শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের দুই স্বপ্ন-সারথি
গল্পটা দুই দুর্দান্ত ব্যাটসম্যানের, গল্পটা ক্রিকেটের দুই নায়কের। তাঁরা একই রাস্তায় একই পথে সফল, আবার একই সঙ্গে ব্যর্থও। তাঁদের হাত ধরেই একটি দলের স্বপ্নের পথে এগিয়ে চলা, অনুপ্রাণিত হওয়া।দলকে কখনো সাফল্যের আনন্দে ভাসিয়ে দিয়েছেন, কখনো বা ভাগ্য বা প্রতিপক্ষের কাছে পরাস্ত হয়ে হতাশ করেছেন। তবে দুজনের লড়াইয়ের অদম্য স্পৃহা শুধু তাঁদের স্বদেশকে নয়, প্রেরণা জোগাবে অন্য দেশের ক্রিকেটারদেরও। কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনে—শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের প্রায় দেড় দশকের দুই ব্যাটিং-স্তম্ভ, দুই স্বপ্ন-সারথি।
ব্যক্তিগত আর দলীয় সাফল্যের যে আকাশ-পাতাল ফারাক, তা বোধ হয় এই দুজনের চেয়ে আর কেউ ভালো জানে না। জয়াবর্ধনের শুরুটা একটু আগে। সৌম্যদর্শন, সদাহাস্য আর বিনয়ের প্রতিচ্ছবি জয়াবর্ধনে অভিষেক টেস্টে এমন এক রেকর্ডের সাক্ষী হয়েছিলেন, যা আজো অক্ষত। ১৯৯৭ সালের আগস্টে কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কা করেছিল টেস্টে সর্বোচ্চ ৯৫২ রান। সেই ‘এভারেস্ট’ ইনিংসে ২০ বছরের তরুণ জয়াবর্ধনের অবদান ছিল ৬৬। এর পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের বিপক্ষেই কলম্বোতে ২৪২ রানের অনবদ্য ইনিংস জয়াবর্ধনেকে সাফল্যের পথে আরো এগিয়ে দেয়।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাঙ্গাকারার অভিষেক ২০০০ সালে। সেই থেকে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে জয়াবর্ধনে-সাঙ্গাকারা যুগের সূচনা। দুজনের ৬২৪ রানের জুটির কথা কী ভোলা সম্ভব! ২০০৬ সালে কলম্বোতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তৃতীয় উইকেটে এই অসাধারণ জুটি গড়েছিলেন দুজনে। জয়াবর্ধনের ৩৭৪ আর সাঙ্গাকারার ২৮৭ রানে ধন্য যে জুটি, আজো টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ।
শ্রীলঙ্কাকে অনেক সাফল্য এনে দিলেও একটা আক্ষেপ অবশ্য তাড়া করবেই দুজনকে। ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা এনে দিতে পারেননি দেশকে। যদিও গত বছর বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার শিরোপা জয়ে বিশাল অবদান ছিল জয়াবর্ধনে-সাঙ্গাকারার।
২০০৭ বিশ্বকাপে জয়াবর্ধনের নেতৃত্বে ফাইনালে উঠলেও শিরোপার আনন্দে মেতে ওঠার সুযোগ হয়নি শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদের। ফাইনালে শুধু দোর্দণ্ড প্রতাপশালী অস্ট্রেলিয়াই নয়, প্রতিপক্ষ হিসেবে শ্রীলঙ্কানদের সামনে দাঁড়িয়ে যায় বৃষ্টি, আলোকস্বল্পতা আর ডাকওয়ার্থ-লুইসের মারপ্যাঁচ।
২০১১ বিশ্বকাপে আবার স্বপ্নভঙ্গের বেদনা। সেবার অধিনায়ক ছিলেন সাঙ্গাকারা। মুম্বাইয়ের ফাইনালে জয়াবর্ধনের সেঞ্চুরির ওপর ভর করে ২৭৪ রানের ভালো সংগ্রহ গড়েও জিততে পারেনি শ্রীলঙ্কা।
তবু শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে জুটির প্রসঙ্গ উঠলে জয়াবর্ধনে-সাঙ্গাকারার কথা সবার মনে পড়বেই। টেস্টে ১৯টি তিন অঙ্কের জুটি গড়ে ৬,৫৫৪ রান করেছেন দুজনে। ওয়ানডেতেও পরিসংখ্যানটা ঈর্ষণীয়। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ১৫টি ‘সেঞ্চুরি’ জুটিসহ দুজনের অবদান ৫,৯৯২ রান।
এমন বর্ণাঢ্য জুটিকে আর দেখা যাবে না। জয়াবর্ধনে আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন, বিশ্বকাপের পর আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলবেন না। অন্যদিকে, সাঙ্গাকারা ওয়ানডেকে বিদায় জানিয়ে শুধু টেস্ট খেলার ঘোষণা দিয়েছেন।
তবে ক্রিকেট-ভক্তরা ‘মাহেলা-সাঙ্গা’ জুটির কথা ভুলতে পারবে না কিছুতেই।