বিশ্ব অ্যাথলেটিকসে দুর্নীতির কালো ছায়া
দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগে এখন বিশ্ব ফুটবল তোলপাড়। ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফার সভাপতি-মহাসচিবসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তও চলছে। তবে অ্যাথলেটিকসে যে ধরনের দুর্নীতি হয়েছে, তার তুলনায় ফিফার কেলেঙ্কারি নাকি কিছুই নয়! অবৈধভাবে অর্থ লেনদেন ও মাদক পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে বিশ্ব অ্যাথলেটিকস অঙ্গনে। যে কারণে বাতিল করা হয়েছে আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিকস অ্যাসোসিয়েশনের (আইএএএফ) বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।
ফিফা-কেলেঙ্কারি মূলত বিশ্বকাপ আয়োজনকে ঘিরে। কিন্তু অ্যাথলেটিকসের কলঙ্ক আরো গুরুতর। বিশ্ব মাদকবিরোধী সংস্থার (ওয়াডা) অধীনে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করেছে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন। সোমবার এই তদন্তের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা। প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আইনজীবী রিচার্ড ম্যাকলারেন বলেছেন, ‘কয়েকজন বৃদ্ধ মানুষ অবৈধভাবে, ঘুষ নিয়ে প্রচুর অর্থ নিজেদের পকেটে পুরেছেন। এমনকি তাঁরা কয়েকটি আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতার প্রকৃত ফলাফল আর পদক তালিকায় পর্যন্ত পরিবর্তন এনেছেন।’
১৯৯৯ সাল থেকে আইএএএফের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন লামাইন ডায়াক। কিন্তু এমন মারাত্মক দুর্নীতির অভিযোগে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন তিনি। গত আগস্টে ডায়াকের কাছ থেকে আইএএএফ প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণের পরেই অ্যাথলেটিকসকে দুর্নীতিমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন সেবাস্টিয়ান কো। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে রাশিয়া, কেনিয়ার বেশ কয়েকজন অ্যাথলেটের ডোপ কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এমনকি অলিম্পিক ও বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপের অনেক পদকজয়ীর ডোপ কেলেঙ্কারিও এড়িয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে আইএএএফের বিরুদ্ধে। এসব গুরুতর অভিযোগ ওঠার পর বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য ওয়াডা নিয়োগ দিয়েছিল ম্যাকলারেনকে।
কয়েক দিন আগে ডায়াকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল ফ্রান্সের পুলিশ। তাদের অভিযোগ, ডায়াক ঘুষ নিয়ে ডোপ কেলেঙ্কারির ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছেন। ডায়াকের ছেলে ও আইএএএফের সাবেক বিপণন নির্বাহী পাপা মাসাতা ডায়াক, রাশিয়ান অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি ভ্যালেন্তিন বালাকনিশেভ, রাশিয়ার সাবেক কোচ অ্যালেক্সেই মেলনিকোভ ও আইএএএফের মাদকবিরোধী বিভাগের সাবেক প্রধান গ্যাব্রিয়েল ডোলের বিরুদ্ধেও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়ানোর অভিযোগ উঠেছে।
অ্যাথলেটিকসের এই দুর্নীতিকে ফিফার চেয়েও ‘ভয়ংকর’ বলে মন্তব্য করেছেন আইএএএফের প্রধান কো। ১৯৮০ ও ১৯৮৪ অলিম্পিকে ১৫০০ মিটার দৌড়ে যুক্তরাজ্যকে সোনা উপহার দেওয়া কো বলেছেন, ‘রাশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মাদক সংক্রান্ত দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়েছেন আইএএএফের সাবেক সভাপতি। আমার মনে হয় না কোনো খেলার জন্য এর চেয়ে খারাপ কিছু হতে পারে। ফুটবলে সেপ ব্ল্যাটার যা করেছেন, এটা তার চেয়েও অনেক বেশি খারাপ।’