দুয়ারে বিশ্বকাপ, ছুটিতে বাংলাদেশের কোচরা
আর মাত্র ৫৫ দিন, এরপরই ইংল্যান্ডে পর্দা উঠবে ক্রিকেট বিশ্বকাপের। শেষ মুহূর্তে নিজেদের ঝালিয়ে নিতে ব্যস্ত সময় পার করছে দলগুলো। এরই মধ্যে দল ঘোষণা করেছে নিউজিল্যান্ড। বিশ্বসেরা প্রতিযোগিতার জন্য কতটুকু প্রস্তুত বাংলাদেশ? হতাশার সফর কাটিয়ে কয়দিন আগেই নিউজিল্যান্ড থেকে ফিরেছেন তামিম-মুশফিকরা। তবে চোটে জর্জরিত বাংলাদেশ শিবির। দেশে ফিরে কয়েকজন প্রিমিয়ার খেলছেন। বাকিরা নিজেদের ভুলত্রুটি নিয়ে নিজেদের মতো অনুশীলন করছেন। তাঁদের ভুল ধরা বা পরামর্শ দেওয়ার মতো কেউ নেই। কারণ, বিশ্বকাপ দোরগোড়ায় হলেও বর্তমানে তামিম-মিরাজদের পাশে নেই বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোনো বিদেশি কোচ।
হেড কোচ স্টিভ রোডস, পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ, ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জি, ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক, স্পিন কোচ সুনীল যোশিসহ বিদেশি পাঁচ কোচের সবাই ছুটি কাটাচ্ছেন! নিউজিল্যান্ড থেকেই যে যাঁর মতো ছুটিতে গেছেন। এখনো ফিরে আসেননি বাংলাদেশে।
চলতি মাসে মাঝামাঝিতে ঘোষণা করা হবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াড। আগামী ২০ এপ্রিল থেকে শুরু হবে ক্যাম্প। অর্থাৎ এরপর শুধুই ক্ষণগণনা। মাঝে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে অংশ নিতে হবে মাশরাফিদের। সবকিছু মিলিয়ে কয়েক দিন পর থেকে তামিম-মুশফিকদের দম ফেলার সময় থাকবে না। বলা চলে বিশ্বকাপের আগে নিজেদের ভুলত্রুটি নিয়ে কাজ করার এটাই টাইগারদের মোক্ষম সময়। অথচ তা আর ঠিকঠাক হচ্ছে কই? নিজেদের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কোনো কোচদের পাচ্ছেন না শিষ্যরা।
বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক কোচ সরোয়ার ইমরান। পাশাপাশি প্রাধান্য দিচ্ছেন পেশাদারিত্বের দিকটাও। তার মতে, পেশাদারিত্বের জায়গায় ছুটি পাওনা থাকলেও কোচদের এই সময়ে অন্তত শিষ্যদের পাশে থাকার দরকার ছিল। একসঙ্গে সবাই ছুটিতে থাকার বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে দেখছেন না টাইগারদের সাবেক কোচ।
এনটিভি অনলাইনকে সরোয়ার ইমরান বলেন, ‘বিষয়টি আসলেই অনেক দুঃখজনক। যেহেতু আমাদের সামনে এত বড় একটা ইভেন্ট। সে ক্ষেত্রে একসঙ্গে সবাই ছুটিতে যাওয়ার ব্যাপারটা বেমানান। আমি জানি না এটা কেন হয়েছে, যদি হয়েই থাকে তাহলে ঠিক হয়নি। তা ছাড়া নিউজিল্যান্ডে আমরা একটা হতাশার সফর কাটিয়ে এসেছি। মানসিক দিক দিয়েও ভেঙে পড়েছে ছেলেরা। সে ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডে যাওয়ার আগে ছেলেদের ভুলত্রুটিগুলো নিয়ে আরও বেশি কাজ করা উচিত।’
নিউজিল্যান্ড থেকে চোট নিয়ে ফিরিছেন মাহমুদউল্লাহ, মুশফিক, মিথুনরা। তার আগেই চোট সমস্যায় মাঠের বাইরে তাসকিন আহমেদ এবং সাকিব আল হাসান। রিহ্যাবে আছেন কয়েকজন। এই পরিস্থিতিতে কোচদের ক্রিকেটারদের বেশি সময় দেওয় উচিত বলে মনে করছেন সরোয়ার ইমরান। তাঁর কথায়, ‘আমাদের দলে অনেকের ইনজুরি সমস্যা আছে। অনেকে রিহ্যাবে আছে। এ মুহূর্তে তাদের পাশে কোচদের থাকা উচিত ছিল। তাহলে শেষ মুহূর্তে কার কোথায় এখনো ঘাটতি আছে, সেটা নজরে আসত। ছেলেরা সেই ঘাটতি নিয়ে কাজ করতে পারত। কেউ কেউ নিজেদের মতো করে অনুশীলন করছে, এতে তারা নিজেদের ভুলত্রুটিগুলো ধরতে পারবে না। ’
বাংলাদেশ দলের সাবেক এই কোচকে ভাবাচ্ছে টাইগারদের বোলিং পারফরম্যান্স। ইংল্যান্ডের মাটিতে বিশ্বকাপ, তাদের কন্ডিশনে বোলারদের ভালো করার শঙ্কার মেঘও তার মনে। তিনি বলেন, ‘ইংল্যান্ডের মাটিতে যেহেতু বিশ্বকাপ সে ক্ষেত্রে আমাদের বোলারদের নিয়ে খুব চিন্তিত আমি। তারা ওদের উইকেটে কেমন করবে, সেটাও একটা শঙ্কা। ব্যাটসম্যানদের নিয়ে বলতে পারছি না। কারণ পিচ কেমন হবে বা কে কত নম্বরে খেলবে, সেদিক দিয়ে তাদের নিয়ে বলা কঠিন। কিন্তু বোলারদের পারফরম্যান্স ভাবাচ্ছে। বিশেষ করে স্পিন বোলারদের নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। ’
এ ক্ষেত্রে বিশ্বকাপের আগে বোলারদের নিয়ে আলাদা কাজ করা বেশ দরকার বলে জানালেন সরোয়ার। এ প্রসঙ্গে তাঁর ভাষ্য, ‘ইংল্যান্ডে যাবার আগে তাদের বোলিং নিয়ে আরো কাজ করা দরকার। সেজন্য অন্তত স্পিন কোচকে ছেলেদের সাহায্য করা উচিত। এই মুহূর্তে কোচদের সবার ছুটি মানে তো বিশ্বকাপের জন্য সঠিক প্রস্তুতির পথে নেই আমরা।’