‘আবার সেই ভয়ানক মুস্তাফিজকে দেখতে পাবেন’
বাংলাদেশ ক্রিকেটে তাঁর আগমন অনেকটা ঝড়ের মতো। ২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য পারফর্ম করে দৃশ্যপটে আবির্ভাবের পর বিশ্ব ক্রিকেটের বিস্ময়বালকে পরিণত হন। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) প্রথমবার খেলতে গিয়েই সেরা উদীয়মান ক্রিকেটারের পুরস্কার জিতে নেন। ‘কাটার মাস্টার’ উপাধিও পেয়ে গেছেন ততদিনে। ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি লিগে খেলারও সুযোগ পেয়ে যান। কিন্তু এরপরই হানা দেয় ইনজুরি। চোটের কারণে দীর্ঘ বিরতির পর আবার মাঠে ফেরেন মুস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু কেন যেন তাঁর বলে শুরুর দিকের সেই ধার আর চোখে পড়ছিল না সেভাবে। আগের সেই দুর্বোধ্য কাটার এবং ব্যাটসম্যানকে চমকে দেওয়া গতি ও সুইং যেন কিছুটা হারিয়েই যায়।
ইংল্যান্ডে খেলতে গিয়ে চোটে আক্রান্ত হওয়ার পর ঘনঘন ইনজুরিতে পড়ার প্রবণতা বাড়তে থাকে মুস্তাফিজের। ২০১৮ সালের পঞ্জিকাবর্ষে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিদের তালিকায় তাঁর নাম থাকলেও ব্যাটসম্যানরা যেন ক্রমেই ভালো করে পড়া শুরু করে দেয় তাঁর রহস্য ডেলিভারিগুলো। তাই রান খরচে কৃপণ মুস্তাফিজের শেষ কয়েকটি ওয়ানডেতে খরচ হয়ে যায় প্রচুর রান। নিউজিল্যান্ড সফরে তৃতীয় ওয়ানডেতে নিজের ১০ ওভারে ৯৩ রান খরচ করেন ফিজ। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার আয়ারল্যান্ডে চলমান ত্রিদেশীয় সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খরচ করেন ৮৪ রান। দুটি ম্যাচেই দলের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বোলারের নাম মুস্তাফিজ।
বল হাতে এমন পারফরম্যান্সের পর ক্রিকেটভক্তদের মধ্যে একটা কানাঘুষা চলতে থাকে, ‘হারিয়ে গেছেন মুস্তাফিজ।’ তবে দলের অন্যতম সেরা এই পেসারকে নিয়ে সমর্থকদের দুর্ভাবনার সঙ্গে একমত নন কোচ স্টিভ রোডস। বৃহস্পতিবার ত্রিদেশীয় সিরিজে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচটা বৃষ্টিতে ভেসে যায়। ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষিত হওয়ার পর সাংবাদিকরা ঘিরে ধরেন টাইগার কোচকে। অবধারিতভাবে সেখানে উঠে আসে মুস্তাফিজ প্রসঙ্গ। তবে ফিজকে নিয়ে সব আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে কোচ স্টিভ রোডস বলেন, ‘মুস্তাফিজের বোলিং নিয়ে আমি মোটেও চিন্তিত নই। ও দারুণ এক ওয়ানডে বোলার। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, বিশ্বের সেরা পাঁচ বোলারের একজন ছিল ফিজ। বাংলাদেশের খুব বেশি বোলার এমন পর্যায়ে গেছে বলে শুনিনি। আগের ম্যাচেও ওর কিছু বল প্রচণ্ড গতিতে কিপারের গ্লাভসে গেছে। যদি এভাবে গতিটা বাড়াতে পারে ও, তাহলে আগের সেই ফিজকেই দেখতে পাবেন।’
বেশি রান খরচ করছেন মুস্তাফিজ, এমন সমালোচনার সঙ্গে একদমই একমত নন দলে তাঁর সতীর্থ সাকিব আল হাসান। কোচ স্টিভ রোডসের সুরে সুর মিলিয়ে বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার বলেন, ‘প্রতিটা খেলোয়াড়েরই দলে আলাদা ভূমিকা নির্দিষ্ট করা আছে। ফলে শুধু স্কোরবোর্ড দেখে একেকজন খেলোয়াড়ের মান যাচাই করলে সেটা ভুল হবে। শেষ ১০ ওভারে ওর জন্য চার ওভার রাখা হয়। ওই চার ওভারে কেউ যদি ৩৫ রানের কম দেয়, তাহলেই তাঁকে ভালো বোলার হিসেবে ধরা হয়। এর আগের ছয় ওভারে যদি সে ৩০ রানও দেয়, তাহলে শেষের ৩৫ যোগ করলে সেটা ৬৫ রান হয়ে যায়। মুস্তাফিজের মতো বাকিরা কিন্তু ডেথ ওভারে এত বেশি বল করে না, এটা বুঝতে হবে।’