নিয়ে অর্থ প্রদানকারী ভিডিও সিরিজ চালু করতে পারেন।

শেষ কথা :

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ছবি/ ভিডিও শেয়ারিং মাধ্যম ইনস্টাগ্রাম বিশ্বের বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ এবং বয়সের মানুষের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা ছাড়াও যথাযথ পন্থা অবলম্বন করলে স্থিতিশীল আয়ের একটি সম্ভাব্য উৎস হতে পারে ইনস্টাগ্রাম।