‘চোকার্স’ অপবাদ ঘোচাতে পারবে দক্ষিণ আফ্রিকা?
প্রায় ২২ বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ১৯৯২ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। লিগ পর্বে দারুণ খেলে চলে যায় সেমিফাইনালেও। কিন্তু অদ্ভুত বৃষ্টি-আইনের মারপ্যাঁচে পড়ে হার মানতে হয় ইংল্যান্ডের কাছে। এটা প্রোটিয়াদের সপ্তম বিশ্বকাপ। বিস্ময়কর হলেও সত্যি, ক্রিকেট-বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দলটি আজ পর্যন্ত বিশ্বকাপের কোনো নকআউট ম্যাচ জিততে পারেনি! এমনি এমনি তো ‘চোকার্স’, মানে চাপের মুখে ভেঙে পড়া দলের অপবাদ দক্ষিণ আফ্রিকানদের ঘাড়ে চেপে বসেনি। বুধবার আবার বিশ্বকাপের নকআউট ম্যাচের কঠিন পরীক্ষার সামনে দাঁড়িয়ে তারা। সিডনিতে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হওয়ার আগে ‘চোকার্স’ শব্দটা ঘুরেফিরে আসছেই। দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্স আর কোচ রাসেল ডোমিঙ্গা অবশ্য আশাবাদী, এবার সাফল্য পেয়ে অপবাদটা ঝেড়ে ফেলতে পারবেন তাঁরা।
১৯৯২ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বৃষ্টির বাগড়ায় ১ বলে ২২ রানের হাস্যকর সমীকরণের সামনে দাঁড়াতে হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে। কাকতালীয়ভাবে বুধবার সেই সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডেই নামতে হবে ডি ভিলিয়ার্সের দলকে।
বৃষ্টি অবশ্য আরো একবার দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে দিয়েছিল। ২০০৩ সালে ঘরের মাঠে সুপার সিক্স নিশ্চিত করতে গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারাতে হতো প্রোটিয়াদের। কিন্তু ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে জয়ের লক্ষ্য নির্ধারণে গড়বড় করে মাত্র এক রানের জন্য জয় পায়নি তারা। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচটি ‘টাই’ হয়ে যাওয়ায় স্বদেশের বিশ্বকাপেই গ্রুপ পর্ব শেষে ‘দর্শক’ হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকানরা।
১৯৯৯ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ল্যান্স ক্লুজনারের ‘সর্বনাশা’ দৌড় আজও ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে উজ্জ্বল। ওয়ানডে ইতিহাসের অন্যতম রোমাঞ্চকর, নাটকীয় ম্যাচটিও ‘টাই’ হয়েছিল। সুপার সিক্সে দুই দলের পয়েন্ট ছিল সমান—৬। তবে প্রোটিয়াদের চেয়ে শ্রেয়তর নিট রানরেট অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে গিয়েছিল ফাইনালে।
১৯৯৬, ২০০৭ আর ২০১১ বিশ্বকাপেও নকআউট ম্যাচের ‘খাঁড়া’য় কাটা পড়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৯৯৬ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ১৯ রানে, ২০০৭ সালে সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৭ উইকেটে আর গতবার কোয়ার্টার ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৪৯ রানে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল তাদের।
অন্য সময় ভালো খেললেও বিশ্বকাপের নকআউট ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বারবার ‘ভেঙে পড়া’ ক্রিকেট-বিশ্বের কাছে বড় এক রহস্য। তবে ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙে এবার ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ডোমিঙ্গোর কণ্ঠে, ‘অনেক দিন ধরেই এটা (চাপের মুখে ভেঙে পড়া) যেন দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটের একটা অংশে পরিণত হয়েছে। প্রতিবার ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসরে অংশ নেওয়ার সময় এ-সংক্রান্ত প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় আমাদের। এ ব্যাপারে আমরা নিজেরাও কথা বলেছি। আমরা ভালোমতোই জানি, অতীতে অনেক সুবর্ণ সুযোগ আমাদের হাত গলে বেরিয়ে গেছে। আশা করি, এ ধরনের বড় টুর্নামেন্টে আগের দলগুলোর ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার আমরা সাফল্য পাব।’
কোচের মতো অধিনায়কের কণ্ঠেও একই প্রতিজ্ঞা। বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো নকআউট ম্যাচ জিতে ‘ইতিহাস’ গড়ার স্বপ্ন ডি ভিলিয়ার্সের, ‘আমি শুধু একটা কথাই বলতে পারি। আমরা আগামীকাল (বুধবার) চাপের মুখে ভেঙে পড়ব না। সোজাকথা, আমরা ভালো খেলব আর জিতব।’