ফাইনালে উঠলেই কি চুপসে যায় বাংলাদেশ?
ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। ডাবলিনে আগামীকাল শুক্রবার ফাইনাল ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। সিরিজে এর আগে দুইবারের মোকাবিলায় দুইবারই ক্যারিবীয়দের অনায়াসে হারিয়েছে টাইগাররা। স্বাগতিক আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপপর্বের প্রথম ম্যাচটা বৃষ্টিতে ভেসে গেলেও শেষ ম্যাচে উইলিয়াম পোর্টারফিল্ডের দলকে হেসে-খেলে হারায় মাশরাফি বাহিনী। আগামীকালের ফাইনালে তাই ক্রিকেটভক্তদের সবার ভাবনাতেই সুস্পষ্ট ফেভারিট বাংলাদেশ। কিন্তু টাইগারদের পেছনে দুর্ভাবনা হয়ে ছুটছে এর আগের ফাইনালগুলোর ইতিহাস। এর আগে চারটি ওয়ানডে এবং দুটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠলেও একবারও শিরোপা জিততে পারেনি বাংলাদেশ দল।
২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো কোনো ত্রিদেশীয় সিরিজে ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়েকে নিয়ে অনুষ্ঠিত সিরিজের ফাইনালে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে মাহেলা জয়বর্ধনের লঙ্কান দলটির মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করে মাত্র ১৫২ রানে অলআউট হয়ে যায় মোহাম্মদ আশরাফুলের দল। তবে বোলিংয়ে স্বপ্নের মতো সূচনা করে টাইগাররা। একপর্যায়ে মাত্র ছয় রানে শ্রীলঙ্কার প্রথম পাঁচজন ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠায় বাংলাদেশ। কুমারা সাঙ্গাকারার দৃঢ়তার পরও একপর্যায়ে ১১৪ রানে আট উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। তবে অনভিজ্ঞ রুবেল হোসেনের বলে বেধড়ক পিটিয়ে ১৬ বলে ৩৩ রান করা মুরালিধরন ১১ বল বাকি থাকতেই ম্যাচটা বের করে নেন। প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠে হেরে যায় টাইগাররা।
২০১২ সালে এশিয়া কাপে শক্তিশালী ভারত ও শ্রীলঙ্কার মতো দলকে ছিটকে দিয়ে ফাইনালে উঠে যায় মুশফিকুর রহিমের বাংলাদেশ দল। ফাইনালে দারুণ বোলিংয়ে মিসবাহ-উল-হকের পাকিস্তানকে মাত্র ২৩৬ রানে আটকে রাখে বাংলাদেশ। কিন্তু তামিম ইকবালের ৬০ এবং সাকিব আল হাসানের ৬৮ রান সত্ত্বেও ম্যাচের শেষ বলে গিয়ে মাত্র দুই রানে হারে টাইগাররা। দেশের মাটিতে আরেকটি ফাইনাল হারে ক্রিকেটারদের পাশাপাশি কান্নায় ভেঙে পড়ে পুরো জাতি।
২০১৮ সালে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আরেকটি ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে দিনেশ চান্দিমালের শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো কোনো ওয়ানডে টুর্নামেন্টের ফাইনালে দলকে নেতৃত্ব দেন মাশরাফি। গ্রুপপর্বের প্রথম ম্যাচে লঙ্কানদের রীতিমতো উড়িয়ে দেওয়া বাংলাদেশ দুর্দান্ত বল করে ২২১ রানে অলআউট করে দেয় প্রতিপক্ষকে। তবে সহজ জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ব্যাটসম্যানদের সীমাহীন ব্যর্থতায় মাত্র ১৪২ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ দল। ৭৯ রানের লজ্জাজনক পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মাশরাফি বাহিনী।
সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে দারুণ ক্রিকেট খেলে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। ফাইনালে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে রোহিত শর্মার ভারতকে চমকে দেয় মাশরাফির দল। ওপেনার লিটন দাসের মারমুখী ব্যাটিংয়ে একপর্যায়ে ২০.৫ ওভারে ১২০ রান তুলে ফেলে টাইগাররা। কিন্তু আরেক ওপেনার মেহেদী হাসান মিরাজ ৩২ রান করে বিদায় নিলে ব্যাটিং ধ্বসে পড়ে বাংলাদেশ। নিঃসঙ্গ যোদ্ধার মতো একপ্রান্তে লিটন ১১৭ বলে ১২১ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেললেও অন্যদের ব্যর্থতায় ২২২ রানে অলআউট হয় দল। তবে অধিনায়ক মাশরাফির উদ্দীপনাময় নেতৃত্বে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করতে থাকে বোলাররা। শেষ পর্যন্ত আবারও ইনিংসের শেষ বলে গিয়ে তিন উইকেটের পরাজয় মেনে নেয় টাইগাররা।
চারটি ওয়ানডে টুর্নামেন্ট ছাড়াও দুটি টি-টোয়েন্টি আসরের ফাইনাল খেলে বাংলাদেশ। কিন্তু ওয়ানডে ফাইনালের ভাগ্য ধাওয়া করে টি-টোয়েন্টিতেও। ২০১৬ সালে দেশের মাটিতে এশিয়া কাপের ফাইনালে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ভারতের কাছে আট উইকেটে হেরে যায় মাশরাফির দল। সর্বশেষ ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করে সাব্বির রহমানের ৭৭ রানের ইনিংসের ওপর ভর করে ১৬৬ রান তোলে বাংলাদেশ। তবে দিনেশ কার্তিকের আট বলে অপরাজিত ২৯ রানের ইনিংস আরেকবার বাংলাদেশকে ফাইনাল হারের দুঃখে পোড়ায়। ম্যাচের শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে জয় ছিনিয়ে নেন দিনেশ কার্তিক।
তবে এবার একের পর এক ফাইনাল হারের দুঃখ ভুলতে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ দলনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। পুরো সিরিজে ব্যাটিং-বোলিং মিলিয়ে প্রায় নিখুঁত ক্রিকেট খেলেছে টাইগাররা। দলের সবাই ফাইনালে নিজের সেরাটা দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন। এর সঙ্গে আছে গ্রুপপর্বে দুইবার ক্যারিবীয়দের হারানোর সুখস্মৃতি। ইনজুরির কারণে সাকিব আল হাসানের ফাইনালে খেলা নিয়ে কিছুটা সংশয় থাকলেও বাকিরা সবাই একাদশে সুযোগ পেয়ে সেটার সম্ভাব্য সেরা প্রতিদান দিচ্ছেন। তাই ফাইনালের আগে আত্মবিশ্বাসী মাশরাফি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমাদের বোলিং বিভাগ দুর্দান্ত বল করছে। আমাদের ব্যাটিংও দারুণ হচ্ছে, বিশেষ করে টপ অর্ডার। আমরা এই সিরিজে তিন ম্যাচ জিতেছি। তাই ফাইনাল নিয়ে আমি অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী।’