সাক্ষাৎকার
‘ক্রিকেটে মনোযোগী হতেই দ্রুত বিয়ে করি’
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলে দেশে ফেরার পর রাবেয়া আক্তার প্রীতিকে প্রথম দেখেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তারিখটা ছিল ২০১৪ সালের ২৮ মার্চ। প্রথম দেখাতেই বান্ধবীকে বিয়ে করার পণ করে বসেন মিরাজ। গল্পের শুরু তখন থেকে। এরপর মাঝে কেটে যায় অনেকটা সময়। জাতীয় দলের দায়িত্ব আর নানা ব্যস্ততার মধ্যে শেষ পর্যন্ত চলতি বছর ২১ মার্চ বান্ধবী প্রীতির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধলেন এই স্পিন অলরাউন্ডার।
সম্প্রতি এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজের সমসাময়িক ব্যস্ততা নিয়ে কথা বলেছেন মিরাজ। জানিয়েছেন, নতুন স্পিন কোচ ড্যানিয়েল ভেট্টরির সঙ্গে কাজ করার উৎসহ নিয়ে। সেই সঙ্গে নিজের সফল প্রেমের গল্পও বলেছেন টাইগারদের অন্যতম এই সদস্য।
প্রশ্ন : সামনে খেলার ব্যস্ততা শুরু প্রস্তুতি কেমন চলছে?
মিরাজ : প্রস্তুতি ভালোই হয়েছে। এখন আমাদের ফিটনেস টেস্টসহ অনুশীলন হয়েছে। এই ক্যাম্পের পরই আমাদের টেস্ট ম্যাচ শুরু হবে, তারপর ত্রিদেশীয় সিরিজ। সবকিছু এখন পর্যন্ত ঠিকঠাক চলছে। আমরা ফিটনেস ও নিজেদের উন্নতি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। চেষ্টা করছি, ফিটনেসের উন্নতির করার জন্য, কারণ শেষ পাঁচ-ছয় মাস ধরে ফিটনেস নিয়ে কাজ করার সময় হয়নি। যেহেতু একটা সুযোগ এসেছে সেটা সবাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।
প্রশ্ন: নতুন কোচর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ, কেমন ছিল?
মিরাজ : কোচের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ বিশেষ কিছু ছিল না। প্রথম দিনে সবার সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। বেশি সময় এক সঙ্গে থাকা হয়নি। তবে সবার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। আমার এখন পর্যন্ত কাজ তেমন হয় হয়নি। দ্রুতই আমরা এক সঙ্গে কাজ করব।
প্রশ্ন: স্পিন কোচ হিসেবে ডেনিয়েল ভেট্টরিকে পাচ্ছেন, তাঁর সঙ্গে কাজ করতে কতটা উৎসাহী?
মিরাজ : অবশ্যই ড্যানিয়েল ভেট্টরি একজন অসাধারণ বোলার ছিলেন। নিউজিল্যান্ডের মতো দলের অন্যতম একজন ছিলেন তিনি। আমি নিজেও উনার খেলা অনেক দেখতাম। তিনি সবসময় ডোমিনেট করে খেলতেন। অনেক পরিশ্রম করতেন। এমন একজন বিশ্বমানের স্পিনারকে কোচ হিসেবে পাওয়া অনেক কিছু। উনার সঙ্গে কাজ করতে পারাটা আমার জন্য ভাগ্যের ব্যাপার। চেষ্টা করব, উনার কাছ থেকে ভালো কিছু আদায় করে নেওয়ার। সবকিছু ভালোভাবে শেখার করার চেষ্টা করব।
প্রশ্ন : বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক ব্যর্থতা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো কতটা চ্যালেঞ্জিং?
মিরাজ : আমাদের একটু খারাপ সময় যাচ্ছে। শেষ যতগুলো ম্যাচ খেলেছি আমাদের ভাগ্য ভালো ছিল না। আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে পারিনি। আমার মনে হয়, ঘরের মাঠে সিরিজ দিয়ে এই অবস্থা থেকে কাটিয়ে উঠতে পারব। সামনের সিরিজটা যদি জিততে পারি তাহলে আমাদের এই অবস্থা পাল্টে যাবে। আমরাও নিজেদের সেরাটা দিয়ে সেই চেষ্টা করব।
প্রশ্ন : বোলিংয়ে রান দেওয়ার ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণে মনে হচ্ছে, বিষয়টি স্বস্তি দিচ্ছে কি?
মিরাজ : আমি সবসময় চেষ্টা করি রান চেক দিতে। আমার কাছে দল আশা করে আমি যেন, প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানকে চাপে রাখতে পারি। আমি যদি তা করতে পারি তাহলে অন্য বোলার উইকেট পাবে। আমিও সেটাই করার চেষ্টা করি। ইকোনমি বোলিং করার চেষ্টা সবসময় থাকে। কখনো পারি, কখনো পারি না। হয়তো আমি তেমন উইকেট পাচ্ছি না, তারপরও আমার কাছে ইকোনমি বোলিং করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: সাকিব আল হাসান থেকে কতটা শিখছেন?
মিরাজ : আমরা তো সবাই জানি সাকিব ভাইয়া একজন বিশ্বমানের ক্রিকেটার। আমি ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই সাকিব ভাইয়াকে অনুসরণ করি। বোলিংয়ে উনি আমাকে অনেক সাহায্য করেন। অনেক কিছু বুঝিয়ে দেন, কীভাবে কী করতে হবে। আর দায়িত্বের কথা বললে, সাকিব ভাই থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। শেষ বিশ্বকাপেও উনি দারুণ করেছেন। যেটা আমাদের দেশের ক্রিকেটের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বকাপে আমি তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। শুধু আমি কেন সবার তাঁর কাছ থেকে শেখার আছে। আর এমন একজন বিশ্বমানের ক্রিকেটারের সঙ্গে খেলতে পেরে নিজেতে ভাগ্যবান মনে করছি।
প্রশ্ন: স্বল্প সময়ের ক্যারিয়ারে অনেক দায়িত্ব নিতে হয়, কতটা উপভোগ করেন?
মিরাজ : আমি সবসময় দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পছন্দ করি। নিজে যখন ব্যক্তিগত সমস্যায় পড়ি তখন সেটা নিজে নিজে ওভারকাম করার চেষ্টা করি। আর অবশ্যই দলে দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ দায়িত্ব না নিলে ভালো ক্রিকেট খেলা কিংবা দলকে জেতানো কিছুই সম্ভব নয়। চেষ্টা করি দলের প্রয়োজনে নিজের সেরাটা দিয়ে দেশের জয়ে অবদান রাখার। সবমিলিয়ে আমি দায়িত্ব উপভোগ করি।
প্রশ্ন: সাম্প্রতিক ব্যর্থতা কাটিয়ে আগামী বিশ্বকাপের জন্য তৈরি হওয়ার চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন কি?
মিরাজ : আসলে প্রতিটি ম্যাচই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। শুধু আমাদের নয়, সবার জন্যই এটা হয়। বিশেষ করে সামনে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বিশ্বকাপ। যেটা আমাদের জন্য অনেক কঠিন পরীক্ষা। তারপরও আমরা আমাদের সর্বোচ্চ সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব। আর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ভালো করতে পারলে এটা অবশ্যই দেশের ক্রিকেটের জন্য অনেক বিশেষ কিছু। বিশ্বকাপের জন্য তৈরি হতে অবশ্যই অনেক পরিশ্রম দরকার। যেটা এরই মধ্যে আমরা শুরু করে দিয়েছি। বিশ্বকাপে আমরা ভালোভাবে নিজেদের দিতে পারি তাহলে ভালো কিছুই হবে।
প্রশ্ন : সম্প্রতি ফিল্ডিংয়ে বেশ ঘাটতি দেখা যাচ্ছে, সমস্যাটা ভাবাচ্ছে কী?
মিরাজ : ফিল্ডিংটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিছু কিছু সময় আমাদের এই সমস্যায় ভুগতে হয়। অনুশীলন থেকে এটার উন্নতি করতে হবে। এটা আমরা এরই মধ্যে শুরু করে দিয়েছি। আর আমার বিশ্বাস আমরা ভালো করব। আর বিশ্বকাপের আগে কিন্তু আমরা খারাপ করিনি। বিশ্বকাপে কিছুটা ভুল হয়েছে। আমার মনে হয়, খেলার মাঝে এটা হয়। সবারই হয়। ভালো বিশ্বমানের ক্রিকেটাররাও ভুল করে। তবুও আমার মনে হয়, আমরা সবাই যদি এই বিষয়টি নিয়ে একসঙ্গে কাজ করি তাহলে অবশ্যই উন্নতি হবে।
প্রশ্ন : শেষের দিকে ব্যাটসম্যান হিসেবে আপনার ওপর অনেক দায়িত্ব থাকে, এই দায়িত্ব নেওয়ার জন্য নিজেকে পুরোপুরি উপযুক্ত মনে হয়?
মিরাজ : আসলে আমার কাছ থেকে দল শেষের দিকে ছোট একটা পার্টানারশিপ বা ম্যাচ উইনিং রান আশা করে। ওই সময় ৩০-৩৫ রান করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় ১০-১৫ রানও অনেক দরকারি। আমি চেষ্টা করি, ব্যাটিংয়ে আমার পার্টনারকে সাহায্য করতে। আমি নিজেও নিজের উন্নতি করতে চেষ্টা করি। তবে এটা ঠিক ব্যাটিংয়ে আমার আরো অনেক উন্নতি করতে হবে।
প্রশ্ন: আগামী পাঁচ বছর পর নিজেকে কেমন দেখতে চান?
মিরাজ : পাঁচ বছর অনেক লম্বা সময়। তবে ইচ্ছে থাকবে ব্যাটিং-বোলিং দুটিতেই ভালো করা। দুই দিক থেকে দেশের জন্য নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তোলা। সবসময় স্বপ্ন ছিল, বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলব এবং অন্যতম একজন হয়ে খেলব। চেষ্টা করেছি ডমিনেট করে খেলার। হয়তো বাংলাদেশ টিমে খেলার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এখন সামনের দিকের লক্ষ নিজেকে পরিপূর্ণ ক্রিকেটার হিসেবে তৈরি করা। বাংলাদেশকে আরো অনেক কিছু দিতে হবে।
প্রশ্ন : আসি বিয়ের প্রসঙ্গে, দীর্ঘ দিনের প্রেম থেকে বিয়ে পেছনের গল্প কেমন ছিল?
মিরাজ : আমি তখন বয়সভিত্তিক দলে খেলি খুলনাতে। তখন ওকে প্রথম দেখি। প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে যায়। শুরু হয় প্রেম। এরপর প্রেম থেকে সবশেষ বিয়ে করা।
প্রশ্ন: দীর্ঘ সময়ের প্রেমে কোনো স্মরণীয় স্মৃতি আছে?
মিরাজ : আসলে খেলার জন্য সবসময় তো সময় পেতাম না। প্রেমের শুরু থেকেই খেলার মাঝে বেশি থাকতাম । যার কারণে তেমন কোনো স্মরণীয় স্মৃতি নেই। তবে প্রায় ওর সঙ্গে দেখা করতে খুলনায় যেতাম। ভালো লাগত যখন এত দূর থেকে ওর সঙ্গে দেখা করতে যেতাম। আর প্রেম করলে তো সবারই কষ্ট করতে হয়। কিন্তু আমার উপর হয়তো আল্লাহর রহমত ছিল তাই আমার বেশি কষ্ট করতে হয়নি। অল্পতেই প্রেমে সফল হয়েছি।
প্রশ্ন : সব ঠিকঠাক তবুও হুট করে বিয়ের সিদ্ধান্ত?
মিরাজ : আমি সবসময় ক্রিকেটকে ভালোবাসি। তাই ক্রিকেটে মনোযোগ দিতে হুট করে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেই। পরিবারও চেয়েছে তাই আর দেরি না করে বিয়ে করে ফেলি। মূলত ক্রিকেট থেকে যেন দূরে না যাই সেই জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেই। যেন সবসময় ক্রিকেটে মনোযোগ দেওয়া হয়।