বোমা ফাটালেন আফ্রিদি!
এপ্রিল মাসেই জানা গিয়েছিল, আত্মজীবনী প্রকাশ করবেন ‘বুমবুম’ খ্যাত পাকিস্তানের তারকা ক্রিকেটার শহিদ আফ্রিদি। জীবনীর নামটাও দিয়েছিলেন একেবারে মোক্ষম, ‘গেম চেঞ্জার।’ ডানহাতি এই অলরাউন্ডারের বেড়ে ওঠা, ব্যক্তিগত জীবন আর স্বভাবের ছোঁয়া হরহামেশা দেখা গেছে ক্রিকেট মাঠে। ‘আক্রমণই শেষ কথা’ এমন দর্শনে বিশ্বাসী আফ্রিদির মাঠের ক্রিকেটটাও ছিল আক্রমণাত্মক। ক্রিকেট মাঠের মতো আত্মজীবনীতেও একই দর্শনের অনুসরণ করে রীতিমতো বোমা ফাটিয়েছেন এই তারকা ক্রিকেটার।
আফ্রিদির ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়েছে তা হলো, তাঁর সত্যিকারের বয়স কত? ১৯৯৬ সালে নাইরোবিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেটে বিশ্বরেকর্ড গড়া দ্রুততম সেঞ্চুরি করে পাদপ্রদীপের আলোতে আসার পর থেকেই তাঁর আসল বয়স নিয়ে রহস্য ছিল। প্রায় ২৩ বছর পর আত্মজীবনীতে সেই রহস্যের সমাধান দিয়েছেন নিজেই। এর পাশাপাশি পাকিস্তানের অধিনায়ক থাকাকালীন শেষের দিকে দলের কোচ হিসেবে পাওয়া কিংবদন্তি পেসার ওয়াকার ইউনুসকে সমালোচনায় বিদ্ধ করেছেন এই তারকা ক্রিকেটার। কোচ হিসেবে পাওয়া আরেক কিংবদন্তি জাভেদ মিয়াঁদাদকে নিয়েও কিছু কটুকথা তুএ ধরেছেন নিজের বইয়ে।
শহিদ আফ্রিদির পাসপোর্ট আর সব ধরনের প্রোফাইলে জন্মতারিখ হিসেবে ১ মার্চ, ১৯৮০ সাল উল্লেখ করা আছে। কিন্তু আত্মজীবনীতেই আফ্রিদি জানিয়েছেন, তার সত্যিকার জন্মসাল হচ্ছে ১৯৭৫ সাল। এর মানে হচ্ছে ক্রিকেটের অফিশিয়াল সব রেকর্ডে আফ্রিদির বয়স পাঁচ বছর কম দেখানো হয়েছে। ১৯৯৬ সালে সেই বিশ্বরেকর্ডের সময় আফ্রিদির বয়স ১৬ বলা হলেও নিজের জীবনীতে আফ্রিদি লিখেছেন, ‘ওই রেকর্ডের সময় আমার বয়স ছিল ১৯। তবে সবাই যে বলে ১৬, সেটা সত্য নয়। আমি জন্মগ্রহণ করেছি ১৯৭৫ সালে। কর্তৃপক্ষ আমার বয়সটাকে ভুলভাবে উল্লেখ করেছিল।’
১৯৯৯ সালে ভারত সফরে যাওয়া পাকিস্তান দলে ডাক পান আফ্রিদি। ওই সময় দলের কোচ ছিলেন কিংবদন্তি ক্রিকেটার জাভেদ মিয়াঁদাদ। সাবেক এই কোচ উইকেটে দায়িত্ব নিয়ে ইনিংস ধরে খেলতে অনভ্যস্ত এই ব্যাটসম্যানকে দলে চাননি, জানান আফ্রিদি। সেই সিরিজের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘মিয়াঁদাদ আমাকে দল থেকে বের করে দিতে ব্যাপক চেষ্টা করেন। এমনকি ভারতের বিপক্ষে টেস্টের আগে দলের অনুশীলনেও আমাকে অংশ নিতে দেননি তিনি।’
তবে জবাবটা ব্যাট হাতে মাঠেই দেন আফ্রিদি। চেন্নাই টেস্টে খেলেন ১৪৪ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস। মিয়াঁদাদের সমালোচনা করে নিজের আত্মজীবনীতে সেই ইনিংসের উল্লেখ করে আফ্রিদি লিখেন, ‘সেই ইনিংসটা খেলার পর পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে মিয়াঁদাদ তার সুনাম করতে আমাকে অনুরোধ করেন। শুধু পুরস্কার বিতরণী মঞ্চেই নয়, সাংবাদিকদের কাছে সাক্ষাৎকারেও আমাকে পরিণত হতে সে সহায়তা করেছে এমন কিছু বলার অনুরোধ করেন।’
পাকিস্তানের হয়ে ক্যারিয়ারের শেষদিকে কিংবদন্তি পেসার ওয়াকার ইউনুসকে কোচ হিসেবে পান আফ্রিদি। তবে দুজনের মধ্যে সম্পর্কটা মোটেও ভালো ছিল না। ওয়াকারের তীব্র সমালোচনার করে আফ্রিদি নিজের আত্মজীবনীতে লিখেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে অতীত ছাড়তে পারেনি। ওয়াকার ও আমার কিছু ঘটনা আছে, আর সেটা ওয়াসিম আকরামের সঙ্গে অধিনায়কত্ব নিয়ে যখন ঝামেলা ছিল, তখন থেকেই। সে ছিল সাধারণ মাপের অধিনায়ক, কিন্তু খুব ভয়াবহ কোচ। সব সময় সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চাইত। অধিনায়ককে সব সময় বলার চেষ্টা করত কী করতে হবে, কী করা উচিত। বিরোধটা তাই অবশ্যম্ভাবী ছিল এবং এটাই হতো।’
উল্লেখ্য, কোচ থাকাকালীন ২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের সময় পাকিস্তানের তদানীন্তন অধিনায়ক আফ্রিদিকে নিয়ে ওয়াকার বলেন, ‘অধিনায়ক হিসেবে সে ভীষণ অপরিপক্ব। তাঁর মধ্যে শৃঙ্খলা নেই এবং পরিকল্পনারও অভাব আছে।’আত্মজীবনীতে ওয়াকারকে ধুয়ে দিয়ে সেই সমালোচনার জবাব দিলেন আফ্রিদি। গত সপ্তাহে পাকিস্তান ও ভারতে একযোগে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর বহুল আলোচিত এই আত্মজীবনী।